ইবনে সিনায় সিজার করাতে এসে নারীর মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩০ পিএম, ২০ মার্চ,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:৩২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজধানীর কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সিজার করতে এসে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের দাবি— কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পলি সাহা নামে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অপারেশন টেবিলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ তাদের।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাতে এসব কথা বলেন মারা যাওয়া পলি সাহার স্বামী মুন্না ও তার স্বজনরা। এর আগে বিকেল ৪টায় কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে।
জানা গেছে, গত সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে প্রসবজনিত সিজার করাতে স্ত্রীকে নিয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালে আসেন স্বামী মুন্না। মঙ্গলবার বিকেল চারটায় পলি সাহাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মুন্না বলেন, ‘গত সোমবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে আমার স্ত্রী পলিকে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। এরপর চিকিৎসক আমাদেরকে জানায়— রোগী এবং নবজাতক উভয়েই ভালো আছে। বিকেল ৫টার দিকে যখন তাদেরকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নিয়ে আসা হয়, তখন কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে সার্বিক অবস্থা জানতে চাইলে তারা জানায়— রোগী ভালো আছে, তবে কিছুটা ব্লিডিং হচ্ছে।’
পলি সাহার স্বামী মুন্না আরও বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে যেই চিকিৎসক সার্জারি করেছেন, তিনি এসে দেখেন এবং রোগীর জন্য এক ব্যাগ রক্ত লাগবে বলে জানান। এরপর রাত ৯টার দিকে আমি আবার এসে রোগীর অবস্থা জানতে চাই, তারা জানায়— রোগীর ব্লিডিং এখন আগের চেয়ে কমেছে, এটা নিয়ে আপাতত কোনো শঙ্কা নেই। তবে শঙ্কা হলো ব্লাড প্রেশারটা কেন কমছে, সেটা নিয়ে। এভাবেই রাত ১টা পর্যন্ত সময় গড়ায়। যখনই কথা বলি, সে (পলি) বারবার বলতে থাকে তার ব্লিডিং হচ্ছে এবং অস্থির লাগছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানাই, তারা বলেন— ব্লিডিং এখন কমে গেছে। আমরা এখন রোগীর ব্লাড প্রেশার নিয়ে চিন্তিত। এরপর রাতে আর আমাকে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে চিকিৎসক সার্জারি করেছিলেন তিনি আমাকে ফোন করে বলেন— রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে, আইসিইউতে নিতে হবে। এর ১০ মিনিট পরই তিনি আবার আমাকে বলেন— রোগীর ব্লিডিংটা ইন্টারনাল কোথাও হচ্ছে কি না, সেটা দেখার জন্য আরেকটা সার্জারি করতে হবে। তখন অলরেডি আমার রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। সে অক্সিজেন পাচ্ছিল না, হার্টবিট পাচ্ছিল না। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ পার্সেন্ট কোমায় চলে গেছে। ওই অবস্থায় তাকে আবার নতুন করে সার্জারি করা হয়।’
মুন্না অভিযোগ করে বলেন, ‘সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা জানান— রোগীর জরায়ু কাজ করছে না, এজন্য ব্লিডিং হচ্ছে। তাকে বাঁচাতে হলে জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। তারপর আমি সম্মতি দিলে তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়। একপর্যায়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় আমাকে জানায়— পেশেন্টের সিভিয়ার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, আমাদের আর কিছুই করার নেই। সবশেষে বিকাল ৪টার দিকে আমার স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক হাসপাতালটির প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিন মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার বিষয়টি অস্বীকার করেন ইবনে সিনা হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার শাখার কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা এমন একটা পর্যায়ে ছিল যে তাকে বাঁচাতে হলে তখন জরায়ু কাটা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। সেসময় রোগীর স্বামীর মৌখিক এবং লিখিত সম্মতি নিয়ে জরায়ু কাটা হয়। মূলত রোগীর ব্লিডিং বন্ধ করার জন্য চিকিৎসকদের আর কিছুই করণীয় ছিল না। সুতরাং এখানে অপারেশন করতে গিয়ে জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে; এটা পুরোপুরি ভুল অভিযোগ।