দুর্নীতি ও ব্যাংকের দুরবস্থাকে ইস্যু করতে চায় বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৪ পিএম, ২৪ এপ্রিল,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:০৩ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকারকে চাপে ফেলতে এবার দুর্নীতি ও ব্যাংকসহ অর্থনীতির দুরবস্থাকে ইস্যু করতে চায় বিএনপি। সভা-সেমিনারসহ নানা প্রক্রিয়ায় দেশের মানুষের কাছে এসব ক্ষেত্রের বিদ্যমান চিত্র তুলে ধরবে দলটি। গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে ফরিদপুরের মধুখালী মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা, বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে মাহবুব উদ্দিন খোকনের অব্যাহতিসহ বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে স্থায়ী কমিটি কোনো আলোচনা করেনি বলে জানা গেছে।
এদিকে ফরিদপুরের মধুখালী মন্দিরে অগ্নিসংযোগ এবং পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলে দুই শ্রমিককে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। গতকাল দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় গত ১৮ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালীতে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলে শৌচাগার নির্মাণের কাজ করার সময়ে সহোদর দুজন শ্রমিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দলের পক্ষ থেকে এই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। কমিটির সদস্যরা হলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু ও নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন লুটপাট চলছে। দেশের অর্থনীতিতেও এক ধরনের দুরবস্থা বিরাজ করছে। এজন্য তারা সরকারকে দায়ী করছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশবাসীর কাছে এ খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে চায় বিএনপি। শিগগির সংবাদ সম্মেলন কিংবা বিবৃতির মাধ্যমে এ বিষয়ে দলের বক্তব্য তুলে ধরা হতে পারে। এ ছাড়া সভা-সেমিনারেও বিষয়টি তুলে ধরতে পারেন দলটির নেতারা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা কোনো মামলাই রাজনৈতিক নয়। অগ্নিসংযোগ, গ্রেনেড হামলা, আগ্নেয়াস্ত্র, চোরা চালান ও দুর্নীতির মতো সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তরাই মামলার আসামি হয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার ধরন ও প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে বিএনপি। এ ইস্যুতে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে বিবৃতি কিংবা সংবাদ সম্মেলন করা হতে পারে। বিএনপির দাবি, গত ১৫ বছরে সারা দেশে এক লাখের অধিক মামলায় তাদের ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আর এসব মামলাকে গায়েবি, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে আখ্যায়িত করছে দলটি।
বৈঠকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে মাহবুব উদ্দিন খোকনের অব্যাহতি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। খোকন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তত দুজন সদস্য খোকনের বিষয়টি উত্থাপন করেন। তারা বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একটি সংগঠন। সুতরাং খোকন ইস্যুতে বিএনপিকেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটি (খোকনকে অব্যাহতি) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি নিয়ে এখানে আলোচনার কিছু নেই। এরপর দলের হাইকমান্ডও সে আলোচনা আর বাড়ায়নি।
খোকনকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে গুঞ্জন চলছে, দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে সে ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি। তবে দলটির জ্যেষ্ঠ এক নেতার অভিমত, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা না হওয়ায় মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিষয়ে যে কোনো সময় সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কেননা, আলোচনা হলে ওখানেই বিষয়টির একটি মীমাংসা হয়ে যেত।
এদিকে ২২ এপ্রিল প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলীয় প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটির অন্তত ৩৮ জন সাবেক-বর্তমান নেতা কিংবা তাদের স্বজন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। প্রথম দফার নির্বাচনে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তাদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের পদধারী নেতা।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে থাকছেন, শিগগির তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত রোববার পটুয়াখালী ও কক্সবাজারের দুই নেতা এবং গতকাল মুন্সীগঞ্জের এক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়া নেতাদের প্রতি একটি বার্তা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।