জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ইউরোপ'র আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৮ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের সকল প্রচষ্টার মূলে রয়েছে মানুষ। আমাদের রাজনীতি, দেশ সেবা মানুষকে ঘিরেই। তবে মানুষের কল্যানে নিবেদন করতে ক্ষমতার বেশি প্রয়োজন একটি সদিচ্ছা।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ইউরোপ শাখার উদ্যেগে গত সোমবার লন্ডনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে আয়োজিত এক দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পূর্ব লন্ডনের রিজেন্ট লেইক হলে দোয়া মাহফিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সজ্জন রাজনীতিক ও সমাজকর্মী জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ইউরোপের সমন্বয়ক কামাল উদ্দিন। আইনজীবী ফোরাম ইউকের যুগ্ম সম্পাদক মাননাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন ও যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সমাজকর্মী খসরুজ্জামান খসরুর যৌথ পরিচালনায় এতে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কার্যক্রমের উপর আলোকপাত করেন বক্তব্য রাখেন ভয়েজ ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজের প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ডঃ হাসনাত হোসাইন এমবিই, জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা ও জাস্ট নিউজ সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী, সেন্টার ফর সোসিয়াল ডেভোলাপমেন্ট ইউকের চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, কমিউনিটি নেতা ও জনপ্রিয় টিভি প্রেজেন্টার বিসিএ এর সাবেক সভাপতি পাশা খন্দকার, সিটিজেন মুভমেন্ট এর চেয়ারম্যান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক, কমিউনিটির নেতা ও টাওয়ার হামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র আ ম ওহিদ আহমেদ, কমিউনিটি নেতা ও বিসিএ এর সেক্রেটারি মিঠু চৌধুরী, ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও ভয়েচ ফর জাস্টিস ইউকের সেক্রেটারী কে এম আবু তাহের চৌধুরী, বিসিএ এর সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম রাব্বানি সোহেল, যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিক, যুক্তরাজ্য আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার আবুল মনসুর শাহজাহান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য সমাজকর্মী প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য প্রসঙ্গে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, "জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কাজের কেন্দ্র হচ্ছে মানুষ। মানুষকে সাহায্য করা, সহযোগিতা করা এটাই হচ্ছে ফাউন্ডেশনের মূল উদ্দেশ্য।আমরা যার নামে ফাউন্ডেশন করেছি, এখানে অনেক বক্তা বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, অনেকে শহীদ জিয়াকে কাছে থেকে দেখেছেন, আপনার দেখেছেন শহীদ জিয়ার দেশের জন্য কী কাজ করেছেন, দেশের মানুষের জন্য কীভাবে কাজ করেছেন। এর বহু সাক্ষ্য আর প্রমাণ রয়ে গেছে। বিএনপির দল হিসেবে তার আলাদা পলিসি রয়েছে। রাজনৈতিক আদর্শ অনুসারে কাজ করবে। তবে ফাউন্ডেশন, তার নির্ধারিত জায়গায় থেকে মানবসেবার কাজ করে যাবে। এটা তার জায়গায় থেকে চলবে।"
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমরা যারা রাজনীতি করি তারা মানুষ এবং দেশ এই দুটোকে সামনে রেখে রাজনীতি করি। যখনি সুযোগ আসে আমরা চেষ্টা করি দেশ এবং তার মানুষের জন্য কিছু করার। রাজনীতির বাইরেও মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ রয়েছে। আমাদের যে রাজনৈতিক আদর্শ, যার আদর্শে আমরা রাজনীতি করি। তিনি হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার আদর্শে রাজনীতি হল দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য।"
