মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৫৬ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আবার আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল নয়টার দিকে ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীরা পুনরায় অবরোধ শুরু করেছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত ইনস্টিটিউটের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবরোধ চালিয়ে যাবেন।
২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মুহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা সাত দিনের জন্য আন্দোলন শিথিল করেন। তাঁরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসে ক্লাসে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। সাত দিনের মধ্যে ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখতে পেলে তাঁরা পুনরায় আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ঘোষণা অনুযায়ী, ২৩ জানুয়ারি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রমে ফেরেন। একই সঙ্গে তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যমান পদক্ষেপ, ছাত্রীদের অস্থায়ী হল স্থাপন, পরিবহনব্যবস্থা চালু, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যানটিন চালু, ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবনকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করে লিখিত ছাড়পত্র দেওয়া ইত্যাদি দাবি জানিয়েছিলেন।
ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী শিহাব শাহরিয়ার ও মোহাম্মদ শহীদ গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁরা প্রায় তিন মাস ধরে আন্দোলনে আছেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁদের দাবি পূরণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, সাবেক সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন শিথিল করেছিলেন। কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তাঁদের দাবির বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ তাঁরা দেখতে পাননি। তাই তাঁরা আবার পূর্ণমাত্রার আন্দোলনে নেমেছেন। মূল ক্যাম্পাসে না ফিরিয়ে নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ক্লাসে করতে হলে তাঁরা মূল ক্যাম্পাসেই করবেন। বর্তমান ক্যাম্পাসে তাঁরা আর ক্লাস করবেন না।
জানতে চাইলে চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন এই মুহূর্তে ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সরকারের বাজেটের ঘাটতি রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের অন্য সব দাবি এখন প্রক্রিয়াধীন। তিনি উপাচার্যকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয় জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। কাজ চলমান অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আবার কেন অবরোধ শুরু করেছেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট।
ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৩। তাঁদের মধ্যে ছাত্রী ১৭৯ জন, ছাত্র ১৭৪ জন।
শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ দাবিতে গত ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তার পর থেকে তাঁদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন থেকে অচল ছিল ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২৩ জানুয়ারি ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আজ তাঁরা আবার অবরোধ শুরু করলেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। ছাত্রীদের জন্য মাত্র একটি শৌচাগার আছে। আবাসন সুবিধা পান মাত্র ১৩ শিক্ষার্থী। গ্রন্থাগারে বই নেই। ডাইনিংয়ে খাবারের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চান।