প্রচলিত যে খাবারে হতে পারে আকস্মিক মৃত্যু!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:২৯ পিএম, ৬ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৪৩ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাংলাদেশিরা মাছ, মাংসসহ নানা ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূল খেয়ে থাকে। তবে এসব খাবারের মধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা বিশেষ অবস্থায় খেলে শরীরে ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণও।
পৃথিবীতে এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে তাৎক্ষণিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয় না, তবে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আসুন জেনে নেই কোন খাবারগুলো আমাদের তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
১. পটকা মাছ : এ মাছটি পাফার ফিশ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ, চীন, জাপান, কোরিয়া সহ বেশ কিছু দেশের মানুষের কাছে এই মাছটি বেশ জনপ্রিয়। এই মাছের বিশেষ অংশে থাকা বিষাক্ত নিউরো টক্সিন যা সায়ানাইডের চেয়েও বেশি ক্ষতি করতে পারে আমাদের শরীরে। সঠিক উপায়ে এটি অপসারণ না করে রান্না করতে পারলে এ মাছটি খাওয়ার ৩ ঘণ্টার মধ্যে আপনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারেন কিংবা আপনার হতে পারে নিশ্চিত মৃত্যু।
২. মাশরুম : নানা জাতের মাশরুমের মধ্যে ১০ ধরনের মাশরুম বাংলাদেশের বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলামের মতে, বুনো মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা বলে পরিচিত মাশরুম লিভার ও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। বুনো মাশরুম দেখতে অনেকটা ছাই রঙের হয়ে থাকে।
৩. খেসারি ডাল : অনেকেই মুগ ও মসুর ডালের পাশাপাশি খেসারি ডালও খেতে পছন্দ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেসারি ডালে থাকা বোয়া নামে অ্যালানাইন অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা শরীরে বিষাক্ত নিউরোটক্সিন তৈরি করে। এ অ্যাসিড নিউরো ল্যাথারিজম বা স্নায়ুবিক পঙ্গুত্ব তৈরি করতে পারে। এ রোগের লক্ষণ হঠাৎ করে দেখা দেয়। বেশি দিন ধরে এই ডাল খেলে হাঁটতে অসুবিধা বা অসহ্য যন্ত্রণা বা পা অবশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৪. আলু : আলু খাওয়া পুষ্টিকর হলেও লাল রঙের ছোপ পড়া আলু বা শিকড় গজিয়ে যাওয়া আলু খাওয়া মোটেও শরীরের জন্য ভালো নয় বিলে মনে করছেন পুষ্টিবিদরা। এই অবস্থায় আলুতে গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড নামের এক উপাদান তৈরি হয়।
বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ এ বিষয়ে বলেন, এই গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড শরীরে প্রবেশ করলে ডায়রিয়া ও মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ৩ থেকে ৬ মিলিগ্রাম এই উপাদান প্রবেশ করলে কেউ চলে যেতে পারেন কোমায়, অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া সবুজ ছোপ পড়া আলুর মধ্যে থাকা কারসিনোজেন নামের উপাদান শরীরে প্রবেশ করলে তা ক্যানসারের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৫. টমেটো : লাল টমেটো আমাদের শরীরে পুষ্টি জোগালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাঁচা টমেটো শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। কেননা টমেটো গাছের পাতা ও কান্ডে অ্যালকালাই থাকে। যা পাকস্থলির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। টমেটো কাঁচা অবস্থায় এই উপাদানটির উপস্থিতি থাকায় কাঁচা টমেটো কাঁচা বা ভালো করে রান্না করে না খাওয়াই ভালো বলে মনে করছেন তারা।
৬. কাজু বাদাম : মিষ্টি স্বাদের কাজু বাদামে পুষ্টি মিললেও তিতা স্বাদের কাজুবাদাম খাওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। কারণ তিতা স্বাদের কাজু বাদামে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামের বিষাক্ত উপাদান থাকে। যা বিষের আরেক নাম।
৭. আপেলের বিচি : আপেলের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না। তবে এর বিচি কোনো অবস্থায় খাবারে বা জুসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে তা মানুষকে মেরে ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় সায়ানাইড বা মারাত্মক বিষ তৈরি করতে পারে।
৮. মধু : মধুর উপকারিতা অনেক। তবে পাস্তুরিত করা হয়নি এমন মধু শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এমন মধু খেলে ঘুমের ঘোর আসা, দুর্বল অনুভব হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাঁচা মধুতে অনেক বিষাক্ত উপাদান এর জন্য দায়ী। এমন মধুতে মৌমাছির চাক বা মৌমাছির কোনো অংশ থেকে গেলে তা আরও বিপদজনক হয়ে ওঠে। তাই প্রক্রিয়াজাত মধু না খেয়ে কাঁচা মধু খেলে এটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েও উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
৯. মটরশুঁটি ও শিমের বিচি : এই খাবার খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। তবে বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ এ বিষয়ে বলেন, এই দুটি খাবারে ফাইটোহেমাগ্লুটিনিন নামের পদার্থ থাকে যা অনেকের শরীরে ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই এই সমস্যা এড়াতে এসব খাবার রান্নার আগে তা ১৫ মিনিট পানিতে সিদ্ধ করে নিয়ে গরম পানি ফেলে দিতে হবে। তারপর এই খাবার রান্না করলে শরীরে কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়।
১০. কামরাঙা : এটি একটি পুষ্টিকর ফল হলেও পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা মনে করেন, যাদের কিডনি বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের এই ফলটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
১১. কচু : সবজি ও শাক হিসেবে এই খাবারটি বেশ জনপ্রিয় অনেকের কাছেই। তবে পুষ্টিবিদরা বলছে, এই গাছ যদি ছায়ায় জন্ম ও বড় হয় তবে এর মধ্যে এমন একটি কম্পোনেন্ট তৈরি হয় যা অনেকেরই মধ্যে অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। এ কারণে কচু খেলে অনেকেরই চুলকানি হয়, গলা ফুলে যায়। এর কারণ হিসেবে কচুতে থাকা অক্সালেটকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। যা অপ্রত্যাশিতভাবে অনেককেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। তাই অক্সালেটকে নিষ্ক্রিয় করতে কচুর সঙ্গে অবশ্যই লেবু খাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
১২. ডিম : পুষ্টি সমৃদ্ধ এই খাবারটি অনেকে কাঁচা অবস্থায় খান, আবার কেউ আধা সিদ্ধ, ডিমের এক পাশ পোঁচ করে খেতে পছন্দ করেন। এভাবে ডিম খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই ক্ষতির প্রভাব আরও বেশি।
ক্যানড বা প্রক্রিয়াজাত খাবারও এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আপনার শরীরে ক্ষতি তৈরি করতে শুরু করে। এছাড়া শুঁটকি মাছ তৈরিতে ব্যবহৃত সালফারও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সূত্র : বিবিসি