ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার আবেদন সুইডেন-ফিনল্যান্ডের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৪৪ পিএম, ১৮ মে,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪১ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড।
আজ বুধবার (১৮ মে) জোটের সদস্যপদের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন দেশ দুটির নেতারা।
এ আবেদনকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন ন্যাটোর মহাসচিব ইয়ান স্টলটেনবার্গ। সেই সঙ্গে দেশ দুটিকে যত দ্রুত সম্ভব সদস্য পদের স্বীকৃতি দিতে পদক্ষেপ নেবেন তিনি। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও এপির।
এর আগে গত সোমবার (১৬ মে) ন্যাটোয় যোগদানের সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দেয় সুইডিশ সংসদ। আর ফিনল্যান্ডের সংসদে এ বিষয়ক একটি প্রস্তাব পাস করে মঙ্গলবার (১৭ মে)। বুধবার ন্যাটোয় নিযুক্ত ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ দেশের আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্র জোটের মহাসচিব স্টলটেনবার্গের হাতে তুলে দেন।
এ সময় ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের আবেদনকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। আপনারা আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার। তিনি আরও বলেন, ন্যাটোর বিস্তারের গুরুত্বের ব্যাপারে আমাদের সব মিত্র দেশই একমত। আমরা সবাই এ ব্যাপারে সম্মত যে আমাদের একসঙ্গে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে।
সুইডেন-ফিনল্যান্ডকে দ্রুত সদস্যপদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ন্যাটোপ্রধান। তবে এজন্য জোটের ৩০ সদস্য দেশেরই অনুমোদন লাগবে। কিন্তু অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুরস্ক সুইডেন-ফিনল্যান্ডের সদস্য করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে জোটের প্রধান সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী মাগডালিনা অ্যান্ডারসান।
আল-জাজিরা জানায়, দেশ দুটির ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবারই (১৯ মে) ফিনিশ ও সুইডিশ নেতাদের সঙ্গে বসবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার হোয়াইট হাউস মুখপাত্র কারিন জেন পিয়েরে বলেন, বৈঠকে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালিনা ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর সঙ্গে ইউরোপীয় নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক বিষয়ে তাদের অংশীদারিত্বের বিষয়ে আলোচনা করবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
এদিকে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে রাশিয়া। প্রতিবেশী এ দুই দেশ ন্যাটোয় যোগ দিলে নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করে মস্কো। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোয় যোগ দিলে রাশিয়ার জন্য তা হবে পরাজয়। নরডিক দেশ দুটি পশ্চিমা এই সামরিক জোটে যুক্ত হলে ন্যাটো সেনারা হাজির হবে রুশ-ফিনল্যান্ড সীমান্তে।
হুমকি মোকাবিলায় এরই মধ্যে সীমান্তে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো শুরু করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সোমবার (১৬ মে) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী কয়েকটি সামরিক যান ফিনল্যান্ডের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত রুশ শহর ভায়বর্গের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
রুশ বিপ্লবের পর ১৯১৭ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেওয়া ফিনল্যান্ড গ্রহণ করে নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–কোনো পক্ষে না গিয়ে একই পথ অনুসরণ করে সুইডেনও।
তবে ফিনল্যান্ডের জন্য বিষয়টি কঠিন ছিল। কারণ কর্তৃত্ববাদী পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির বিশাল সীমানা রয়েছে। ফলে শান্তি বজায় রাখার জন্য ‘ফিনল্যান্ডাইজেশন’ নামে একটি নীতি গ্রহণ করেন ফিনিশ নেতারা, যেখানে তারা সময়ে সময়ে মেনে নিতেন সোভিয়েত নেতাদের বিভিন্ন দাবি।
কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ভারসাম্যমূলক নীতি থেকে সরে আসে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। তারা ১৯৯৫ সালে একসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেয় এবং পশ্চিমের সঙ্গে মিল রেখে ধীরে ধীরে তাদের প্রতিরক্ষা নীতি সাজাতে শুরু করে। যদিও এ সময়ের মধ্যে সরাসরি ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না দেশ দুটির।
ন্যাটোয় যোগ না দেওয়ার জন্য ফিনল্যান্ড ও সুইডেন উভয় দেশেরই ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে এর মধ্যে ফিনল্যান্ডের সঙ্গে বিস্তৃত সীমানা থাকায় এ দেশটিকে নিয়েই চিন্তা বেশি রাশিয়ার।