খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ানোর কৌশল
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৪৯ পিএম, ৩০ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাঙালির রান্নাঘরের দিকে নজর দিলে পাকা রাঁধুনির হিসেব করে কুলানো যাবে না। এ রাঁধুনিরা যেমন জানে রকমারি সুস্বাদু খাবার রান্না করতে; তেমনই তারা খাবারের পুষ্টিগুণের দিকেও ইদানীং বেশ সচেতন। তবে কয়েকটি সহজ কৌশলের মাধ্যমে দৈনন্দিন খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অনেকটাই বাড়িয়ে নেয়া যায়। একইসাথে করা যায় খাদ্যের অপচয় রোধ।
এখানে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ানোর জন্য আমার জানা কয়েকটি কৌশল তুলে ধরেছি-
সুপের জন্য স্টক বানানোর সময় যে মসলা ও সবজি ব্যবহার করা হয়, যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, আদা খোসাসহ সেদ্ধ করুন। সবজির খোসায় এবং খোসার ঠিক নিচেই বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলসমূহের পরিমাণ বেশি থাকে; সাধারণ রান্নার সময় আমরা যা ফেলে দিই। যেসব সবজির ডাটা বা পাতা খাওয়া হয় না; সেগুলোও দিতে পারেন স্টক বানানোর সময়।
বিভিন্ন সবজির খোসা ফেলে না দিয়ে, সেটি দিয়ে ভর্তা বা ভাজিও বানাতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে লাউয়ের খোসার ভর্তা বা ভাজি করা যায়। আলু খোসাসহ রান্না করতে পারেন। বিভিন্ন কাঁচা ফল বা সবজি যেমন- শসা খোসাসহ খেতে পারেন। কমলা বা লেবুর খোসা গ্রেটার দিয়ে ঝাঁঝরি করে বিভিন্ন সালাদ তৈরিতে দিতে পারেন। এ থেকে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি পেতে পারেন ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়াম।
ভাত, পাস্তা বা নুডলস রান্না করার সময় পানির পরিবর্তে মাছ, মাংস বা সবজির স্টক ব্যবহার করুন। এতে খাবারে শর্করার সাথে সাথে প্রোটিন, কিছু কিছু ভিটামিন ও মিনারেল নিশ্চিত করা যাবে। যে বাচ্চারা ঠিকমতো খেতে চায় না, তাদের পুষ্টি জোগাতে এটি একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।
খিচুড়ি রান্নায় কয়েক রকমের ডাল ব্যবহার করুন। এক ধরনের ডাল না মিশিয়ে কয়েক রকম ডাল মেশালে সবগুলো ডালের অসম্পূর্ণ প্রোটিনের মিশ্রণে পাওয়া যাবে সম্পূর্ণ প্রোটিন। খিচুড়ির সাথে মেশাতে পারেন বিভিন্ন সবজিও। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মিষ্টি কুমড়া ও আলুর খিচুড়ি বা গাজর, বরবটি, ফুলকপি বা ব্রকলির খিচুড়িও চমৎকার। সবজি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের পছন্দ এবং মৌসুম বিবেচনা করা ভালো। পোলাও রান্নার সময় পাইননাট বা পছন্দমতো বাদাম, কিসমিস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। বানাতে পারেন সবজি পোলাও।
রুটিতে ডাল বা মটরশুঁটি পুর হিসেবে ব্যবহার করলে খাবারটি শর্করার পাশাপাশি প্রোটিন সমৃদ্ধ হবে। পরিবারের সদস্যরা পছন্দ করলে বানাতে পারেন- ক্রেপ, যা প্যানকেকের মতো একটি খাবার। এটি বানানো হয় দুধ, ডিম ও আটা দিয়ে। এতে মিষ্টি (চকলেট, জ্যাম, সিরাপ, বিভিন্ন ফল) বা ঝাল (ছোলা, টমেটো, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, পালংশাক ইত্যাদি) পুর দেয়া যায়। নাস্তায় ফ্রেঞ্চ টোস্ট, তেল ও সিরাপে হাল্কা ভাজা ফলও রাখতে পারেন।
তাজা ফলের সালাদে শুকনা ফল, ফলের বীজ ও বাদাম ব্যবহার করতে পারেন। শুকনা ফল ও বাদাম অন্যান্য সালাদেও যোগ করা যায়। মিল্কসেক বা জুস বানানোর সময় খেজুর, সূর্যমুখীর বীজ ও বাদাম যুক্ত করা যায়। ভাতের মাড় ফেলে না দিয়ে সেটি স্যুপ হিসেবে খাওয়া যায়। এতে পছন্দমতো কিছু সেদ্ধ সবজি ও সেদ্ধ ডাল বা চিংড়ি মাছ যোগ করতে পারেন। সবজি সংরক্ষণের জন্য সেদ্ধ (ব্লাঞ্চিং) করার পর পানি রয়ে গেলে সেটিও স্যুপ হিসেবে খেতে পারেন। খাওয়ার সময় একটু কালো গোলমরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে নিতে পারেন। রান্নায় বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উপাদান ব্যবহারের পাশাপাশি সেগুলো যোগ করতে পারেন শরবত ও চায়ে। যেমন- লেবুর শরবতে পুদিনা পাতা কুঁচি দিতে পারেন অথবা বানাতে পারেন পুদিনা পাতার চা, যা খুবই তৃপ্তিদায়ক ও সুস্বাদু।
ডাল বাগার বা পাঁচমিশালি সবজি রান্নায় পাঁচফোড়ন ব্যবহার করতে পারেন। পাঁচফোড়নের উপাদান- মেথি, কালোজিরা, মৌরি, জিরা ও সর্ষে প্রতিটির আছে বহু গুণ। যেমন- জিরা হজমে সহায়ক, মেথি চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং মৌরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডিমে পালংশাক, ক্যাপসিকাম, মাশরুম ইত্যাদি যোগ করে ভাজতে পারেন। এতে শাক-সবজির পুষ্টিগুণগুলো পাওয়া যাবে।
এসব কৌশল প্রয়োগ করে খাদ্য থেকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। এতে একদিকে অর্থ সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে মুখরোচক খাদ্য তৈরি করা যায় এবং স্বাদেরও পরিবর্তন হয়। এ ক্ষেত্রে যাদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা আছে, তারা অবশ্যই খাদ্যগ্রহণে বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলে খাদ্য বাছাই করবেন।