জাবিতে পাস করলেই পোষ্য কোটায় ভর্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৩ পিএম, ২৭ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২৪ এএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলেই পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। আবার অকৃতকার্য হয়েও পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তান ও ভাই-বোনরা পোষ্য কোটার সুবিধা ভোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য পাস নম্বর ৪০ শতাংশ হলেও পোষ্য কোটার শিক্ষার্থীদের পাস নম্বর কমিয়ে ৩৩ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটার শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নির্ধারণ থাকলেও পোষ্য কোটার শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অধ্যাদেশে পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর আবাসিক হলে থাকার নিয়ম নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাসহ প্রায় দেড়শত পোষ্যর হলে অবস্থান করার অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুরুতে পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে পোষ্যদের জন্য লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল ৪০ শতাংশ। কিন্তু ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে পাস নম্বর কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। আবার ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে তা আরও কমিয়ে ৩৩ শতাংশ করা হয়। এছাড়া ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটাধারী শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক বিষয়ে পাস নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি/নাতনি কোটায় ১৪৪ জন, উপচার্যের কোটায় ২০ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অনগ্রসর সম্প্রদায় কোটায় ২৫ জন, দলিত সম্প্রদায় কোটায় ৫ জন, প্রতিবন্ধী কোটায় ১৫ জন এবং খেলোয়াড় কোটায় ৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেন। তবে পোষ্য কোটাধারীদের ক্ষেত্রে এ রকম কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই।
পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকায় দেখা যায়, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে পোষ্য কোটায় ৬৭ জন, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ৮৫ জন, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ৮৯ জন, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ৪০ জন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ৬৮ জন, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ৪১, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৭৪ জন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৪১ জন ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৬২ জনকে ভর্তি করানো হয়। এছাড়া সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৫৮ জনকে ভর্তির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির অধ্যাদেশে বলা আছে, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তান ও ভাই-বোনদের বাসায় থাকিবার অনুমতি প্রাপ্তিসাপেক্ষে ভর্তি করা যাইতে পারে। তাদের হলে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।' তারপরও পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাসহ অন্তত দেড়শত শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য ১৪ জন শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির জন্য উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছেন অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও পোষ্য কোটাধারীরা ভর্তির সুযোগ পান বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
গত ১৯ জানুয়ারি উপাচার্যকে পাঠানো এক চিঠিতে তারা বলেন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১৪ জন পোষ্য কোটাধারী শিক্ষার্থী সামান্য নম্বরের জন্য কৃতকার্য হতে পারেনি। অকৃতকার্য পোষ্যদের ভবিষ্যত নিয়ে তাদের অভিভাবকরা খুবই হতাশাগ্রস্থ। অতীতে অকৃতকার্য পোষ্যদের ভর্তির বিষয়ে একাধিকবার বিবেচনা করা হয়েছে। তাই এবারও অকৃতকার্য পোষ্যদের ভর্তির সুযোগ প্রদানের জন্য আবেদন করছি।
এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক তাসবিবুল গনি নিলয় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকার ফলে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকায় ভর্তি বাণিজ্যের সুযোগও তৈরি হয়। এছাড়া পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃতদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়মবহির্ভূতভাবে হলে অবস্থান করে ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধার সমতা না থাকলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বিঘ্নিত হয়। তাই যারা কৃতকার্য হতে পারে না, তাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। তাদের নিয়ে শ্রেণিকক্ষে যেমন অসুবিধায় পড়তে হয়, তেমনি পরীক্ষা থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকান্ডেও সমস্যায় পড়তে হয়। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে তাদের নূন্যতম যোগ্যতাও তো থাকতে হবে। ইতোপূর্বে সেই যোগ্যতাগুলোও শিথিল করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করায় সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে আসন নির্ধারণ করা নেই। তাই পোষ্য কোটাধারী শিক্ষার্থীরা পাস করেলেই তাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। এ বছর অকৃতকার্য ১৪ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়ন আবেদন করে। তবে মিটিংয়ে তাদের ভর্তির সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।