গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা নয়, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের আহ্বান
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৩৮ পিএম, ১৫ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৪০ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে সক্রিয়তা-সহযোগিতার কারণে গুমের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড দ্রুত বন্ধে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এই আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার (১৪ মার্চ) জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের প্রতি এ আহ্বান জানান।
এ-সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ হুমকি, চাপ প্রয়োগ ও হয়রানি শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যায়।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভুক্তভোগী অন্তত ১০টি পরিবারের বাড়িতে গভীর রাতে অভিযান চালানো হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিযানকালে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও ভয় দেখানো হয়। সাদা কাগজে বা আগে থেকেই লিখে রাখা বিবরণে তাঁদের সই করতে বাধ্য করা হয়। আগে থেকে লিখে রাখা বিবরণে উল্লেখ করা থাকে যে পরিবারের সদস্য গুমের শিকার হননি বরং তাঁরা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন। এটি অগ্রহণযোগ্য।
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগের সঙ্গে পরিবার, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের ওপর ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল অবস্থা লক্ষ করেছেন। সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বারবার নাগরিক সমাজের কিছু সংগঠনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করছেন, যা নাগরিক সমাজের মূল কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, আত্মীয়স্বজন ও মানবাধিকার কর্মীরা যাতে তাঁদের বৈধ কাজকর্ম নিরাপদ ও উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশে কোনো হুমকি, চাপ বা প্রতিহিংসার ভীতি ছাড়া করে যেতে পারেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, প্রকাশিত প্রতিশোধমূলক কাজ অন্যদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে পারে, যা মানবাধিকারসহ জনস্বার্থ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে জাতিসংঘ বা তার প্রতিনিধি ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করতে তাদের বিরত রাখতে পারে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে বেশির ভাগ গুমের ঘটনার সঙ্গে র্যাবের জড়িত থাকার বিষয়ে খবর বের হয়েছে, যা জাতিসংঘের গুম বা অনৈচ্ছিক অন্তর্ধানবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এসব গুরুতর অভিযোগের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ-বিশদ অনুসন্ধানসহ স্বাধীন, নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য দায়বদ্ধ। একই সঙ্গে র্যাবসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাকেও তদন্ত ও ফৌজদারি দায় থেকে রেহাই দেওয়া উচিত নয়।
বিশেষজ্ঞরা ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও পরিবারকে সত্য, ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটার নিশ্চয়তাসহ তাঁদের অধিকার সংরক্ষণ ও বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেন। এই বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বিশেষজ্ঞরা।