

বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও ১০ দফা দাবি আন্দোলনে মাইলফলক
রাশেদুল হক, দিনকাল
প্রকাশ: ০৪:৩৩ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫৪ এএম, ২৯ জুন,রবিবার,২০২৫

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে ঘোষিত বিএনপির ১০ দফা ও গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র নেই। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিদেশিদের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ে চেপে বসে আওয়ামী লীগ সরকার। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদের ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বাকি আসনে শতকরা ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। সে নির্বাচনে এমনও ঘটনা ঘটেছে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ার পরও তাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে বিজয়ী প্রার্থী হিসেবে। এরশাদের জাতীয় পার্টির নেতারা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তাদের বানানো হয়েছিল গৃহপালিত বিরোধী দল। সে নির্বাচনের আগে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং কীভাবে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদকে ধমক দিয়েছিলেন তা তিনি গণমাধ্যমে নিজেই স্বীকার করেছিলেন। আর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতের ভোটের কথা তো সারাবিশ্বের মানুষের মুখে মুখে। ২৯ ডিসেম্বর রাতেই কেন্দ্র দখল করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনের কর্মকর্তারা ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখে। পরদিন ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এর আগে দেশজুড়ে চলে গায়েবি ও মিথ্যা মামলার হিড়িক। মামলা থেকে রেহাই পাননি কবরবাসীও। বিদেশে অবস্থানরত, হজপালনরত, এমনকি হাসপাতালে প্যারালাইজ রোগীও সে সময় গায়েবি মামলা থেকে রক্ষা পাননি। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয় কারাগারে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট থেকে তিনি কোনো অর্থ তছরুপ করেননি, এমনকি ট্রাস্টে জমাকৃত টাকা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে একাউন্টেই জমা ছিল। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, নিম্ন আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে নির্দেশিত হয়ে ফরমায়েশি রায় প্রদান করলেও উচ্চ আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। জামিন পাওয়া তাঁর অধিকার হলেও জামিনযোগ্য মামলায় তাঁকে জামিন দেয়া হয়নি। দেশে ভয়াবহ করোনা শুরু হলে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাসায় গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তিনি সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধী দলের নেতা, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং গুরুতর অসুস্থ বয়োজ্যেষ্ঠ একজন নারী অথচ আজও তিনি জামিন পাননি। তিনি চিকিৎসাসেবা থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত হয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। এখনও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। সরকারের সাজানো মামলায় সত্য রায় দেয়ায় বিচারককে হতে হয়েছে নির্বাসিত। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকেও দেশ ছাড়তে হয়েছে সত্য উচ্চারণ করে। সত্য উচ্চারণ করে দেশ ছেড়েছেন অসংখ্য সাংবাদিক। দেশের মানুষের কোনো বাকস্বাধীনতা নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও মানুষের কন্ঠরোধ করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হলেও কেউ লিখতে সাহস পান না। দেশে উন্নয়নের নামে চলছে লুটপাটের মহোৎসব। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। প্রতিবাদ করতে গেলে মিছিলে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাজা যুবকদের। বিএনপিসহ বিরোধী দলের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার নেই বললেই চলে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশি তান্ডব চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ডাকসু’র সাবেক জিএস খায়রুর কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে। গায়েবি মামলায় রাতের গভীরে গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসকে। তারা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। জামিন পাওয়া তাদের অধিকার তবুও তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। কারাগারে তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। এখনও দেশজুড়ে চলছে গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার অভিযান। এছাড়াও বিগত কয়েক বছরে বিরোধী মতের রাজনৈতিক কর্মীসহ দেশের বরেণ্য সাংবাদিকদের গুম করা হয়েছে। ঠিক এমন একটি নৈরাজ্যকর মুহূর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সকল রাজবন্দির মুক্ত করা, সংসদ ভেঙে দিয়ে অবৈধ ও নিশিরাতের সরকারের পদত্যাগে বাধ্য করা, সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর সকলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক “Rainbow-Nation” প্রতিষ্ঠা করা, পরপর দুই টার্ম কেউ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা, মিডিয়া কমিশন গঠন করা, দুর্নীতি প্রতিরোধে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল (Ombudsman)’ নিয়োগ করা, ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, ইভিএম নয় সকল কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করাসহ বিএনপি ঘোষিত রূপরেখা সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিএনপির দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের সাধারণ জনগণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিএনপির রূপরেখা ও দাবিগুলোকে অত্যন্ত যৌক্তিক বলে মনে করেন।
তাদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিবিমুখ জনগণকে আস্থা ফেরাতে সহায়তা করবে এ রূপরেখা। অনেকে মনে করেন মানুষের ভোটের অধিকার ফেরাতে ও ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে বিএনপি উত্থাপিত দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা তরুণ প্রজন্মকে উদ্ধুদ্ধ করে সরকার পতনের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। বিশিষ্টজনদের মতে, বিএনপির এসব কর্মসূচি চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সহায়ক হবে। জাতিকে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ করবে।
গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা তুলে ধরা হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রথমে সংক্ষিপ্ত আকারে জাতির উদ্দেশে রূপরেখা তুলে ধরেন। পরে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২৭ রূপরেখা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঘোষিত ‘১৯ দফা’ এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপির ‘ভিশন-২০৩০’-এর আলোকে এই রূপরেখাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, উচ্চকক্ষের আইনসভা প্রবর্তন, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ২৭টি রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে বিএনপির রূপরেখা :
১. বিগত এক দশকের অধিককালব্যাপী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার হীন উদ্দেশ্যে অনেক অযৌক্তিক মৌলিক সাংবিধানিক সংশোধনী এনেছে। একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সকল বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা করে এসব রহিত/সংশোধন করা হবে এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কার করা হবে। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
২. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘Rainbow-Nation’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এজন্য একটি ‘National Reconciliation Commission’ গঠন করা হবে।
