শাবিতে পঞ্চম দিনের অনশন চলছে, শিক্ষার্থীদের পাশে শিক্ষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২০ পিএম, ২৩ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৭ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বহু বিষয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি উপচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ফলে দাবি আদায়ে আজ রোববার (২৩ জানুয়ারি) পঞ্চম দিনের মতো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
অনশনে ইতোমধ্যে ১৬ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অসুস্থতার সংখ্যাটা বাড়বে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি সংগঠন শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আলোচনায় উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি জানান, ভিডিও কনফারেন্সে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আইনগত ও একাডেমিক সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য তিনি সেটি দেখবেন। মন্ত্রী আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন তারা যেন অনশন ভেঙে আন্দোলন থেকে সরে যান।
কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কোনো সমাধান না আসায় রোববার অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষামন্ত্রীকে লিখিত আকারে দাবি-দাওয়া জানাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা আলোচনা করতে আগ্রহী তবে অনশন ভাঙবেন না। সবকিছু ঠিক থাকলে কাল দুপুরে এ বিষয়ে তারা বিফ্রিং করবেন। মোট ২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর ৭ জন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষকদের একটি সংগঠন। এ সময় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের পদত্যাগের দাবিও জানান শিক্ষকরা। ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হতে চলেছে। এমতাবস্থায় শিক্ষক হিসেবে আমরা শুরু থেকেই চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ করছি যে, দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের আক্রমণের ব্যাপারে কোনো অফিশিয়াল ব্যাখ্যা প্রকাশ্যে না দিয়ে কালক্ষেপণের মাধ্যমে অনশনরত শিক্ষার্থীদের জীবন চরম সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।’
বিষয়টি হতাশাজনক উল্লেখ্য করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা চরম হতাশার সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, এ সংক্রান্ত একটি তদন্তকমিটি গঠিত হলেও বাস্তবে উল্লিখিত তদন্ত কমিটি কোনোরকম অগ্রগতি করেছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে না। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে-যাওয়া যে কোনো ঘটনার দায়ভার কোনোভাবেই প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এড়াতে পারেন না। এমতাবস্থায়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যাবতীয় বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ব্যক্তিদের সবার অফিশিয়াল ব্যাখ্যা জনসমক্ষে উপস্থাপন করার দাবি জানাই।’
একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের পদত্যাগের জোর দাবি করেন ওই সংগঠনের শিক্ষকরা।
গত ১৩ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তার পদত্যাগ বা সমস্যা সামাধানের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগে রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে উপাচার্য পুলিশ ডেকে আনেন তাকে উদ্ধার করতে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
১৯ জানুয়ারি বিকেলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করে ২৩ জন শিক্ষার্থী। একই দাবিতে পরদিন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকশো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করেন। অনশনে অসুস্থ ১৬ শিক্ষার্থী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া বাকিদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।