বিএনপিকে প্রতিযোগী ভাবলেও তারা আমাদের শত্রু ভাবে : কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৩ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:২৫ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা বিএনপিকে প্রথম থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিযোগিতা চেয়েছি। আমাদের তারা বরাবরই শত্রুপক্ষ মনে করে আসছে।’
আজ শুক্রবার সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভার সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) এক বছর ধরে প্রকাশ্যে মাঠে আসছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে, তারা অনেক বড় বড় কথা বলেছেন। আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায় শান্তি সমাবেশ করছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে আমরা শান্তি সমাবেশ করব। তারা নয়াপল্টনে করে, আমরা উত্তরা, ১০ ডিসেম্বর তারা রাজধানীতে করেছে, আমরা সাভারে করেছি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা কোনো কর্মসূচি দিলে কিছু সংবাদমাধ্যম বিএনপির কথাটিকে বলে। বিএনপি বলছে পাল্টাপাল্টি। আমরা তো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি করছি না।’
তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই দেখা যায়, নানা ধরনের গুজবের ডালপালা বিস্তার করে, আজকে আমরা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের দিকে অভিযাত্রা শুরু করেছি। আমাদের দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আজকে আমরা কোনো কর্মসূচি দিলেই কিছু সংবাদমাধ্যম বিএনপির কথাটাকে প্রতিদ্বন্দ্বী করে। বিএনপি বলছে পাল্টাপাল্টি, আমরা তো পাল্টাপাল্টি সভা, সমাবেশ করছি না। তারা করছে আন্দোলনের পদযাত্রা, আন্দোলনের সমাবেশ। আমরা যেটা করছি সেটা হচ্ছে শান্তির সমাবেশ। বিএনপির সাথে আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা আছে, তা সুখকর নয়। ২০১৩, ১৪ সালে রাজনীতিতে তারা কত নিকৃষ্টতম নোংরা ভূমিকা পালন করেছে, সেটার প্রমাণ দেশের মানুষ পেয়েছে। নতুন করে দেয়ার কিছু নাই। আমাদের স্মৃতিটা এখনো জাগে, দেশের জনগণ এতো তাড়াতাড়ি সেই দুঃস্মৃতি ভুলবে না।’
কাদের বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে প্রথম থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে তাদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক চেয়েছি। আমরা কম্পিটিশন চেয়েছি। তাদের জন্ম থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, একুশে আগস্টের ঘটনা, ২০০১ সাল, সবকিছুতেই তারা আমাদের বরাবরই মনে করে আসছে শত্রুপক্ষ। শত্রুপক্ষ হিসেবে তারা আমাদের সঙ্গে শত্রুতাই করে গেছে। এই শত্রুতার অপরিহার্য সঙ্গ ষড়যন্ত্র। এটা তারা আমাদের সাথে করেছে।’
তিনি আরও বলেন, তারা (বিএনপি) গত এক বছর ধরে মাঠে এসেছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর। তারা আন্দোলন করবে, গণঅভ্যুত্থান করবে, ১১ ডিসেম্বর থেকে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে দেশ চলবে, তারেক রহমান গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেবে। এসব বড় বড় কথা তারা বলেছে, কিন্তু দেশবাসী লক্ষ করেছে যে, আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায়, বিশেষ করে পুরোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে, তাদের আগুন-সন্ত্রাসের আশঙ্কায় আমরা শান্তির সমাবেশ করেছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে আমরা শান্তি সমাবেশ করব।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব, ভালোর জন্য প্রস্তুতি নেব, খারাপের জন্য সতর্ক থাকব। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। বিএনপির সাথে পাল্টাপাল্টি বিষয় নয়। আমাদের প্রতিদিনই কর্মসূচি আছে। আমাদের সম্মেলন হচ্ছে, বিএনপি তো সমাবেশ করছে না।’
বিএনপিকে প্রশ্ন করতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, তারা যে দেশে গণতন্ত্রের জন্য এত উতলা হয়ে গেছে, তাদের ঘরে কেন গণতন্ত্র নাই। তারা ঘরে কেন গণতন্ত্রকে জিম্মি করে রেখেছে? এটা আমাদের বড় প্রশ্ন। এটার জবাব পাই না। তাদের দলের গঠনতন্ত্র থেকে তারা কেন সাত ধারা বাদ দিয়েছে? সাত ধারা আছে, কোনো নেতা যদি দুনীতিগ্রস্ত হয় তাহলে সে বিএনপির নেতা হতে পারবে না।
তিনি বলেন, খালি মাঠ পেলে বিএনপি যে কত নোংরা জায়গায় নামতে পারে, সন্ত্রাসকে কোন পর্যায়ে নিতে পারে, রাস্তা কাটে, রাস্তার পাশে গাছ কাটে, তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে কত বাস পুড়েছে, কত ড্রাইভার পুড়েছে। তারা কত যাত্রীকে পুড়িয়ে মেরেছে, এত নিষ্ঠুর রাজনীতি। খালি মাঠ পেলে তারা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। কতগুলো ভূমি অফিস তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। ৫০০টি স্কুল তারা পুড়িয়েছে। এই হলো বিএনপি। ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। এরা এখন জানে, নির্বাচন হলে তারা শেখ হাসিনাকে হারাতে পারবে না। নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে না। তাদের কাছে একটাই পথ আছে, সেটা হলে অন্ধকারের পথ, ষড়যন্ত্র। সেই পথে তারা সরকার হটাতে চাইছে, দেশেও তাদের মুরব্বি আছে, বিদেশেও আছে, তারা প্রচুর টাকা-পয়সা বিভিন্ন সোর্স থেকে আজকে পাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বন্ধুর অভাব নেই।
যৌথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাড. কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাড. আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, উপ-প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনিবাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী, সানজিদা খানম প্রমুখ।