কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী বহিষ্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৭ পিএম, ৮ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৬ পিএম, ৯ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও চারজনকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাময়িক বহিষ্কৃত চারজন, চিঠি দিয়ে সতর্ক করা একজনসহ মোট আটজনের হলের আসন বাতিল করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
গতকাল সোমবার (৭ মার্চ) বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ূন কবীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সাময়িক বহিষ্কারের তালিকায় থাকা চারজন হলেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সামিউল হক হিমেল, ফোকলোর বিভাগের আবু নাঈম আবদুল্লাহ, লোকপ্রশাসন বিভাগের মোমেন সরকার ও একই বিভাগের তানভির আহমেদ তুহিন। কেন তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, জানতে চেয়ে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, সাময়িক বহিষ্কৃত হওয়ায় তাঁদের হলের আসন বাতিল করা হয়েছে।
একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের আবু সোলায়মান নাঈম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সারজীল হাসান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের জোবায়ের আহমেদ সাব্বির ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মো. পলাশকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই চারজনের মধ্যে আবু সোলায়মান নাঈমের হলের আসন বাতিল করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষের তিন শিক্ষার্থীর আসন বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। ওই তিনজন হলেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছনিক মিয়া, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মোজাহিদ হোসেন সজীব ও পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের সৌরভ হোসেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। ওয়ালিদ নিহাদ ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে রাজি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসানের অনুসারীরা এ নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
নির্যাতনের বর্ণনায় ওয়ালিদ নিহাদ জানিয়েছিলেন, রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর জোর করে তাঁর ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই ভিডিওতে বলতে বাধ্য করা হয়, ২০২৩ সালে বিএনপি বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে ছাত্রলীগ করা কোনো শিক্ষার্থী কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবেন না।
ওয়ালিদ নিহাদকে মারধরের এ ঘটনার বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুখর হয়ে ওঠেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অনশনের মতো কর্মসূচিও পালন করেন। তবে ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর দেশের বাইরে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেছিলেন, উপাচার্য দেশে ফিরে এলে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত রোববার উপাচার্য দেশে ফেরেন। পরে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।