এই সরকারকে গদি থেকে নামতে হবে : গয়েশ্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৪ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:১৩ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার বাড়ির ভৃত্যের চেয়েও অধম। কারণ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার কোন ক্ষমতা নেই। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে।
আজ শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে আলুকান্দা স্যান্ড বাজারে সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি এ কথা বলেন ।
বিএনপির ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন, জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজ দেশের ৪৫শ’ ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি হচ্ছে। দাবি এক, আমরা একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন চাই। আমরা আমাদের ভোটের অধিকার চাই। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। আমার ভোট আমি দেব, কেন্দ্রে গিয়ে দেব এবং রাতে নয় দিনে দেব। এটা হচ্ছে আমাদের মূল দাবি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক আমাদের ১০ দফা দাবি। শেখ হাসিনার অধিনে সুষ্ঠু অবাধ একটা নির্বাচন হতে পারে না।
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে কারণ, তিনি ভোটে নির্বাচিত না। আপনারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা এবং সংসদ নির্বাচনের কোথাও ভোট দিতে পারেন না।’
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,‘ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন না-এর জন্য তো দেশটা স্বাধীন হয়নি। আমরা তো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। এই স্বাধীন দেশে আমি ভোট দিতে পারব না কেন? দুধের মধ্যে তেঁতুল পড়লে দুধ নষ্ট হয়। সুতরাং শেখ হাসিনা যেখানে আছে সেখানে গণতন্ত্র নষ্ট। অর্থাৎ যেখানে শেখ হাসিনা থাকে সেখানে গণতন্ত্র থাকে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন,‘ গণতন্ত্র ফেরাতে হলে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, তার পতন অনিবার্য প্রয়োজন। এজন্য তার পদত্যাগ অনিবার্য হয়ে পড়েছে জাতির সামনে। অবৈধ বা বৈধ হোক সংসদ বিলুপ্ত হওয়া বা সংসদের আসন শূন্য না হওয়া পর্যন্ত আরেকটি নির্বাচন হয় না। সেই কারণে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।
নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, বিএনপির নেতা দিয়ে নয়; দেশের বিশিষ্টজনদের দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করবে, সেই সরকার একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তারপরে একটা নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে ভোট দিবেন আপনারা। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে।’ দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে আপনারা রাস্তায় নামুন।
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলের চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন মাঝপথে রাজপথে নেমেছি। এর একটি কারণ আছে। এখানে যারা দোকান করেন, ব্যবসা করেন এবং যারা ক্রয় করেন। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে? কিন্তু আপনাদের আয় কি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে? এ সময় সবাই বলে উঠেন- ‘না’। যদি জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, আর আয় যদি না বাড়ে তাহলে চলবেন কিভাবে? বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, গ্যাসের দাম বাড়ছে। সারা পৃথিবীতে জ্বালানি তেলের দাম কমছে কিন্তু আমাদের দেশে বিদ্যুতের দাম লাগামহীনভাবে বাড়াচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম যদি বাড়ে তাহলে সকল জিনিসপত্রের দাম বাড়বে-এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ আছে? সবাই বলে উঠেন না।’
তিনি আরো বলেন, আমদানিকারক, যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি করে, তারা এলসি খুলতে পারছে না, আমদানি করতে পারছে না। সরকার টাকা দিতে পারছে না, কারণ তাদের হাতে ডলার নেই। আপনারা জানেন সামনে রোজা উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে পাঁচটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আছে। কিন্তু একটিও খালাস করতে পারছে না। কারণ, সরবরাহকারীদের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। একটি জাহাজে ১৬ হাজার ডলার করে পাঁচটি জাহাজের জন্য ৮০ হাজার ডলার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। টাকা দিয়ে যখন মাল খালাস করবেন, তখনই জিনিসের দাম বাড়বে না? সেই দামে কি এসব পণ্য কিনে খেতে পারবেন? সবাই বলে উঠেন না। সুতরাং দৈনন্দিন জীবনে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, আয় বাড়ছে না, কর্মক্ষেত্র নেই। এই অবস্থায় এই মানুষগুলো বাঁচবে কী করে? এ জন্য দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর তাগিদ থেকে আজ আমরা এই পদযাত্রা কর্মসূচি করে করে ঘরে ঘরে আপনাদের কাছে যাচ্ছি। আপনাদের দুঃখ কষ্টের সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি। আপনারা মাঠে নামুন। এই সরকারকে গদি থেকে নামতে হবে।’
বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আপনি যখন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কমাতে পারেন না, তাহলে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। গ্যাস বিদ্যুতের কথা বললে মন্ত্রী সাহেব মনে করেন, তার বিরুদ্ধে বলছি, না তোমার বিরুদ্ধে বলছি না। এসব বড়ানো-কমানোর ক্ষমতা মন্ত্রীর নেই বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর।