গৃহদাহ নিয়ে উদ্বেগ জানালেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪১ পিএম, ১ এপ্রিল,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:১৫ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের ভেতরের গৃহদাহ আরও প্রকট হয়েছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের নেতারা। পাশাপাশি তাঁরা স্থানীয় রাজনীতিতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও জোরালোভাবে কেন্দ্রের সামনে তুলে ধরেছেন।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের তৃণমূলের নেতারা দলের বিভেদ কমানোর লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে উপজেলার ভোটে দলীয়ভাবে একক প্রার্থী ঘোষণার দাবি তুলেছেন। জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তবে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীদের কোনোরকম প্রভাব বিস্তার না করার কড়া বার্তা দেন তিনি।
গতকাল রোববার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত জেলা নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম, কক্সবাজারের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীসহ একাধিক নেতা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি উপজেলা নির্বাচন, দলীয় কোন্দলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। পরে নেতাদের কথা শোনেন তিনি।
উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে এবং দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিভাগীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে আওয়ামী লীগ।
উপজেলা ভোট নিয়ে বিরোধ
বৈঠক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, ‘বলা হচ্ছে এমপি-মন্ত্রী বা জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপজেলা নির্বাচনে মাথা ঘামাবেন না। মাথা ঘামানোটা দৃশ্যমান না, দেখা যায় না। সবাই মাথা ঘামাবে।
আগেও উপজেলা নির্বাচন হতো দলীয় প্রতীক ছাড়া। কিন্তু সেখানে দল একজনকে সমর্থন করত। তাহলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা থাকে। এখন যদি একটা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ-সাতজন দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে এমপি একজনকে সমর্থন করবেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা আলাদা আলাদাভাবে সমর্থন করবেন। এতে সংগঠন আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
কক্সবাজারের ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘উন্মুক্ত থাকার সুযোগে একাধিক প্রার্থী হবে। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ বেড়ে যাবে। নেতাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব সৃষ্টি হবে।’
নোয়াখালী জেলা সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, তিনি সংসদ বা অন্য কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হন না। উপজেলা পরিষদ নিয়ে আছেন। কিন্তু এবার স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী তাঁর ছেলেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। অথচ তাঁর পৈতৃক বাড়ি কবিরহাটে। বিষয়টি দলের শীর্ষ পর্যায়ে জানিয়েছেন উল্লেখ করে খায়রুল আনম বলেন, এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর বিচারের ভার ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তৃণমূল নেতারা
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম পাটওয়ারী দুলাল অভিযোগ করেন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালা দিয়েছে স্থানীয় যুবলীগ। তাঁরা চাইলে তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু সেটা করতে গেলে রক্তপাত হবে। তাই নিবৃত্ত আছেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনারা যাঁরা ঢাকায় বসে এগুলো করাচ্ছেন, তা ঠিক করছেন না। এগুলো থেকে বিরত থাকুন। নতুবা দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ জেলা নেতার এমন বক্তব্যের সময় দীপু মনি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও হুইপ সাইমুম সারওয়ার কমল অভিযোগ করেন, তিনি গত জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করলেও জেলা আওয়ামী লীগের ৭০ শতাংশ নেতা তাঁর বিপক্ষে ছিলেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ১০ হাজার ভোটে হেরে যাবেন। শেষ পর্যন্ত অলৌকিকভাবে তিনি জিতে গেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দিন দ্রুত মহানগর কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান। বৈঠকে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত যেসব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে; সেখানে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন শেষ করার জন্য বলা হয়। একই সঙ্গে আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে সব সাংগঠনিক শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরিকল্পনার কথাও বৈঠকে জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের তৃণমূলের নেতাদের এই বৈঠকে মূলত উপজেলা নির্বাচন এবং দলীয় বিভেদের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ওবায়দুল কাদের দলের নেতা-কর্মীদের উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘একেকজনের একেক রকম কথাবার্তা দলকে বিভ্রান্ত করে। যা খুশি বলে দেবেন? এটা তো আওয়ামী লীগ নয়, ফ্রি স্টাইলে কথা বললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’