জ্বালানি তেলের উৎপাদন প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা রাশিয়ার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:১২ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:১০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
রাশিয়া জ্বালানি তেলের উৎপাদন প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। আগামী মার্চ মাস থেকে তেলের উৎপাদন কমবে বলে জানিয়েছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক। তাদের মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশের মতো কমাবে রাশিয়া।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার জ্বালানি তেল এবং তেলজাত পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পর রাশিয়া এ পদক্ষেপ নিল।
বিশ্বের দ্বিতীয় বড় রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার এ ঘোষণার পরই অপরিশোধিত ব্রেন্ট তেলের দাম আড়াই শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৬ দশিমক ৬ ডলারে পৌঁছায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল রপ্তানি করে সৌদি আরব।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের উৎপাদিত তেলের পুরোটাই বিক্রি করছি। কিন্তু আগেই যেমনটা আমরা বলেছি, যাঁরা মূল্য বেঁধে দেওয়ার মূলনীতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মেনে চলছেন, তাঁদের কাছে আমরা তেল বিক্রি করব না।’
‘এ ক্ষেত্রে রাশিয়া নিজস্ব সিদ্ধান্তে মার্চ মাস থেকে প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেল তেলের উৎপাদন কমাবে,’ তিনি যোগ করেন।
আজ শুক্রবার ক্রেমলিন জানায়, রাশিয়া তেল উৎপাদক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে তেলের উৎপাদন কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেছে।
রাশান সরকারের একটি সূত্র শুক্রবার আরও আগের দিকে রয়টার্সকে বলেছে যে তারা ওপেক প্লাস গ্রুপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পরামর্শ করেনি।
তেল রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় কমাতে পশ্চিমা দেশগুলো মূল্য বেঁধে দিয়েছিল। রাশিয়া চেষ্টা করছে কীভাবে এসব বিধিনিষেধকে পাশ কাটিয়ে তেল রপ্তানি চালিয়ে যাওয়া যায়। তবে তেলের উৎপাদন কমানোর এ ঘোষণা ধারণা দিচ্ছে যে রাশিয়ার তেলের মূল্য বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি কিছুটা হলেও কাজ করছে।
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তার অংশ হিসেবে রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেওয়া হয়। এ দাম ঠিক করা হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার।
উৎপাদনে ঘাটতি
রাশিয়ার তেল উৎপাদনে সবচেয়ে বড় কাটছাঁট করা হয় গত এপ্রিলে যখন ইউক্রেনে হামলার পর পশ্চিমা অবরোধ আরোপ করা হয়। তখন তেলের উৎপাদন কমেছিল প্রায় ৯ শতাংশ। এরপর থেকে রাশিয়া মোটামুটিভাবে তাদের উৎপাদন আগের পর্যায়ে নিয়ে আসে এবং বেশির ভাগ তেল এশিয়ায় রপ্তানি করে।
তেলের উৎপাদনে গোষ্ঠীর বর্তমান নীতি মাত্র ৯ দিন আগেই ওপেক প্লাস প্যানেল অনুমোদন করেছিল। এ প্যানেলে রাশিয়া একজন সদস্য।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেন, ‘রাশিয়া বিশ্বাস করে তেলের মূল্য বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি বাজারের ওপর হস্তক্ষেপ এবং সম্মিলিত পশ্চিমা দেশগুলোর ধ্বংসাত্মক জ্বালানি নীতির ধারাবাহিকতা।’
তাঁর একজন মুখপাত্র পরে জানিয়েছেন যে শুধু অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন কমানো হবে। গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট, যা এক রকমের হালকা তেল, তা এর আওতায় আসবে না।
গত বছর ধারণা করা হয়েছিল যে রাশিয়ার তেলের উৎপাদন বেশ কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে বরং দেশটির তেলের উৎপাদন ২ শতাংশ বেড়ে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টন বা দিনপ্রতি ১ কোটি ৭০ লাখ ব্যারেলে পৌঁছায় এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ভারত ও চীন ব্যাপকভাবে এ তেল কেনে।
তবে নতুন এক দফা পশ্চিমা বিধিনিষেধ আরোপের ফলে রাশিয়াকে এখন তেল বিক্রি করতে আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। জ্বালানি তেল থেকে আয় রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির বাজেটে গত জানুয়ারিতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঘাটতি হয়েছে।
চলতি হিসাবে দেশটির যে উদ্বৃত্ত ছিল, রাশিয়ার রপ্তানি পড়ে যাওয়ার কারণে তা ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৮০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে মস্কোর যখন আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন, তখন তাদের হাতে থাকা অর্থ আরও কমে গেল।