

ধেয়ে আসছে আসানি, সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৮ পিএম, ৭ মে,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫৩ এএম, ৭ জুলাই,সোমবার,২০২৫

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আসানি। আন্দামান সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দফতর। আগামী মঙ্গলবার (১০ মে) নাগাদ এটি ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এরইমধ্যে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সর্বোচ্চ সর্তকতা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ক্রমশ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ভারতের পোর্ট ব্লেয়ার উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
দেশটির আবহাওয়া দফতর জানায়, নিম্নচাপটি রবিবার (৮ মে) বিকেল নাগাদ আরও শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে এটি ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলেও জানানো হয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলে ৩৭টি উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। জেলেদেরও সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আসানি আঘাত হানতে পারে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, সিকিমসহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে। এরইমধ্যে রাজ্যগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এসব রাজ্যে আসানির প্রভাবে ভারি থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া দফতরের মতে, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখ-, বিহার, কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানাতেও বৃষ্টি হতে পারে। তবে এসব রাজ্যে আসানির খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে উল্লেখ করেছে তারা। চলতি সপ্তাহেই ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। সাতক্ষীরা অঞ্চলে এর কারণে দমকা বাতাসসহ ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছে শ্রীলঙ্কা। লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং কাছাকাছি দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার (৭ মে) সন্ধ্যা বা রাতে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এটি আরও শক্তিশালী হয়ে রোববার নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এটির গতি এখন উত্তর-পশ্চিম দিকে। দিক পরিবর্তন না করে এভাবে এগিয়ে গেলে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর তা ভারতের উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
আজ শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক সানাউল হক মন্ডল বলেন, গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। আজকে (শনিবার) সকালেও এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবেই রয়েছে। এটি সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে। সে হিসেবে এটি বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যা বা সন্ধ্যার পরে কোনো এক সময় এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আমরা এটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। সিস্টেমটির গতি আপাতত উত্তর-পশ্চিম দিকে আছে। নিম্নচাপ হওয়ার পরও এটি উত্তর-পশ্চিম দিকেই এগোতে পারে। সে অনুযায়ী এটি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সানাউল হক বলেন, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি আরও পরিপক্ব হয়ে নিম্নচাপ কিংবা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে ততক্ষণ কোনো কিছুই নির্দিষ্ট নয়। গতিপথ যে কোনো সময় যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আমাদের উপকূল থেকে এখনো অনেক দূরে। তাই সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য এখনই কোনো সতর্ক সংকেত জারি করা হয়নি বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (মৌসুম ভবন) জানিয়েছে, সিস্টেমটি রবিবার (৮ মে) সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আগামী ১০ মে ভারতের উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমূল হক বলেন, দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি শনিবার সকাল ৬টায় দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন এ আবহাওয়াবিদ। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা ও সিলেট বিভাগ ছাড়া সব বিভাগেই কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে তাড়াশে। ঢাকায় ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।