৩. বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
৪. প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য (Checks and Balances) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করা হবে।
৫. পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
৬. বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাস¤পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ (Upper House of the Legislature) প্রবর্তন করা হবে।
৭. আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত এমন সব বিষয় ব্যতীত অন্যসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
৮. রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হবে। ইভিএম নয়, সকল কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হবে। RPO, Delimitation Order এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হবে।
৯. সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠান পুনঃগঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ প্রদান করা হবে।
১০. বাংলাদেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে। জুুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ চাকরির শৃঙ্খলাবিধান সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক পরিচালিত হবে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত ইতোপূর্বেকার ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। এজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে কেবলমাত্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদন্ডে যাচাই করে বিচারক নিয়োগ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫(গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদন্ড সম্বলিত ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রণয়ন করা হবে।
১১. দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনঃগঠন করা হবে। মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
১২. সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য মিডিয়া ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে। সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে; এই লক্ষ্যে ICT Act-2006-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন ও Digital Security Act-- ২০১৮ বাতিল করা হবে। চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে। বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য ‘জুডিশিয়াল কমিশন’, মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে।
১৩. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপোস করা হবে না। বিগত দেড় দশকব্যাপী সংঘটিত অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের বাইরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে দুদকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল (Ombudsman)’ নিয়োগ করা হবে।
১৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। Universal Human Rights Charter অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে। সুনির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা হবে। গত দেড় দশক যাবত সংঘটিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর ও অমানবিক অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ব্যক্তিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুবিচার নিশ্চিত করা হবে।
১৫. অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, কর্পোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাস¤পন্ন ব্যক্তি সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বন্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ করা হবে। উপরোক্ত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, জুডিশিয়াল কমিশন, মিডিয়া কমিশন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনগুলো সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্ব-স্ব প্রতিবেদন দাখিল করবে, যেন সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
১৬. ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন। দল-মত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতি-গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তাবিধান করা হবে।
১৭. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের Price-index based ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করা হবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওর-বাঁওড় ও মঙ্গাপীড়িত এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
১৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ রোধ করার লক্ষ্যে জনস্বার্থবিরোধী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হতে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চলমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। আমদানিনির্ভরতা পরিহার করে নবায়নযোগ্য ও মিশ্র এনার্জি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং উপেক্ষিত গ্যাস ও খনিজসম্পদ আবিষ্কার ও আহরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৯. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হইবে। বাংলাদেশ ভূ-খন্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হবে।
২০. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। স্বকীয় মর্যাদা বহাল রেখে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হবে।
২১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে যেন তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির খবরদারিমুক্ত স্বাধীন স্থানীয় সরকার নিশ্চিত করা হবে। মৃত্যুজনিত কারণ কিংবা আদালতের আদেশে পদশূন্য না হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না। আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশবলে সাসপেন্ড/বরখাস্ত/অপসারণ করা হবে না।
২২. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাঁদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। এই তালিকার ভিত্তিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কল্যাণার্থে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে একটি সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
২৩. যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। যুব সমাজের দক্ষতা (Skill Development) বৃদ্ধি করে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ আদায়ের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মানবস¤পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হবে।
২৪. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২৫. বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা (Need-based education) এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে (Knowledge-based education) প্রাধান্য দেয়া হবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
২৬. ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘NHS’-এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (Universal health coverage) প্রবর্তন করা হবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্যবীমা, পশুবীমা, মৎস্যবীমা এবং পোল্ট্রি-বীমা চালু করা হবে। কৃষিজমির অকৃষি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হবে।
গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে ঘোষিত ১০ দফা :
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
৩. নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
৪. বেগম খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।