আ’লীগ সরকার ক্রমাগত দ্বন্দ্ব ও সঙ্ঘাতের উসকানি দিচ্ছে : ড. মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:০৪ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছেন, বর্তমান অবৈধ সরকার প্রতিনিয়ত জনগণকে ভয় দেখানো সভা-মিছিলে হামলা করে আহত, নিহত, নির্যাতিত করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে এবং বিরোধী দলের প্রতিটি কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে ক্রমাগত দ্বন্দ্ব ও সঙ্ঘাতের উসকানি দিচ্ছে।
তিনি বলেছেন, বিরোধী দল সচেতনভাবে এসব প্ররোচনার ফাঁদে পা না দেয়ায় সরকারী দলের মন্ত্রী ও নেতারা হতাশ হয়ে আবোল তাবোল কথা বলে লোক হাসাচ্ছে।
আজ বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মোশাররফ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের রাতেই রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে দলীয়করণকৃত প্রশাসন ও পুলিশ এবং দলীয় পাণ্ডাদের দিয়ে ব্যালট বাক্স বোঝাই করে যে সরকার জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসার নির্লজ্জ বড়াই করে- সেই নিশাচর সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অযোগ্যতা ও অব্যবস্থার ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানী, সার, চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংস, ডিম ও মরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি যাতায়াত, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দেশের জনগণ আজ অতিষ্ঠ। ক্ষুব্ধ এবং অনিবার্য কারণেই তারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দেশের জনগণ এই দুঃসহ বর্তমান এবং অনিবার্য ধ্বংস থেকে বাঁচতে চায়। তাদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ ও অক্ষম সরকারের পরিবর্তন চায় বলেই বিরোধী দলের সভা, সমাবেশ, মিছিলে তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। হামলা, মামলা, নির্যাতন অগ্রাহ্য করতে সাহসী হয়েছে এবং বিজয়ের লড়াইকে বেগবান করছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও নগদ দেশী-বিদেশী মুদ্রার অভাবে শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি যে সঙ্কটে পড়েছে তা থেকে মুক্তির পথ দেখা যাচ্ছে না। এর ওপর সরকার, সরকারী দল এবং তাদের ঘনিষ্ঠজনেরা দেশের সরকারী, বেসরকারী ব্যাংকগুলো থেকে ক্ষমতাসীনদের সহযোগীতায় ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে। সেকেন্ড হোম, বেগম পাড়া, দুবাইয়ে গুলশান-৩ আর সুইসব্যাংকে জমা হচ্ছে এসব লুটের টাকা। আর বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানী, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কেটে তাদের ফতুর করে দিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। একদিকে কর্মহীন, ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে আর অন্যদিকে বাড়ছে হাতে গোনা কিছু মানুষের অবৈধ সম্পদ। ঋণ বাড়ছে দেশ, দেশের মানুষ ও দেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের।
বিএনপি’র সিনিয়র নেতা বলেন, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় যখন দেশের স্বার্থে সকলের একযোগে কাজ করা দরকার, তখন অবৈধ ও দুর্নীতিবাজ সরকার সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে জনগণের স্বার্থে যারা কথা বলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে, গুলি চালিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে, নির্যাতন করে স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। ইতিহাস সাক্ষী- এমন চেষ্টা অতীতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে এবারেও হতে বাধ্য। জনগণের সঙ্কট মোচনের লক্ষ্যে ঘোষিত বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের ১০ দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের জন্য সরকার পুলিশী হামলা-মামলার পাশাপাশি শান্তি সমাবেশের নামে। প্রতিনিয়ত জনগণকে ভয় দেখানো সভা-মিছিলে হামলা করে আহত, নিহত, নির্যাতিত করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে এবং বিরোধী দলের প্রতিটি কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে ক্রমাগত দ্বগ্ধ ও সঙ্ঘাতের উসকানি দিচ্ছে। বিরোধী দল সচেতনভাবে এসব প্ররোচনার ফাঁদে পা না দেয়ায় সরকারী দলের মন্ত্রী ও নেতারা হতাশ হয়ে আবোল তাবোল কথা বলে লোক হাসাচ্ছে।
তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি সরকারের অনুগত কয়েকটি টিভি চ্যানেলে কয়েক বছর আগে ডিজিটাল কায়দায় বানানো এমন এক ভিডিও প্রচার করেছে বলে অভিযোগ করে মোশাররফ বলেন, তা দেখলে যেকোনো সাধারণ নাগরিকও বুঝবে যে, এটা নোংরা রাজনৈতিক অপপ্রচারের এক বানোয়াট ও নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সরকারী দলের অরাজনৈতিক অপকৌশলের পাশাপাশি আমরা তদের সহযোগী অনুগত মিডিয়ারও অনৈতিক কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ভিডিও প্রচারের পর কমেন্ট বক্স ও সোস্যাল মিডিয়ায় সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোর নির্মম অথচ সঠিক সমালোচনার ঝড় বইছে। কাজেই এ ব্যাপারে নতুন কিছু না বলে আমরা শুধু বলব যে চলমান গণআন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ এবং দেশের সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার এই বৃথা অপচেষ্টা মাঠে মারা গেছে। জনগণ প্রতিদিনের জীবনে যে নির্মম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন তা ভুলিয়ে দেয়ার কিংবা তা থেকে মুক্তির যে লড়াই তা থামিয়ে দেয়ার সাধ্য কোনো ভুয়া ভিডিও কিম্বা কোনো চ্যানেলের অপপ্রচারের নেই। থাকে না কখনো।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের দুর্ভোগ মোচন এবং দেশ ও দেশের জনগণকে দুর্নীতি, অনাচার, লুট ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক কারণে আটক নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে যে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তা ক্রমান্বয়ে বেগবান হয়ে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করবে ইনশা আল্লাহ। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্র পুণঃরুদ্ধারে দেশের সকল শ্রেণী পেশার জনগণ ও মিডিয়ার সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান প্রমুখ।