এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে : আমীর খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৯ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:০৯ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ সরকারের পতন হচ্ছে না ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। জনরোষের ভয়ে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে টিকে থাকতে চায়। এজন্য হত্যা, নির্যাতন, হামলা, মামলার পথ বেঁচে নিয়েছে। সরকার আগুন সন্ত্রাসের হুমকি দিচ্ছে, যাতে কিনা আওয়ামী লীগ অভ্যস্ত। আমরা বলতে চাই বিএনপি’র নেতৃত্বে জনগণ আজ মাঠে নেমে এসেছে, এই আওয়ামী সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনগণই আমাদের অস্ত্র।
সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস-দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি পদযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
নগরীর নাসিমন ভবন দলীয় কার্যলয়ের সামনে পদযাত্রায় শুরুর আগে তিনি বলেন, বিএনপি ভোটের মাঠে ছিল, ভোটের মাঠে আছে এবং ভবিষ্যতে ভোটের মাঠে থাকবে। বিএনপি ভোটের মাঠ থেকে ভোট চোর ও তাঁদের সহযোগীদের বিতাড়িত করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভূমিকা দেখলে মনে হয়, তারা বিরোধী দল হয়ে গেছে। বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে, তারাও (সরকার) শান্তি কর্মসূচি দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে খসরু বলেন, যতই শান্তি কর্মসূচি দেন, যতই জনগণের সম্পদ রক্ষার কথা বলেন, আপনারা জনগণের কাছে হাস্যকরভাবে পরিচিত হয়েছেন। জনগণ আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখে হাসে। আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। আপনারা রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছেন।
আমীর খসরু বলেন, আগামী নির্বাচনে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকুক বা নাই থাকুক, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন করতে দেব না। জীবনের বিনিময়ে হলেও তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচন করতে দেব না। এই সংগ্রাম কঠিন সংগ্রাম। এই সংগ্রামের দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে।
তিনি বলেন, পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের বিলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কারণেই দ্রব্যমূল্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের সংসারের খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আজকে একটা ফ্যাসিস্ট, জুলুমবাজ, দখলবাজ, অনির্বাচিত, অবৈধ, নির্যাতনকারী একটা সরকারের অধীনে আমরা আছি। বাংলাদেশের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট তা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি।
আওয়ামী সরকার জনগণের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর যে জুলুম হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে, হত্যা হয়েছে, তাকেও অতিক্রম করে গেছে আজকের এ প্রেক্ষাপট। আজকের প্রেক্ষাপট হচ্ছে আওয়ামী সরকার জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করে অব্যাহতভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্যে কয়েকটা গোষ্ঠীর মাধ্যমে, একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, একটা প্রজেক্টের মাধ্যমে, একটা প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে। তারা একটা প্রকল্প সৃষ্টি করেছে। এই প্রকল্পে সরকারের কিছু কর্মকর্তা আছে, কিছু ব্যবসায়ী আছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা আছে এবং এরা সকলে মিলে একটা গোষ্ঠী সৃষ্টি করছে। আওয়ামী সরকারের সমস্ত সিদ্ধান্ত লুটপাটের পক্ষে।
পদযাত্রায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্করের পরিচালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রামের সম্মনয়ক মাহাবুবে রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুণর রশিদ, বিএনপির সহ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, এডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী।
মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, জনগণের ওপর আস্থা রেখে বিএনপির রাজনীতি। আমাদের জনগণকে নিয়ে রাজনীতি। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। যেখানে লাখো জনতা রাস্তায় নামে, তারা তো একেকটা লাঠির চেয়ে শক্তিশালী। একজন বাংলাদেশের নাগরিক লাঠির চেয়ে শক্তিশালী, চাইনিজ রাইফলের চেয়ে শক্তিশালী। আমাদের কোনো অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠির দরকার নেই। যাদের দুর্বলতা আছে তারা লাঠি নিয়ে নামে।
তিনি বলেন, বিএনপির শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বাংলাদেশের মানুষের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া মানে বিএনপির শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে দেশের জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিএনপির সমাবেশকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করার একটা প্রবণতা আওয়ামী লীগের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, ভাবনা আছে। আমরা তাদের বিভিন্ন বক্তব্য দেখছি, এই ফাঁদে বিএনপির কাউকে পা না দেওয়ার আহ্বান জানাই। আগামীকালের জনসভা লাখ লাখ মানুষের জনসমাগমের মাধ্যমে শেষ হবে।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের অপকর্মের কারণে আজ ভীত। তারা ভয় পেয়েই এখন বিএনপিকে ভয় লাগাচ্ছে। বিএনপি কাউকে ভয় পায় না। এক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে দেশ চলতে পারে না। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে দেউলিয়া করেছেন। জনগণ এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই।
জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, জনগণের আস্থার রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। কারণ গণতন্ত্রের প্ল্যাটফর্ম থেকে বিএনপির রাজনীতি শুরু। জিয়াউর রহমান বলেগেছেন, সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। জনগণের আস্থাতেই বিএনপির আন্দোলনে বাঁধ ভেঙেছে। এ বাঁধ আওয়ামী লীগকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাঁধ ভাঙা এ আন্দোলন কেউই রুখতে পারবে না।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রামের সম্মনয়ক মাহাবুবে রহমান শামীম বলেন, হামলা, মামলা ও নেতাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আন্দোলনের গতিরোধ করা যাবে না। দেশের মানুষের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এই আন্দোলন। এই আন্দোলনের মালিকানা বাংলাদেশের মানুষের হাতে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বার্তা যাবে, এই সরকারের বিদায় নেওয়ার জন্য। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি সেই ধারায় চলতে থাকবে। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে চাই।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিএনপির বর্তমান কর্মসূচিগুলো হচ্ছে বিদেশে টাকা পাচারকারী ব্যাংক লুটেরা, মানুষের মৌলিক অধিকার ও ভোটের অধিকার হরণকারী কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। বিএনপি জনগণকে নিয়ে মাঠে নেমেছে তাই আওয়ামী লীগের মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে। কোন দানাই পানাই করে লাভ হবেনা। তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজপথে এই সরকারের পতন ঘটাবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আওয়ামী লীগ গত দেড় দশকে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে তা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের এখন মেরামতের প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে মেরামত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তারা দেশের ভোটার অধিকার চিনিয়ে নিয়েছে। এই সরকার থাকলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না।
পদযাত্রা অংশ নিতে দুপুর থেকে বিএনপির ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন এলাকার জড় হয়। গতকাল রাতে অঙ্গসংগঠন এবং বিভিন্ন এলাকার মিছিল গুলো স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
দুপুরের পর থেকে উক্ত স্থানে নেতাকর্মীরা আসতে থাকে। তাদের হাতে ছিল দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের ছবি সম্মিলিত ব্যানার। পদযাত্রা নাসিমন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে লাভলেইন,এনায়েত বাজার তিনপুলের মাথা, বোদ্ধ মন্দির, লাভলেইন, নুর আহম্মদ সড়ক এসে শেষ হয়।