নিয়মিত কলা খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৩৫ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১১ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কলা সহজলভ্য ফল হওয়ায় কলার প্রতি মানুষের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। গ্রামে-শহরে সবখানেই এটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কলার চাষ করা হয়। কলা বহুগুণে সমৃদ্ধ। বিদেশি দামি ফলের প্রতি না ঝুঁকে কম দামে দেশি ফল খাওয়াই ভালো। ছোট-বড় সকলেরই প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যের জন্য কলা খুবই উপকারী। কলায় ক্যালোরি যেমন বেশি ঠিক তেমনই এতে থাকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণও বেশি। যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। সবরি, মর্তমান, সাগর, চাঁপা - সব পাকা কলাই কমবেশি সমান পুষ্টিকর। শরীরে শক্তি জোগাতে কলা অত্যন্ত উপাদেয় একটি ফল।
পাকা কলাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ যেমন- পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ফোলেট, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন-বি রয়েছে। এগুলো শরীরকে কর্মক্ষম ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খাওয়া অভ্যাস করলে শরীর বেশ সতেজ থাকে। নিয়মিত কলা খেলে তা হজমে সাহায্য করে।
কলার আরেকটি অন্যতম গুণ হচ্ছে এটি ক্যানসার প্রতিরোধ করে। আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্সের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যদি খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার রাখেন তাহলে তা কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
তাছাড়া ভিটামিন সি ‘সম্ভবত’ খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। আপনার একদিনে যে পরিমাণ ভিটামিন সি প্রয়োজন একটি কলায় তার প্রায় ১৭ শতাংশ থাকে। এই গবেষণা শতভাগ সন্তোষজনক নাও হতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে তা আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না।
স্ট্রোক, কিডনি, মস্তিষ্কে সমস্যা ও ব্লাড প্রেসার কমাতে চিকিৎসকরা সবসময় পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কলা পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ। আপনার একদিনে যতোটুকু পটাশিয়াম দরকার একটি গড়পড়তা আকারের কলায় তার ১২ শতাংশ থাকে। এমনকি হার্ভার্ড স্কুল অব হেলথও ব্লাড প্রেসার কমানোর জন্য পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
কলা ফাইবার সমৃদ্ধ। অর্থাৎ, এটি আশযুক্ত খাবার। আপনার একদিনে যতোটুকু ফাইবার প্রয়োজন একটি গড়পড়তা আকারের কলায় তার ১২ শতাংশ থাকে। ফাইবার তথা আঁশযুক্ত খাবারের অনেক উপকারিতা আছে।
কলা কলেস্টোরেলের মাত্রা কমায়, বাওয়েল মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখে, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে ও শরীরের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে এটিই আপনার জন্য ভালো সমাধান। তাছাড়া কলা খেলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণও হয়।
কোনো কাজ শুরুর আগে বা কাজের মাঝখানে কলা খেয়ে নেন তাহলে তা স্পোর্ট ড্রিংকের মতোই কাজ করবে। আপনার শরীরে চঞ্চলতা ফিরিয়ে আনবে ও বেশি পরিমাণে কাজ করার শক্তি তৈরি হবে। কলায় যে পরিমাণ শর্করা আছে তা তা দ্রুতই এনার্জিতে পরিবর্তন হয়। তাছাড়া পটাশিয়াম ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যারা হাড় শক্ত করতে চান কলা তাদের জন্য খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়া কলা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কলা হৃৎপিন্ড সচল রাখতে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
কলা এমন এক ফল যা প্রতিদিনের জীবনেই ব্যবহার করা হয় না, একাধিক খাবারের স্বাদ বাড়াতেও ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে মাফিন এবং কেক। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার। কাঁচা কলায় প্রতিরোধী স্টার্চও থাকে। তবে তা হজম হয় না। এই দুই ধরনের ফাইবার শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। দিনে দুটি কলা খেলেও রক্তচাপের মাত্রা কমে যায়।
কলার খোসাও উপকারী। ব্রণ এবং ত্বকের সংক্রমণের সমস্যার থাকলে নিয়মিত পাঁচ মিনিট কলার খোসা ম্যাসাজ করা যায়। চোখে অনেকেরই ডার্ক সার্কেল থাকে। অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে খোসা মিশিয়ে চোখের নিচে সারা রাত বা এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে।
সেরোটোনিন মুড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সেরোটোনিনের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলে মানসিকভাবে স্থিতিশীল এবং মনোযোগী বোধ করা সম্ভব। কলা এই নিউরোট্রান্সমিটার বাড়াতে সাহায্য করে। কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেশিয়াম যা ভালো ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। কলা পাকস্থলির অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাকস্থলির আলসার রোধে কাজ করে। সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য কলা খাওয়া খুবই উপকারী। দুর্বলতা কাটাতে কাজ করে এবং রক্তের শর্করার সামঞ্জস্য বজায় রাখে।