মিয়ানমারে সামরিক জান্তার কাছে অস্ত্র, প্রযুক্তি বিক্রি-হস্তান্তর না করার আহ্বান
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৩১ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১০:২১ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, আলবেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, কোরিয়া, সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে ওই বিবৃতি। এতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও তার প্রতিনিধিদের কাছে সব রকম অস্ত্র, সরঞ্জাম, উভয়কাজে ব্যবহার্য্য সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি সহায়তা বিক্রি বা হস্তান্তর না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মানবিক প্রয়োজন অনুযায়ী মিয়ানমারের জনগণকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিটি এ রকম- ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা কেড়ে নেয়। দেশটির জনগণের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে যে উচ্চাকাঙ্খা সৃষ্টি হয়েছিল, এর মধ্য দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অভ্যুত্থানের এক বছর পরেও মিয়ানমারের জনগণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব স্পষ্ট। সেখানে কমপক্ষে এক কোটি ৪০ লাখ মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র।
গণতান্ত্রিক যে অর্জন হয়েছিল তাকে উল্টো পথে পাঠানো হয়েছে। সারাদেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এই সঙ্কটের দায় বহন করতে হবে সামরিক শাসকদের। তারা মিয়ানমার এবং এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ভয়াবহভাবে খর্ব করেছে।
আরও একবার আমরা অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করে সব দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান আহ্বান করি। সামরিক শাসকদের প্রতি আমরা পুনর্বার অনুরোধ করি অবিলম্বে জরুরি অবস্থা তুলে নিন, যাতে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া যায়। মুক্ত করে দিন খেয়ালখুশি মতো বন্দি রাখা বিদেশিসহ সবাইকে। দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দ্রুত ফিরিয়ে আনুন।
এতে আরো বলা হয়, অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে আমরা গত একটি বছর নারী, শিশু, মানবিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মী ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের যেসব সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন- তাদেরকে আমরা স্মরণ করছি। রোহিঙ্গা, অন্য জাতিসত্বা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সারাদেশে সামরিক শাসকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের কড়া নিন্দা জানাই আমরা। নির্যাতন, যৌন নির্যাতন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার যে বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট আছে তাতে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
অভ্যুত্থানের পর থেকে কমপক্ষে চার লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এতে আমরা আরও গুরুত্বর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সারাদেশে মানবাধিকার সঙ্কট আরো গভীর হয়েছে। এতে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের টিকা কর্মসূচিসহ মানবিক সুবিধা বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে পাওয়ার দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ সুযোগ দেয়ার জন্য আমরা সামরিক শাসকদের প্রতি আহ্বান জানাই।
বিপুল পরিমাণ মানুষকে খেয়ালখুশি মতো আটক করে রাখা হয়েছে। জেল দেয়া হয়েছে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচিকে এবং অন্য রাজনৈতিক বন্দিকে। এসব ঘটনায় আমরা আরও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মিয়ানমারের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব সদস্যের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা তাদের প্রতিনিধিদের কাছে অস্ত্র, ম্যাটেরিয়াল, উভয় কাজে ব্যবহার্য্য সরঞ্জাম, প্রযুক্তি সহায়তা বিক্রি বা হস্তান্তর বন্ধ করার আহ্বান জানাই। মিয়ানমারের জনগণকে তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা পূরণে অব্যাহত সমর্থন আহ্বান করি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আসিয়ান ফাইভ-পয়েন্ট কনসেনসাস এবং আসিয়ান স্পের্শাল এনভয়ের প্রচেষ্টার প্রতি আমরা জোর সমর্থন প্রকাশ করি। মিয়ানমারের জনগণের স্বার্থে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আসিয়ানের উদ্যোগকে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রয়োগ এবং ফাইভ পয়েন্ট কনসেনসাসের অর্থপূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আমরা সামরিক শাসকগোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানাই।
নিশ্চিত করতে হবে আসিয়ান স্পেশাল এনভয় যেন মিয়ানমারের সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এর মধ্য থাকতে হবে গণতন্ত্রপন্থি গ্রুপগুলোও। একই সঙ্গে আমরা মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূতের কর্মকাণ্ডকে স্বাগত জানাই এবং তার সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য সামরিক জান্তার প্রতি আহ্বান জানাই।