স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের মুখোশ উন্মোচনের দাবি পরশের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৩ এএম, ৩০ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:১৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভায় এ দাবি করেন তিনি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি ছিলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন- একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুন। সঞ্চালনা করেন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, শেখ জামাল ২৮ এপ্রিল, ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এমন একটা শুভক্ষণে, যার দুই সপ্তাহ পরে তরুণ মুজিব মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন। অপরদিকে ঠিক এমন একটা দুঃসময়, যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় তার জন্মের মাত্র ৩২ দিন পর এবং যখন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে সরকারি মিন্টু রোডের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শেখ জামালও গৃহবন্দি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করাই শেখ জামালের একমাত্র লক্ষ্য ও প্রত্যয় হয়ে ওঠে। বন্দিজীবন থেকে পালিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
তিনি বলেন, শেখ জামালের গৃহবন্দি অবস্থা থেকে যুদ্ধে পালিয়ে যাওয়ার একটা বিশেষ রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল। কারণ রাজনৈতিক দূরদর্শীসম্পন্ন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পাল্টা তার সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তুললেন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। সারা বিশ্বে আলোড়ন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবের ছেলেকে গুম করেছে। শেখ জামালের পালিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণের খবরটা কৌশলগত কারণেই একেবারে চেপে গিয়েছিল প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও, কারণ এই ইস্যুতে মুজিবনগর সরকার এবং ভারত সরকারের তীব্র সমষ্টিগত চাপে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে প্রচণ্ড বেকায়দায় পড়েছিল পাকিস্তান সরকার।
তিনি আরও বলেন, কিশোর শেখ জামাল ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডি থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পথচলা শেষে কলকাতা হয়ে পৌঁছলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের কালশীতে। সেখানে ফুপাত ভাই ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বাধীন মুজিব বাহিনীতে ৮০ জন নির্বাচিত তরুণের সঙ্গে শেখ জামাল ২১ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে শেখ ফজলুল হক মণির সঙ্গেই মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন। চরম সাহসিকতার জন্য রণাঙ্গনে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল হয়ে উঠেছিলেন সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শেখ জামালকে সেনা অফিসার হিসেবে গড়ে তুলতে। শহীদ শেখ জামাল পিতার স্বপ্ন অনুযায়ী একজন দেশপ্রেমিক চৌকশ-মেধাবী সেনা অফিসার হয়ে উঠেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর লং কোর্স-এর প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার। ১৯৭৪ সালে শেখ জামাল মার্শাল টিটর আমন্ত্রণে যুগোস্লাভিয়ার মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ব্রিটেনের বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সামরিক একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
পরশ বলেন, ইতিহাসের গতিপ্রবাহে এই মহান তরুণের কীর্তি চিরভাস্বর হয়ে আছে। তার কৃতিত্ব যদি জাতির সামনে তুলে ধরা না হয়, তবে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। পরিতাপের বিষয় শেখ জামাল সম্বন্ধে লেখা-লেখি, গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত এখনো অপ্রতুল যা প্রকাশিত হচ্ছে বেশিরভাগই পুনরাবৃত্তি এবং সরলীকরণ। প্রকৃত গবেষণার এখনো বড়ই অভাব। শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একজন সাহসী বীরযোদ্ধা, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর একজন গর্বিত সেনা অফিসার। বঙ্গবন্ধু তার সেনা অফিসারদেরও সন্তানদের মতোই ভালোবাসতেন। সেই সন্তানতুল্য একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তার হাতেই তার আদরের জামালের প্রাণ দিতে হলো। এ যেন গ্রিক ট্র্যাজেডির ড্রামাটিক আয়রনি।
তিনি আরও বলেন, আজ শেখ জামালের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জনগণের অযুত ভালোবাসা, গর্ব ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পেশাগতভাবে দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে। আজকের এই দিনে একজন অকালপ্রয়াত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা, বন্ধু-অন্তপ্রাণ ও দুঃসাহসিক তরুণের কথা স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধাভরে। এই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারের রক্তপাত যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করেছিল, তাদের সেনা আইনে বিচার করতে শুধু ব্যর্থ হন নাই সে সময়ের সেনা প্রধান সফিউল্লাহ ও উপসেনা প্রধান জিয়াউর রহমান, মেজর জিয়া তো শেখ জামাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় জিয়াউর রহমানেরই পরবর্তী কার্যকলাপের মধ্যেই। মেজর জিয়ার অবৈধ সরকার খুনিদের পুরষ্কৃত করে। সেই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করা যাবে না বলে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে জিয়াউর রহমানের পার্লামেন্ট। খুনিদের বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, দু’জন খুনিকে জনগণের ভোট চুরি করে জাতীয় সংসদে সদস্যপদ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, শেখ জামালসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের রক্তে রঞ্জিত এই জিয়াউর রহমানের হাত। সুতরাং জিয়াউর রহমানের বিএনপির নেতৃবৃন্দ যখন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলে, ওদেরকে হাস্যকরভাবে বড়ই নির্লজ্জ মনে হয়। পরিশেষে একটা স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ হাবিবুর রহমান পবন, মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, মোঃ আনোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোঃ মাজহারুল ইসলাম, মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ, মোঃ সোহেল পারভেজ, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা, উত্তরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাসবিরুল হক অনু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক কাজী সারোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেন পাভেল এমপি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, ধর্ম সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাড. শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক মোঃ সফেদ আশফাক আকন্দ তুহিন, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মোঃ রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ-ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ আব্দুর রহমান, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্য ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জি এস মিজানসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।