ভারতের বইয়ের ছবি দিয়ে ধর্ম নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে : শিক্ষামন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৭ পিএম, ২১ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:১৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, নতুন পাঠ্যবই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। নতুন পাঠ্যবইয়ে ইসলাম ধর্মবিরোধী বিষয় আছে—এ বক্তব্য সত্য নয়। বলা হচ্ছে, ইসলাম ধর্মসংক্রান্ত সব বিষয় সরিয়ে দিয়ে ভিন্নধর্মী জিনিসপত্র আনা হয়েছে, এটিও একেবারে অসত্য। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বইয়ের ছবি দিয়ে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যে বইটি এখন সেখানেও চলে না। একটা অপশক্তি আছে, যারা এসব মিথ্যাচার চালিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়।
আজ শনিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘নতুন পাঠ্যবইয়ে ধর্মবিরোধী কোনো বিষয় থাকার সুযোগ নেই। কারণ, আমরা নৈতিকতার শিক্ষায় বিশ্বাস করি এবং ধর্মীয় শিক্ষা সেই নৈতিকতার মূল স্তম্ভ। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব বিষয়ে ব্যাপক অপপ্রচার চলছে।’
পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়ে দিপু মনি বলেন, ‘যারা বইয়ের ভুল শনাক্ত করেছেন, তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে কিছু ভুল শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছরের বইয়ে এই ভুল ছিল। কিন্তু কখনো কারও চোখে পড়েনি। এ বছর শিক্ষার্থীরা বইগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছে বলেই ভুল ধরা পড়েছে। এই যে পাঠ্যবইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, এটি পাঠ্যবইগুলোর মান উন্নত করতে এবং আরও নির্ভুল করতে আমাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করবে।’
দেশে চলমান কাগজ–সংকট নিয়েও কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গত বছর কাগজশিল্প বিরাট একটি সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। কাগজের একটি বিশাল সংকট ছিল। কাগজ তৈরিতে ব্যবহার হওয়া ভার্জিন পাল্প পাওয়া যাচ্ছিল না। ডলার পরিস্থিতির কারণে আমদানির দিকেও যেতে পারিনি। এর পরেও সব শিল্পের সহযোগিতায় ১ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে দিতে পেরেছি। প্রত্যেক শিক্ষার্থী বই পেয়েছে। হয়তো কেউ ৫টি, কেউ ৩টি পেয়েছে। তবে সবাই পেয়েছে। বাকি বইগুলো এ মাসের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’
নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে দীপু মনি বলেন, ‘ষষ্ঠ, সপ্তম ও প্রথম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমের বইগুলো পরীক্ষামূলক। গত বছর ৬০টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং প্রোগ্রাম চালানো হয়েছে। এখন ৩৩ হাজার প্রতিষ্ঠানে বইগুলো যাচ্ছে। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে বইগুলো যাবে। কোথাও তথ্যগত ভুল থাকলে, কোনো বিষয়বস্তু বা ছবি আপত্তিকর মনে হলে আমাদের জানাবেন। আমরা পরবর্তী সংস্করণে পরিমার্জন করব।’
এর আগে সকাল ৯টায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ আরিফিন নগর এলাকায় এইউডব্লিউর ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
আরোও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সহধর্মিণী চেরি ব্লেয়ার, ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল নাইরুপ রাসমুসেন, এইউডব্লিউর সহ–প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মেয়ার, এইউডব্লিউর ট্রাস্টি অধ্যাপক মাইথ্রি উইক্রেমেসিঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রুবানা হক, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ, এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব উর রহমান প্রমুখ। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এমিরেটাস জন সেক্সটন।
সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয় উৎসবের রঙে। এতে বিভিন্ন দেশের ৩০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এমনই একজন আফিয়া আক্তার। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনায়। ১৯৯৫ সালে তাঁরা চট্টগ্রামে চলে আসেন। বাবার স্বল্প আয়েই চলত সংসার। অভাব যেন তাঁদের পিছু ছাড়ছিল না। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর ২০০৮ সালে তিনি নগরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন। এর মধ্যে পড়াশোনাটাও চালিয়ে গেছেন। ২০১১ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন।
চাকরি ও পড়াশোনা চলছিল সমানতালে। তারপর ২০১৭ সালে আফিয়ার জীবন পাল্টে যায়। সে বছর আফিয়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) পড়ার জন্য একটি বৃত্তি পান। তাঁর পোশাক কারখানা থেকেই বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। অর্থনীতি থেকে স্নাতক করা আফিয়াকে আজ দারুণ উচ্ছ্বসিত দেখা গেল। তিনি বলেন, পোশাক কারখানায় স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন তিনি। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি ঝোঁকটা ছিলই। একসময় এইউডব্লিউতে পড়ার সুযোগ এল। আর এ ক্যাম্পাসে এসে জীবনটাই যেন বদলে গেছে।