জ্বালানির অভাব : ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পাকিস্তান
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:২৭ পিএম, ১৫ জুন,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য মস্কোকে শাস্তি দিতে রাশিয়ার জ্বালানি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ। সেইমত প্রচার চালানো হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এদিকে এই যুদ্ধের মাসুল দিতে হচ্ছে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত পাকিস্তানকে। দেশটিতে ক্রমশই প্রকট হয়ে উঠছে বিদ্যুৎ সংকট। এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের নতুন নেতৃত্বের স্থিতিশীলতাকে রীতিমত হুমকির মুখে ফেলেছে। এক দশক আগে, বিশ্বের পঞ্চম-সবচেয়ে জনবহুল দেশটি বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং ইতালি ও কাতারের সরবরাহকারীদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এখন এই সরবরাহকারীদের মধ্যে কেউ কেউ চুক্তি ভঙ্গ করে আরো লাভজনক ইউরোপীয় বাজারে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করতে শুরু করেছে। পাকিস্তান এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার অনেক চেষ্টা করেছিল।
গত মাসে ঈদের ছুটিতে ব্ল্যাকআউট এড়াতে, সরকার স্পট মার্কেট থেকে একক এলএনজি চালান সংগ্রহের জন্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদান করেছে, যা নগদ সংকটে থাকা দেশটির জন্য একটি রেকর্ড। জুলাইয়ে শেষ হওয়া অর্থবছরে, এলএনজির জন্য দেশের খরচ ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। তা সত্ত্বেও, জ্বালানি এবং বিদ্যুত ভর্তুকি হ্রাস করতে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির হার ১৩.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। যার ধাক্কায় খাদ্য সংকটও শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে জ্বালানি সংকট এখনই মেটার নয়। এখন পাকিস্তানের কিছু অংশ ১২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে পরিকল্পিত ব্ল্যাকআউটের সম্মুখীন হচ্ছে, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহারও সীমিত করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয় শাহবাজ শরিফ সরকার। বহু অফিসেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান রাত দশটার আগেই শেষ করে ফেলার নির্দেশ জারি হয়েছে। এছাড়াও রাস্তার আলো নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিভিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার কথা। সেখানেও এমনই তীব্র বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছিল। এদিকে নাগরিকদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে পাক প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, আগামী দিনে ব্ল্যাক আউটের সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে।
এলএনজির উপর পাকিস্তানের নির্ভরতা এবং এর সরবরাহকারীদের ডিফল্ট করার প্রবণতা দেশের জ্বালানি সংকটকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আর পাকিস্তান একা নয়। বিশ্বের উদীয়মান দেশগুলো তাদের বাজেটের সীমাবদ্ধতার মধ্যে তাদের নাগরিকদের চাহিদা মেটাতে লড়াই করছে। অনেকেই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য ঝুঁকছে। যেমন আর্থিক সংকট এবং ব্যাপক তেলের সংকটের মুখে শ্রীলঙ্কা জ্বালানি সংগ্রহের জন্য রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে। পাকিস্তানও রাশিয়ান এলএনজি সরবরাহকারীদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অনুসন্ধান করছে। ভারত ইতিমধ্যেই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার পরিমান বাড়িয়েছে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম থেকে রক্ষা পেতে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিদেশ থেকে জ্বালানি কেনার নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সহ অন্যান্য নগদ সংকটে থাকা আমদানিকারকদের মত পাকিস্তানেরও দুর্দশা অব্যাহত। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্রিড চালু রাখতে এবং শিল্প মজুত রাখার জন্য স্পট মার্কেট থেকে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলএনজি চালান সংগ্রহ করেছে, যেখানে দাম বৃদ্ধির কারণে মিয়ানমার গত বছর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ইউরোপের গতিবিধি ভারত এবং ঘানার মতো অন্যান্য দেশগুলোকে অতি-ঠান্ডা জ্বালানির উপর নির্ভরতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে প্ররোচিত করতে পারে। সাম্প্রতিক একটি নোটে, শিল্প পরামর্শক এফজিই-এর চেয়ারম্যান ফেরিদুন ফেশারকি বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্য, অর্থনৈতিক ঘাটতি এবং আর্থিক দুর্দশা তৈরি করার জন্য ইউরোপীয় শক্তি নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। সূত্র : এনডিটিভি