মানব সেবার জন্য দল কোনো শর্ত নয় মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, "রাজনৈতিক মঞ্চের বাইরেও, রাজনৈতিক দলের বাইরেও, যদি আমরা সরকারি দলে নাও থাকি তবুও মানুষের সেবায় অনেক কিছু করা যায়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। আপনারা অনেকেই বক্তৃতায় শুনেছেন বিষয়টি, যখন এই ফাউন্ডেশন গঠন করা হয় তখন কিন্তু আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না। বিএনপি তখন বিরোধী দলে ছিল। সেখান থেকেই এটির কাজ শুরু হয়। যেখান থেকে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম সে জায়গা থেকে এটির আয়তন এখন অনেক বড় হয়েছে। কম বেশি বাংলাদেশের সকলেই এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে পরিচিত। এটার কাজের পরিধিও অনেক বড় হয়েছে।"
মানব সেবায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যাত্রা এবং কার্যক্রমের নানান দিক তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, "খুলনার তেরখাদায় মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রথম এই ফাউন্ডেশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর আস্থে আস্থে অনেকগুলো কাজ আমরা করেছি। আমার পূর্বে যারা বক্তব্য রেখেছে তারা এর কিছু কিছু কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা শিক্ষার জন্য চেষ্টা করেছি, আমাদের ক্যাপাসিটি থেকে যতদূর করা যায়। আমরা গ্রামের দুস্থ মহিলা যারা আছেন যারা বিভিন্নভাবে নিগৃহীত, বাস্তব চিত্র যেটা হল- বাংলাদেশে বহু দুস্থ নারী আছেন যারা স্বামী কর্তৃক ডিভোর্স কিংবা স্বামী রেখে চলে গেছে, এরকম বহু মহিলাকে আমরা স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করেছি। তাদের জন্য আমরা যেটা করেছি সেটা নেত্রী খালেদা জিয়াও করেছিলেন, তারা যাতে স্বাবলম্বী হয় সেজন্য তাদের মাঝে গরু বিতরণ করেছি, ছাগল বিতরণ করেছি, হাঁস-মুরগি বিতরণ করেছি, একজনকে মানুষকে স্বাবলম্বী করতে যতটুকু সম্ভব, ততটুকু করেছি।"
আমরা কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণের কাজ হাতে নিয়েছিলাম। এছাড়া পানির জন্য উদ্যেগ নিয়েছি, বাংলাদেশে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান করার সুযোগ পায়না। ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের মাধ্যমে আমরা সেখানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছি।
উদাহরণ হিসাবে ঢাকা শহরের ডেমরার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ডেমরার একটা জায়গা আছে যেখানটা অনেকটা আইল্যান্ডের মত তাদেরকে এক জগ পানির জন্য খাল পাড়ি দিয়ে আসতে হয়। সেখানে স্ট্যান্ডার্ড ডিপ টিউবয়েল স্থাপন করে আমরা পানির ব্যবস্থা করেছিলাম। ট্যাংকের মাধ্যমে সেখানে আমরা প্রায় ৪০০ পরিবারের পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।"
পরিবেশ সুরক্ষায় গাছ লাগানোর তাগিদ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, সারা দেশে প্রায় ১০ লাখ নিম গাছের চারা রোপন করা হয়েছিলো এবং শুধু ঢাকাতেই ৮০ হাজার নিমগাছের চারা রোপন করা হয়।
মহামারি কোভিড মোকাবিলায় সংগঠনিট কার্যক্রম প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, "প্রথম যখন কোভিড সংক্রমণ শুরু হয়, সে সময় বাংলাদেশের মানুষ নানান রকমের সমস্যায় পড়ে যায়। অক্সিজেন সিলিন্ডার বলেন, ঔষুধ বলেন, মাস্ক বলেন, মানুষকে সচেতন করার জন্য যে লিফলেট বিতরণ সেগুলো- সরকারের আগেই এই ফাউন্ডেশন তাদের সহযোগিতার কার্যক্রম শুরু করেছিল। কোভিড রোগীদের অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের জন্য আমরা ফাউন্ডেশনের উদ্যেগে কয়েকশ অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ করেছি। এই অক্সিজেন সিলিন্ডার শুধু ঢাকাতেই নয় বাংলাদেশের অন্যান্য শহরেও ফাউন্ডেশন তার ক্যাপাসিটি অনুসারে তা আক্রান্তদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।"
