পথ খুঁজে পাচ্ছে না শ্রীলঙ্কা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:৫২ পিএম, ৬ জুলাই,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৫০ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি সংকট কাটেনি। এখনো ফিলিং স্টেশনগুলোতে অসংখ্য গাড়ির লাইন। তেল পাচ্ছে না। লাইনে থাকতে থাকতে বোরেলাতে টিকল রোড এলাকায় ৬০ বছর বয়সী আরও এক ব্যক্তি মারা গেছেন। পুলিশ বলেছে, মৃত ব্যক্তি আইডিএইচ এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে তেলের জন্য লাইনে অপেক্ষা করতে করতে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হলো। কিন্তু যারা এখনো লাইনে আছেন, কবে কখন তারা তেল পাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। শুধু জ্বালানি নয়। খাদ্য ও ওষুধের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে স্বীকার করেছেন সংকটের কোনো সমাধান হয়নি। আইএমএফের হিসাবে শ্রীলঙ্কার বর্তমান জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা হার ৬ থেকে নেগেটিভ ৭-এর মধ্যে। বছরের শেষ নাগাদ মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে শতকরা ৬০ ভাগ।
রণিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন, রিজার্ভের বড় অংশ ফুরিয়ে গেছে। জ্বালানি সংকটের কথা জানিয়ে রেলশ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন। এ জন্য গতকাল পূর্বনির্ধারিত ১৪০টি ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মিরর। ওদিকে, এমন অবস্থায় শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে বের করে আনার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে। এ জন্য কমপক্ষে ১৮ মাস বা দেড় বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত সপ্তাহে কাতারভিত্তিক আল-জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। রাজধানী কলম্বোর সরকারি বাসভবনে বসে রণিলের দেয়া সাক্ষাৎকারটি মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। একই দিন তিনি পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফের সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনা সফল হয়েছে। তবে তাদের সহায়তা নির্ভর করছে ঋণ পুনর্গঠন কর্মসূচির ওপর। পার্লামেন্টে দেয়া বিশেষ বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এ বছর আগস্টে আইএমএফের কাছে ঋণ পুনর্গঠন কর্মসূচি হস্তান্তর করবে শ্রীলঙ্কা।
৭৩ বছর বয়স্ক রণিল আল জাজিরাকে জানান, তিনি এক অস্বাভাবিক সময়ে শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিয়েছেন। গত মে মাসে ৬ষ্ঠ বারের মতো তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। রণিল বলেন, আমরা প্রায় দুইদিন সরকারবিহীন অবস্থায় ছিলাম। সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। সে সময় শ্রীলঙ্কাজুড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল গণ-আন্দোলন। পরিস্থিতি সেই তুলনায় কিছুটা শান্ত হলেও সংকটের কোনো সমাধান হয়নি। দেশটিতে কয়েক মাস ধরেই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।
আল-জাজিরাকে রণিল বলেন, আমি দেখলাম দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ, কিন্তু এটা তো আমারই দেশ। তাই ক্ষমতা গ্রহণ করলে সফল হবো কি হবো না তা ভাবার সময় ছিল না। আমি ক্ষমতা গ্রহণ করলাম এবং এখন আমি দেশকে সফল করতে কাজ করে যাবো। আমি এখন আত্মবিশ্বাসী যে, দেশের অর্থনীতির গতিপথ বদলে দিতে পারবো। তিনি আরও যুক্ত করেন, আমরা ভারতীয় ক্রেডিট লাইন এবং রেমিট্যান্স থেকে পাওয়া ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করে তেল কিনছি। যদিও তা সামান্য কিন্তু তারপরেও কখনো এক বিলিয়ন কিংবা অর্ধেক বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি আমদানি হচ্ছে। রিজার্ভের বাকি পুরোটাই ব্যয় হয়ে গেছে। জ্বালানি সংকট নিয়ে কিছুটা আশার কথাও শোনান শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য এটি ছিল বড় ধাক্কা। মানুষকে অনেক ভুগতে হচ্ছে এ জন্য। তবে আমরা এখন পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিশেষ করে গ্যাসের ক্ষেত্রে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ডিজেলের চাহিদা পূরণেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে পেট্রোল নিয়ে ইস্যু রয়েই গেছে। সমাধান করতে সময় লাগবে। গ্যাস নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বলে জানান রণিল বিক্রমাসিংহে। এরফলে কমপক্ষে ৪ মাস শ্রীলঙ্কাকে গ্যাস নিয়ে ভাবতে হবে না। এ ছাড়া আইএমএফের সঙ্গেও সমঝোতায় পৌঁছেছে দেশটি। সংস্থাটি থেকে সাহায্য নিয়ে অর্থনীতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে দ্বীপরাষ্ট্রটি। পার্লামেন্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রণিল।
তিনি বলেছেন, আইএমএফের সঙ্গে এর আগেও অনেকবার কথা হয়েছে আমাদের। তবে আগের সব বৈঠকের চেয়ে এবারের প্রেক্ষাপট ছিল একেবারেই আলাদা। অতীতে তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে। এমন প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষ এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ)-এর ওপর চুক্তিতে পৌঁছার জন্য কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমরা একটি ঋণখেলাপি দেশ হিসেবে তাদের সঙ্গে সমঝোতায় অংশগ্রহণ করছি। তাই আগের চেয়ে এখন আমাদেরকে অধিক জটিল ও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
পার্লামেন্টে তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে সঙ্কুচিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার নেগেটিভ চার থেকে নেগেটিভ পাঁচের মধ্যে। তবে আইএমএফের হিসাবে এই প্রবৃদ্ধির হার নেগেটিভ ৬ থেকে ৭-এর মধ্যে। এটা একটা অতি সিরিয়াস পরিস্থিতি। যদি আমরা রোডম্যাপ অনুযায়ী সামনে এগুতে পারি, তাহলে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ অর্থনীতিতে জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার নেগেটিভ ১-এ নিয়ে আসতে পারবো। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারকে একটি টেকসই পর্যায়ে উন্নীত করা। ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা দেশকে একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এখন পর্যন্ত আমাদেরকে যে ঋণ শোধ করতে হবে, সে সম্পর্কে একটি ধারণা দিতে চাই। এ বছর জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে ৩৪০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে শোধ করতে হবে ৫৮০ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে শোধ করতে হবে ৪৯০ কোটি ডলার। ২০২৫ সালে শোধ করতে হবে ৬২০ কোটি ডলার। ২০২৬ সালে শোধ করতে হবে ৪০০ কোটি ডলার। ২০২৭ সালে শোধ করতে হবে ৪৩০ কোটি ডলার। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ সরকারের কাঁধে ঋণের মোট বোঝা ছিল ১৭.৫ ট্রিলিয়ন রুপি। কিন্তু এ বছর মার্চের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৬ ট্রিলিয়ন রুপি।
তিনি আরও জানান, বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এ বছরের শেষ নাগাদ দেশে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে শতকরা ৬০ ভাগ। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং দেশে রুপির মূল্য পড়ে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটবে।