চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের হেল্প ডেস্ক বন্ধ, সেবাপ্রার্থীদের ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৩ পিএম, ২৫ মে,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১০:২৩ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বছরখানেক আগে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই হেল্প ডেস্ক চালু করে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডে আসা সেবাপ্রার্থীদের সহজে সেবা দেয়া ও হয়রানি রোধে চালু হয় এ ডেস্ক। আধুনিক কাচঘেরা ঘরে শুরু হয় এ সেবা কার্যক্রম। মাস দুয়েকের বেশি সময় এই ডেস্কের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। এতে নানান ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
তবে বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ। লোকবল সংকটে কর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হেল্প ডেস্ক বন্ধ থাকায় সেবা নিতে আসা মানুষগুলো পড়ছেন ভোগান্তিতে। কোথায় যাবেন, কী করবেন, কার কাছে যাবেন- এসব ঝামেলা সামলাতে গিয়ে পড়ছেন দালালচক্রের ফাঁদে- এমনটাই দাবি তাদের।
গত ১৮ মে দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষা বোর্ডের মূল ভবনে প্রবেশদ্বারের সামনেই স্থাপন করা হয়েছে হেল্প ডেস্কটি। স্বচ্ছ কাচে ঘেরা আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে সাজানো হয়েছে ডেস্কটি। হেল্প ডেস্কের চারদিকে সেবাপ্রার্থীদের বসার জন্য ভালোমানের চেয়ারও রাখা হয়েছে। আর ডেস্ক ঘিরে স্বচ্ছ কাচে টাঙানো নানান বিষয়ের নোটিশ দেখে বিভিন্ন ফরমপূরণ করছেন ১০-১৫ জন সেবাপ্রার্থী। কেউ লিখছেন আবেদন। কিন্তু ডেস্কের ভেতরে থাকা দুটি চেয়ারই খালি। সুদূর বান্দরবান থেকে সনদে নামের বানান সংশোধন করতে এসেছেন আলী হোসেন। প্রথমবার এসেছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে। কোন কক্ষে গেলে তার প্রয়োজনীয় সেবা পাবেন সেটাও তিনি জানেন না। জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বোর্ডের সামনে চোখ ধাঁধানো হেল্প ডেস্ক রয়েছে। কিন্তু সেবা দেওয়ার কিংবা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার কোনো লোক নেই।
আফজাল নামে আরেক সেবাপ্রার্থী বলেন, ‘ওপরে চাকচিক্য দেখা গেলেও শিক্ষা বোর্ডের সেবায় তেমন চাকচিক্য নেই। এখানে বিভিন্ন চেয়ারে থাকা কর্মচারীরা সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারও করেন না। অনেক সময় উচ্চবাচ্য করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে আসা এক যুবক জানান, দিদার নামে এক কর্মচারীর কাছে এসেছেন তিনি। তার মাধ্যমে কন্ট্রাক্টে (টাকা) সনদ সংশোধন করাচ্ছেন। তবে কত টাকা কন্ট্রাক্ট হয়েছে, সে তথ্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। দিদার নামের ওই কর্মচারী রাজু নামেও পরিচিত। এ সেবাপ্রার্থী বলেন, এখনো সংশোধিত সনদ হাতে পাইনি। দ্রুত সংশোধিত সনদ হাতে না পেলে আমার সমস্যা হবে। তাই কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না। জানতে চাইলে অফিসের সামনে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আনসার সদস্য বলেন, হেল্প ডেস্কে এখন কেউ বসেন না। প্রায় মাস দুয়েক আগে হেল্প ডেস্ক থেকে কিছু ডকুমেন্ট হারিয়ে যায়। তখন ডেস্কের সবাইকে ওপরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারপর থেকে হেল্প ডেস্কের সেবা একেবারেই বন্ধ। এখন ডেস্কে কাউকে বসানো হয় না।
এ বিষয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব আবদুল আলীম বলেন, ঢাকায় বিজি প্রেসে (বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রেস) প্রশ্নপত্র ছাপানো ও ট্রাংক বহনের জন্য বোর্ডের ৩০ জনের অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাই কর্মচারী। কারণ প্রশ্নপত্র বহন খুবই স্পর্শকাতর ও গোপনীয়। যে কারণে বাইরের লোকদেরও এসব কাজে নেয়ার সুযোগ নেই। এমনিতেই বোর্ডের জনবল সংকট রয়েছে। যে কারণে হেল্প ডেস্কে সাময়িকভাবে কেউ বসছে না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড যখন চালু হয়েছিল তখন পরীক্ষার্থীর যে সংখ্যা ছিল, এখন তা বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। এতে সেবাপ্রার্থীর চাপও নিয়মিতভাবে বাড়ছে। কিন্তু বোর্ডে কর্মরত অনেকে অবসরে গেছেন। কিছু কিছু পদ খালি আছে। যে কারণে জনবল সংকট বাড়ছে। জনবল সংকটসহ নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সেবাপ্রার্থীদের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এখন প্রতি সপ্তাহে এক হাজারের অধিক সেবাপ্রার্থীর নাম, বয়স সংশোধন করে দিচ্ছি। এ সেবা আগে ছিল না। বোর্ডে আসা সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি কমাতে এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি হেল্প ডেস্কটি চালু করা হয় বলে জানান তিনি। তবে হেল্প ডেস্ক থেকে ডকুমেন্ট হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের তথ্য নেই। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করি।