রুশ আগ্রাসনের মধ্যেই ইইউর প্রার্থীর মর্যাদা পেল ইউক্রেন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:১৩ পিএম, ২৪ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৫৬ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য প্রার্থীর মর্যাদা পেয়েছে ইউক্রেন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির মতো এদিন একই মর্যাদা পেয়েছে মলদোভাও। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল এই ঘোষণা দেন।
এদিকে ইইউর সদস্যপ্রার্থীর মর্যাদা পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ও মলদোভাকে প্রার্থীর মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন চার্লস মিশেল। তিনি বলেন, ‘ইইউয়ের সদস্য হওয়ার বিষয়ে আপনাদের জন্য আজ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখ- আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রক্রিয়া শুরু করে ইউক্রেন। মূলত দেশটিতে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর কয়েকদিন পরই সংস্থাটিতে যোগ দিতে আবেদন করে কিয়েভ। আর এরপর থেকে এই প্রক্রিয়াটি রেকর্ড গতিতে এগিয়ে যায়। অবশেষে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য প্রার্থীর মর্যাদা লাভ করল ইউক্রেন।
এদিকে ইইউয়ের সদস্যপ্রার্থীর মর্যাদা পাওয়ার বিষয়ে বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘এটি ইউক্রেন-ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের একটি অনন্য এবং ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ইইউর মধ্যে।’ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়র ও সাবেক বক্সার ভিটালি ক্লিটসকো রুশ আক্রমণ প্রতিরোধকারী নাগরিকদের প্রতি আবেগপূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। টেলিগ্রামে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা এই সুযোগের জন্য খুব উচ্চ মূল্য পরিশোধ করেছি। হ্যাঁ, ইউরোপীয় পরিবারে যাওয়ার পথে আমাদের এখনও অনেক কিছু করার আছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে (ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে) ইউক্রেন প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে, সব শর্ত পূরণ করবে এবং প্রয়োজনীয় আইন পাস করবে। কারণ এটি ছাড়া আমাদের রাষ্ট্রের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’
এর আগে গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে কয়েক দশক সময় লাগবে ইউক্রেনের। একইসঙ্গে সেসময় কিয়েভকে তিনি একটি ‘সমান্তরাল ইউরোপীয় সম্প্রদায়ে’ যোগ দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন।
স্ট্রাসবার্গের ইইউর পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সময় গত ৯ মে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমরা সকলেই ভালোভাবে জানি যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইউক্রেনের) যোগদানের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বাস্তবিকই বেশ কয়েক বছর, সম্ভবত কয়েক দশক পর্যন্ত সময় লাগবে। যতক্ষণ না আমরা ইইউতে যোগদানের মান বা শর্ত কমানোর এবং আমাদের ইউরোপের ঐক্য পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত না নিচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত এটিই সত্য।’
বিবিসি বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হতে হলে কোনো দেশকে প্রথমে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য প্রার্থী হতে হয়। কিন্তু এরপরও আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংস্থায় যোগ দিতে বহু বছর লেগে যেতে পারে এবং সদস্য প্রার্থী হলেই যে একপর্যায়ে গিয়ে সদস্যের স্বীকৃতি মিলবে এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই।