কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু, ছাত্রলীগের সা'সম্পাদকসহ চার শিক্ষার্থীকে চিরতরে বহিষ্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৪ পিএম, ৫ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:১২ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সেলিম হোসেনের (৩৮) মৃত্যুর ঘটনায় কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ানসহ চার শিক্ষার্থীকে চিরতরে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। এ ছাড়া আরও ৪০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। একই সঙ্গে আগে সাময়িক বহিষ্কার করা ৯ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির করা সুপারিশ অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কাজী সাজ্জাদ হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও তথ্য শাখার মুখপাত্র রবিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। সাত শিক্ষার্থীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে; তবে হলে তাঁরা কখনো থাকতে পারবেন না। একজনকে এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ২২ জনকে এক সেমিস্টার করে বহিষ্কার এবং অন্য ১০ জনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে শেষ ৩২ জনের শাস্তি এখনই কার্যকর হবে না। তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হবে।
এর আগে আজ বুধবার সকালে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ সিন্ডিকেট বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সেলিম হোসেনের (৩৮) মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ৪৪ শিক্ষার্থীর কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পর্যালোচনা এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য ওই সভা বসে। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা মুলতবি করা হয়।
২০১৪ সালে কুয়েট সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত ছাত্র শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা রাখে একাডেমিক কাউন্সিল।
কুয়েট ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যসচিব ও ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যাপক ইসমাঈল সাইফুল্যাহ বলেন, মঙ্গলবার প্রায় আট ঘণ্টা সভা করেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বুধবার ওই সভা আবারও বসে। সভা থেকেই সিদ্ধান্ত এসেছে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৭৬তম জরুরি সভায় কর্তৃপক্ষের গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ২৮ ডিসেম্বর প্রশাসনের কাছে ৯টি সুপারিশসহ ৪৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নাম আসা ৪৪ শিক্ষার্থীকে ২৯ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অপরাধের প্রকৃতি উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ছাত্র শৃঙ্খলাবিধি অনুয়ায়ী কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তাঁদের ৩ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবাই লিখিত জবাব দেন।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত বিষয়ে কাল ৬ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে সাধারণ সভা করবে শিক্ষক সমিতি। ওই সভায় শিক্ষক সমিতি ক্লাসে ফেরা না ফেরাসহ তাদের পরবর্তী অবস্থানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সেলিম হোসেন ক্যাম্পাসের কাছের ভাড়া বাসায় মারা যান। মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে, মৃত্যুর দিন দুপুরে বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অধ্যাপক সেলিমকে বিভাগে তাঁর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর ওপর মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়।
এ ছাড়া কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ কয়েকজন ছাত্র তাঁদের মনোনীত প্রার্থীকে ডাইনিং ম্যানেজার করার জন্য সেলিম হোসেনকে নিয়মিত চাপ দিয়ে আসছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, এটি হত্যাকাণ্ড। অধ্যাপক সেলিমের পরিবারও এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছে।
ওই শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই ছুটি দুই দফা বাড়িয়ে ৭ জানুয়ারি হল এবং ৯ জানুয়ারি ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।