

নীরবে বাড়ছে শিশুখাদ্যের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৩ পিএম, ৩ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৪০ পিএম, ৬ জুলাই,রবিবার,২০২৫

গুঁড়ো দুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট, কর্নফ্লেক্স, চকোলেটসহ প্রায় সব ধরনের শিশুখাদ্যের দাম বাড়ছে নীরবে। একই সঙ্গে বেকারি পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এসব খাদ্যপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অথচ এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে নেই কোনো আলোচনা। শুধু সয়াবিন তেল, চাল, ডাল আর চিনির দাম নিয়েই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি শিশুখাদ্যের বাজারে সরকারের তেমন কোনো তদারকিও নেই। অবশ্য সব ধরনের পণ্যের বাজারেই সরকারের মনিটরিং রয়েছে নামে মাত্র। প্রতি বছর রমজান শুরুর আগে কয়েকটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। এ ছাড়া সারা বছর ভেজালবিরোধী অভিযান কিছুটা চলে। কিন্তু পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে কেন বাড়ছে, কারা বাড়াচ্ছে, অধিক মুনাফা কারা করছে, কারসাজির সঙ্গে কারা জড়িত, কৃত্রিম সংকট তৈরির পেছনে কারা দায়ী- এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কখনোই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। বরং মুক্তবাজারে অর্থনীতির দোহাই দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে তদারকির কাজে নিয়োজিতরা। খোদ বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষও সম্প্রতি এমনটিই বলেছেন। তার মতে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাবে সব ধরনের গুঁড়ো দুধের দাম এক বছরের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বুধবারের বাজারদর অনুযায়ী এক কেজি ডানো গুঁড়ো দুধ ৬৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক বছর আগের এই দিনে ছিল ৬০০ থেকে ৬১০ টাকা। ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের (নিউজিল্যান্ড) গুঁড়ো দুধ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৮০ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৬১০-৬৩০ টাকা। অনলাইন শপ চালডালের ওয়েবসাইটে এটার মূল্য ৭২০ টাকা। দেশীয় ব্র্যান্ডের গুঁড়ো দুধ মার্কসেরও দাম বেড়েছে। এই দুধ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮৫-৬২০ টাকায়, যা গত বছর এই দিনে বিক্রি হয়েছিল ৫৪০-৫৭০ টাকায়। ড্যানিশ ব্র্যান্ডের এক কেজি গুঁড়ো দুধের দাম ৬৯০ টাকা। যা এক বছর আগে ছিল ৬০০-৬৩০ টাকা। মিল্কভিটার এক কেজি দুধের দাম ৫৭০ টাকা। এ ছাড়া ল্যাকটোজেন, বায়োমিল, সেরেল্যাকসহ অন্যান্য শিশুখাদ্যের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় বসবাসকারী এক স্কুলশিক্ষক বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দামই বেশি। কোনো কারণ ছাড়াই কিছু জিনিসের দাম বাড়ছে। আর শিশুখাদ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। আবার শিশুখাদ্যে ভেজালও বেড়েছে। কিন্তু এখানে সরকারের কোনো মনোযোগ নেই। কোনো তদারকিও নেই।
এদিকে কর্নফ্লেক্স ও সব ধরনের দেশি-বিদেশি চকোলেটের দামও বেড়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, বিশ্ববাজারেই দাম বেড়েছে। এখনো বাড়ছে। বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেম যুদ্ধের একটা প্রভাবও পণ্যের বাজারে পড়ছে বলে তারা মনে করেন। বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ট্রেডিংডটকমের তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন রকম দুধের (জরুরি শিশুখাদ্য) দাম বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। পনিরের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া গমের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। অথচ এই গম থেকেই বিভিন্ন রকমের শিশুখাদ্য তৈরি হয়ে থাকে। ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বহুল পরিচিত ওটসের দামও বেড়েছে। এই পণ্যটির দাম এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৮৮ শতাংশ। বিভিন্ন রকমের খাদ্যপণ্য তৈরি হয় এমন একটি কাঁচামাল ভুট্টার দামও এক বছরে বেড়েছে ৩২ শতাংশ। এদিকে আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে আমদানি পণ্যের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। টাকার বিপরীতে ডলারের দামও বাড়ছে অব্যাহতভাবে। গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম টাকার বিনিময়ে বেড়েছে প্রায় ২ টাকা। বুধবারও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। যদিও খোলাবাজারে ডলারের দাম ৯০-৯১ টাকায় পর্যন্ত উঠেছে বলে জানা গেছে। অবশ্য বুধবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ডলারের রেট ছিল ৮৬ টাকা। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম জোরালো হওয়ায় বিশ্বব্যাপী ডলারের চাহিদা বেড়েছে। ফলে ডলারের দাম বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এদিকে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) গত নভেম্বরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রকোপ কমতে না কমতেই বেড়েছে বিশ্ববাণিজ্যের প্রসার। এর সঙ্গে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়নশীল ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো বাড়তি চাপের মুখোমুখি হবে বলে জানায় এফএও। সংস্থাটির ফুড আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে জানায়, কভিড-১৯ মহামারির শুরুতে খাদ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য পঙ্গু হয়ে পড়ে। তবে চলতি বছরের শেষ দিকে এসে বাণিজ্যে লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি এসেছে। খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য দ্রুত বাড়ছে। এটি তুলনামূলক দরিদ্র দেশ ও ভোক্তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এর ফলে চলতি বছর (২০২১) খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক আমদানি ব্যয় সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছবে। ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলারের গন্ডি ছাড়াতে পারে আমদানি বিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিল বাড়বে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি বছরের জুনে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় বাড়বে ১২ শতাংশ। একই পথে হাঁটছে বাংলাদেশও। খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়ছে ক্রমাগত।