পাকিস্তানে ডেপুটি স্পিকারের রুলিং বাতিল, জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট গত বৃহস্পতিবার এক রায়ে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির ৩ এপ্রিলের রুলিংকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করেছেন এবং ভেঙে দেয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেছেন। শনিবার ইমরান খানের ওপর আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পরিষদ আবার ডাকতে হবে। নির্দেশে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত হতে পারে না। আদেশে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব সফল হলে পার্লামেন্ট নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবে। গত ৩ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেন। এরপর ইমরানের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টও ভেঙে দেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি সুয়োমোটো হিসেবে বিষয়টি গ্রহণ করেন। সুরি অনাস্থা প্রস্তাবটি বাতিল করার সময় বলেছিলেন, এটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। বিরোধী জোট সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।

পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা (কায়েদে আজম গ্রুপ) মুনিস এলাহি বলেছেন, ইমরান খানের জনপ্রিয়তার ভয়ে নওয়াজ শরীফের দল নির্বাচন চায় না। গত বৃহস্পতিবার এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে জিও নিউজ। পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা (কায়েদে আজম গ্রুপ) মুনিস এলাহির দাবি, ইমরান খানের জনপ্রিয়তার ভয়ে নওয়াজ শরীফের দল নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো অবস্থায় নেই নওয়াজ শরীফ। কারণ জনগণ এখন ইমরান খানের দল পিটিআইকে সমর্থন করে।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের সকল বিধাসভা (প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট) ভেঙে দিয়ে সাধারণ নির্বাচন দেয়া হলে সকলে শরীফ ভাইদের (নওয়াজ শরীফ ও শাহবাজ শরীফ) অবস্থা বা জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বুঝতে পারবে। ইমরান খানের দল পিটিআইকে সমর্থন করার বিষয়ে মুনিস এলাহি বলেন, ‘পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতা পারভেজ খট্টক, আসাদ উমর ও শাহ মেহমুদ আমাদের বিরোধী দলে না যাওয়ার বিষয়ে বলেছেন। এ কারণে আমাদের রাজনৈতিক দল ও পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা পিটিআইকে সমর্থন করবে। মূলত আমরা পাকিস্তানের জন্যই ইমরান খানের দল পিটিআইকে সমর্থন করছি।’

শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব, অনাস্থা ভোট নিয়ে রায়ের পর বার্তা ইমরানের : সুপ্রিম কোর্ট তাকে আবার অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আদালতের ওই রায়ের ঘন্টা কয়েকের মধ্যে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক টুইট বার্তায় ইমরান লেখেন, ‘শুক্রবার ক্যাবিনেটের বৈঠক ডেকেছি। সংসদীয় দলের বৈঠকও ডেকেছি। সন্ধ্যায় আমি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেব। সব সময়ই দেশবাসীর পাশে আছি এবং পাকিস্তানের হয়ে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’

অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তকে গত বৃহস্পতিবার অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন পাক সুপ্রিম কোর্ট। টানা চার দিনের শুনানির পর প্রধান বিচারপতি উমর আটা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে গঠিত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ওই বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে ইমরানকে। গত রবিবার পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী জোটের তরফে পেশ হওয়া অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটির কথা থাকলেও ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি তা খারিজ করে দেন।

তিনি জানান, বিদেশি শক্তির প্ররোচনায় আনা এই অনাস্থা প্রস্তাব সংবিধান-বিরোধী এবং তা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই পাকিস্তান সংবিধানের ৫ নম্বর ধারা মেনে এ নিয়ে কোনো ভোট করাতে পারবেন না তিনি। এর পরেই ইমরান খানের সুপারিশে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রবিবার রাতেই পাক শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেন বিরোধীরা। সোমবার থেকে তারই শুনানি শুরু হয়েছিল। শুক্রবার রাতে পাঁচ বিচারপতিই একমত হয়ে এই রায় ঘোষণা করেন।