ঢাবির ‘গেস্টরুমে’ ছাত্রলীগের নির্যাতনে জ্ঞান হারালেন শিক্ষার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৫ পিএম, ২৭ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪৬ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের কথিত ‘গেস্টরুমে’ নির্যাতনের শিকার হয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন।
গতকাল বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গেস্টরুমে না আসায় ডেকে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী আরও অসুস্থ হয়ে যান। পরে গণরুমে পাঠালে সেখানে তিনি জ্ঞান হারান। এ বিষয়ে হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন আখতার হোসেন।
লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্তরা হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোহান, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিন ইসলাম, সাইকোলজি বিভাগের ওমর ফারুক শুভ। তারা সবাই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, অভিযুক্তরা হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী আবু ইউনুস ও রবিউল ইসলাম রানার অনুসারী। ইউনুস ও রানা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
জানতে চাইলে আবু ইউনুস বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। হল প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে, যেন দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।’
এ ব্যাপারে রবিউল ইসলাম রানা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার।’
হল সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ১০টায় তথাকথিত গেস্টরুম ছিল। অন্যরা গেস্টরুমে এলেও আখতার অসুস্থ থাকায় গেস্টরুমে আসেননি। রাজু, কাজল, ইয়ামিম, সাইফুল, রোহান ও শুভ তাকে ডেকে গেস্টরুমে না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি অসুস্থতার কথা জানান। এর উত্তরে অভিযুক্তরা তাকে বলেন, ‘কিসের অসুস্থ তুই? তোকে বিকেলে কলাভবনের সামনে দেখলাম!’ কথা বলার সময় তার হুডির টুপি মাথায় থাকলে, তাকে গালি দিয়ে বলে, ‘তুই গেস্টরুমের কালচার জানস না! তুই জ্বলন্ত লাইটের দিকে আধা ঘণ্টা তাকিয়ে থাকবি।’ ১০ মিনিট তাকিয়ে থাকার পর সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ব্যাচমেটের সাহায্যে গণরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আখতার অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তার ইসিজি, কোভিড টেস্ট ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হলে পাঠিয়ে দেন।
জানতে চাইলে আখতার জানান, তার বাবা সাতদিন আগে স্ট্রোক করেছেন এবং ছোট ভাই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। যার কারণে তিনি আগে থেকেই মানসিক ট্রমার ভেতরে ছিলেন। পরে এ বিষয়ে হল প্রভোস্টকে জানালে তিনি নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী আখতারের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান থাকবে সবকিছুতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার।’