"ডাক্তাররা কোভিড আক্রান্তদের জন্য ঔষুধ কেনার প্রেসক্রাইব করেছেন যার অনেক ঔষুধ কেনার সামর্থ সাধারণ মানুষের এমনকি আমাদের দলের অনেকরই নেই। সাধারণ মানুষের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি বিনামূল্যে ঔষুধ পৌঁছে দিতে। আমার বিভিন্নভাবে এইসব ঔষুধ জোগাড় করেছি, ডোনেশনের মাধ্যমে, আমাদের বহু নেতাকর্মী এতে ডোনেট করেছেন।"
শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ফাউন্ডেশনের ভূমিকা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, "গত বছর আমরা একটি সাইন্স ফেয়ার করেছি। কোভিডের কারণে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবার সুযোগ পাচ্ছিলনা তারা যেন ভালো একটা সময় কাটাতে পারে সে জন্য এ উদ্যেগ নিয়েছিল আমাদের ফাউন্ডেশনের আয়োজকরা। আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা কিছু একটা ইনভেন্ট করুক, ইনভেন্ট কী করা যেতে পারে সে সুযোগ করে দিতে এ আয়োজনা করা হয়েছিল। সময়ের অপচয় না করে শিক্ষার্থীরা মনকে কাজ দেয়ার জন্য এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।"
নির্যাতিতদের আইনি সহায়তা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ জানে সে বিএনপি করুক বা না করুক বতর্মান সরকার বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর কী পরিমাণ অত্যাচার নির্যাতন করেছে। আমরা বিগত কয়েক বছরে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যেভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি সেভাবেই চেষ্টা করেছি সরকার র্যাব এবং পুলিশ বাহিনী কর্তৃক বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীরা শারীরিক নির্যাতন এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদেরকে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছি। কারো হাত ভেঙ্গে গিয়েছিলো, হাত অপারেশন করে হাত লাগানো হয়েছে, এমনকি দেশের বাইরে থেকেও অপারেশন করে নিয়ে আসা হয়েছে। বিভিন্ন রকমের অঙ্গহানি, কিডনি সমস্যা, এরকম অনেক সমস্যায় সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।"
"আমাদের অনেক পেশার মানুষ আছেন। ডাক্তার আছেন, ইঞ্জিনিয়ার আছেন, ল ইয়ার আছেন, আরও বিভিন্ন পেশার মানুষ আছেন। আমাদের আইনজীবি যারা রয়েছেন তাদের মাধ্যমে আমরা অন্ততপক্ষে ২৫,০০০ মানুষকে আইনি সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। এক দুই বছর নয়, বিগত ৭-৮ বছর ধরে এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।"
মানবসেবায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, "আসুন চেষ্টা করি, মানুষের জন্য কতটুকু সেবা আমরা করতে পারি। মানুষকে সহযোগিতা করতে পারি। আসুন চেষ্টা করি- কতটুকু আমরা দেশের জন্য করতে পারি। আমরা সবাই মিলে যদি অল্প অল্প করে করি তাহলে অনেক বড় কিছু, ভালো কিছু আমরা করতে পারবো।"
মঞ্চে আরও উপবিষ্ট ছিলেন কমিউনিটি ও যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃবৃন্দদের মধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সাবেক সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সহসভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব, আলহাজ্ব তৈমুছ আলী, উপদেষ্টা আব্দুল হামিদ চৌধুরী, বিসিএ এর সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ ফয়জুল হক, বিসিএ এর পাবলিক এন্ড রিলেশন সেক্রেটারী ও ব্রিটিশ সেলিব্রেটি শেফ আতিকুর রহমান।
দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, যুক্তরাজ্য যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস, আইনজীবী ফোরাম এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাংলাদশী নাগরিক ও বিভিন্ন পেশাশ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ।
দোয়া পরিচালনা করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ হাবিবুর রহমান। সভার শুরতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমেদ শাহিন।