ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:৫০ পিএম, ৭ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৪৬ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
কেউই অপরিহার্য নয়। এই বার্তা দিয়ে পদত্যাগ করেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিন বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় থাকার পর কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ডাউনিং স্ট্রিট থেকে এই ঘোষণা দিয়ে তিনি গত নির্বাচনে যে লাখ লাখ মানুষ কনজার্ভেটিভ পার্টিকে ভোট দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজ।
এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতার জন্য লড়াই করার কারণ ব্যাখ্যা করেন জনসন। বলেন, আমি লড়াই করেছি আমার কাজের জন্য, আমার দায়িত্বের জন্য এবং আপনাদের প্রতি আমার বাধ্যবাধকতার জন্য। তিনি আরও বলেন, তার মন্ত্রিপরিষদকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, এখন প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করা হবে একটি উদ্ভট ব্যাপার। কিন্তু ‘আমার সেই যুক্তিগুলোতে সফল হতে না পারার জন্য অনুশোচনা করছি। এটা সফল না দেখতে পেয়ে বেদনা হচ্ছে’। তিনি আরও বলেন, এখন নতুন নেতা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে টাইমটেবিল দেয়া হবে।
বৃটিশদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে সেরা কাজটি ত্যাগ করতে আমি কতটা বেদনাহত, তা আপনাদের জানাতে চাই। এর আগে মন্ত্রী এবং সহযোগী মিলে কনজার্ভেটিভ পার্টির কমপক্ষে ৫০ জনের পদত্যাগের ফলে বরিস জনসনের ওপর পদত্যাগের তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়।
নিজের মন্ত্রিপরিষদে এই গণবিদ্রোহ শুরু হয় গত মঙ্গলবার। বিশেষ করে ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে ২০১৯ সালে ক্রিস পিনচারকে নিয়োগ দেয়া নিয়ে তিনি সর্বশেষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
সম্প্রতি একটি প্রাইভেট ক্লাবে গিয়ে সেখানে অতিমাত্রায় মদ পানের কথা স্বীকার করেন ক্রিস পিনচার। ওই সময় তিনি দু’জন পুরুষকে যৌন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এরপরই বিতর্ক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে বলা হয়, তিনি চিফ হুইপ নিয়োগ দেয়ার আগে পিনচারের এসব আচরণ সম্পর্কে জানতেন না।
কিন্তু মঙ্গলবার ডাউনিং স্ট্রিট থেকে স্বীকার করা হয়, প্রধানমন্ত্রী জনসন বিষয়টি জানতেন। তা সত্ত্বেও তাকে ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ দেন। এর ফলে বরিস জনসনের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন অনেক মন্ত্রী ও দলীয় সদস্য। শুরু হয় পদত্যাগ। প্রথমেই মঙ্গলবার রাতে পদত্যাগ করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ও চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। এর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এমপিদের পদত্যাগপত্রের স্তূপ হতে থাকে। তাতে বরিস জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়।
এ অবস্থায় ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্রাডির সঙ্গে এক বৈঠকের পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন জনসন। তার কার্যালয়ের এক সূত্রের বরাত দিয়ে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্রাডির সঙ্গে বৈঠকে তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে সম্মত হন। ওদিকে বিবিসি জানিয়েছে, কনজারভেটিভ দলের প্রধান হিসেবেও পদত্যাগ করবেন জনসন।
তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন। আগামী অক্টোবর মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হবে। তার পদত্যাগের খবর শুনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টর্মার। তিনি একে সুসংবাদ বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, জনসন সবসময়ই বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অযোগ্য ছিলেন। তিনি মিথ্যা বলেছেন, স্ক্যান্ডাল ঘটিয়েছেন এবং প্রতারণা করেছেন। যারা তাকে সাহায্য করেছেন তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।
স্টর্মার আরও বলেন, তারা ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে যে ক্ষতি করেছেন তা অনেক গভীর। ১২ বছর ধরে অর্থনীতি থমকে আছে। ১২ বছর ধরে সরকারি সেবা কমছে। ১২ বছর ধরে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি চলছে। কিন্তু যথেষ্ট হয়েছে। কনজারভেটিভ দলের মধ্যে পরিবর্তন দিয়ে কিছু হবে না। আমাদের প্রয়োজন সরকার পরিবর্তন। বৃটেনকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।