সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় জাতিসংঘের উদ্বেগ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:২২ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সাংবাদিক সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকান্ডের ১০ বছর পার হলেও এর অনুসন্ধান শেষ না হওয়া ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করতে না পারার ব্যর্থতার কারণে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞগণ গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার জাতিসংঘ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুজন সাংবাদিকের হত্যাকান্ডের পর এক দশক পার হলেও এখনও কোনো বিচার হয়নি। বাংলাদেশে এক ভয়ানক এবং ব্যাপক দায়মুক্তির সংস্কৃতি বিরাজ করছে।
তারা বলেন, সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনিকে তাদের বাড়িতে তাদের পাঁচ বছরের ছেলের সামনে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ২০১২ সালে উচ্চ আদালত র্যাবকে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেন। ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখে উচ্চ আদালত ৮৪তম বারের মতো র্যাবকে তাদের তদন্তের ফলাফল জমা দিতে বলেন, যা এখনও সম্পন্ন হয়নি।
তারা আরো বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের বিচার না হলে তা মিডিয়াকে ভয় দেখিয়ে চুপ করানোর উদ্দেশ্যে দোষীদের উৎসাহ দেয় এবং আরো আঘাত, ভীতি ও হত্যাকে ত্বরান্বিত করে। আমরা বাংলাদেশে সেই গভীর উদ্বেগের নিদর্শন দেখতে পাই।
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, কমপক্ষে ১৫ জন সাংবাদিক গত দশ বছরে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞগণ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে বিনা বিচারে আটক, আক্রমণ, অপহরণ, অনলাইন ও অফলাইনে ভীতি প্রদর্শন এবং আইনি হয়রানির শিকার হওয়ার অসংখ্য প্রতিবেদন পেয়েছেন।
‘ঘটনাগুলোর তদন্ত বা বিচার হয়নি বললেই চলে। কিছু আক্রমণের ঘটনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি জড়িত বলে ধারণা করা হয়। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারের গোচরে আনা অভিযোগগুলোরও প্রায়ই কোনো জবাব মেলে না। ২০১২ সালে সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকান্ডের পর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের পাঠানো চিঠির কোনো জবাব সরকারের কাছ থেকে কখনই পাওয়া যায়নি।’
তারা বলেন, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযুক্ত শাহজাদপুরের তৎকালীন মেয়রের গুলিতে নিহত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আব্দুল হাকিম শিমুলের মামলার বিচারকার্য বারবার বিলম্বিত হওয়ায় বিশেষজ্ঞগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের আওতায় মামলাটির সব আসামি বর্তমানে জামিনে আছেন।
অতিমারি মোকাবিলায় সরকারের সমালোচনা করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত হয়ে নয় মাসের প্রাক-বিচারিক আটকাবস্থায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলখানায় মৃত্যুবরণকারী লেখক মুশতাক আহমেদের কথাও বিশেষজ্ঞগণ স্মরণ করেছেন।
পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হওয়া এবং অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে নিতে তিন ঘন্টা বিলম্ব হওয়ার পারিবারিক উৎকন্ঠা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর ব্যাপারে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠিত অভ্যন্তরীণ একটি তদন্ত কমিটি পরিবারের দাবির বিষয়ে তদন্ত না করেই তার মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে সাব্যস্ত করে। উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞগণ সরকারের কাছ থেকে কোনো জবাব পায়নি।
‘আক্রমণ, ভীতি ও হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার সহজাত ঝুঁকি থেকে সাংবাদিকতা মুক্ত থাকা উচিত কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দোষীদের বিচারের সম্মুখীন করতে না পারার সরকারি ব্যর্থতার কারণে সেটাই বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীর বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে’ বিশেষজ্ঞগণ বলেন।
সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি এবং বাংলাদেশের অন্য সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের হত্যাকান্ডের ঘটনার সম্পূর্ণ, দ্রুত, বিশদ, স্বাধীন ও কার্যকর তদন্ত পরিচালনা ও তা সম্পন্ন করা এবং দোষীদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।