নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পরও ঠিকাদার তিনতলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি।
প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের পাঠদান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৪ এএম, ১৪ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:৪২ পিএম, ১০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে একই বছরের ২৭ অক্টোবর শেষ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পরও ঠিকাদার ভবন নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি। এদিকে শ্রেণিকক্ষসংকটে নির্মাণাধীন ভবনে বাঁশ ও টিনের বেড়া এবং মেঝেতে বালুর মধ্যে চলছে পাঠদান। এতে শিক্ষক ও শিশুশিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পাঠদান।
নিত্যদিনের এ চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা প্রশাসন, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে বারবার মৌখিক ও লিখিত জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিল। গত বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা নির্মাণাধীন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ছাদঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ভবনের সামনে ও দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ইট, বাঁশ, কাঠসহ নির্মাণকাজের বিভিন্ন সামগ্রী রাখা রয়েছে। নিচতলার মেঝে বালু দিয়ে ভরাট করা এবং দক্ষিণ পাশের দেয়ালে ইটের পরিবর্তে বাঁশের চাটাই ও পরিত্যক্ত টিনের বেড়া। সামনের পাশ খোলা। বালুর মেঝেতে বেঞ্চ পেতে গণিত ক্লাস করছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। ঠিকাদার, প্রকৌশলী বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কাউকে দেখা যায়নি বিদ্যালয়ের আঙিনায়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, বালুর মধ্যে বেঞ্চ দেবে যায়। শিক্ষার্থীরা লিখতে পারে না। একটু বাতাস উঠলে বালু ওড়ে। এতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। পাঠদানে খুবই সমস্যা হয়।
বর্তমানে পান্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৩০ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক রয়েছেন ৭ জন। তাঁদের জন্য বিদ্যালয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট দুটি একতলা পাকা ভবন ছিল। একটি ভবনের একটি কক্ষ শিক্ষকেরা ব্যবহার করেন এবং অপর কক্ষে পাঠদান চলমান রয়েছে। আর অপর ভবনটি ভেঙে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট তিনতলা ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন বলে, বালুর মধ্যে বেঞ্চ বারবার দেবে যায়, লেখা যায় না। বন্ধুরা বালু নিয়ে খেলা করে, বালু ছোড়াছুড়ি করে। খোলামেলা রুমে ঠান্ডা বাতাস লাগে।
শাহাদত হোসেন নামের একজন অভিভাবক বলেন, ভবনের ছাদে ও সামনে নির্মাণসামগ্রী রাখা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ছাদে ওঠে, দৌড়াদৌড়ি করে। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে, সেই ভয়ে থাকেন।
প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র একটি। নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত দুই বছর পার হলেও কাজ শেষ হয়নি। বাধ্য হয়েই নির্মাণাধীন ভবনে বালু ফেলে, বাঁশ ও টিনের বেড়া দিয়ে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পান্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় ৮৪ লাখ ২৯ হাজার টাকায় ভবনটি নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি চুক্তিবদ্ধ হয় জেলার মিরপুর উপজেলার মশান এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাগর কনস্ট্রাকশন। ওই বছরের ২৮ জানুয়ারি কাজ শুরু হয়ে ২৭ অক্টোবর ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু হয়নি। ঠিকাদার পুনরায় আবেদনের মাধ্যমে কাজের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ১৫ মার্চ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বর্ধিত সময়ে গেল বছরে জুন মাসে শেষ হয়েছে। কিন্তু ভবনের কাজ হয়েছে প্রায় ৮০ ভাগ।
ঠিকাদার আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, পুরোনো ভবন অপসারণে ১৩-১৪ মাস সময় নষ্ট হয়েছিল। তারপর মহামারি করোনা ও মালামালের অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজে দেরি হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজ হবে।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার শরিফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েও ফল পাওয়া যায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, নির্মাণকাজে নতুন করে সময় বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। দ্রুত কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। কাজ বিলম্ব করায় জরিমানা ফি কাটা হবে।