সরকার দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে : বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৩ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:৪৪ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
১০ দফা এবং জনগণের জীবিকার বিভিন্ন সমস্য ও সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, জনদুর্ভোগের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণ আন্দোলন নসাৎ করতে ব্যর্থ, অযোগ্য সরকার দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ১০ দফা এবং জনগণের জীবিকার বিভিন্ন সমস্য ও সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, জনদুর্ভোগের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণ আন্দোলন নস্যাৎ করতে ব্যর্থ, অযোগ্য সরকার দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হয়রানি করে কর্মসূচি বানচালে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। গতরাতে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর সরাফত আলী সপুকে কোনো কারণ ছাড়াই রাত ১.৩০টায় তার নিজ বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে নতুন কোনো মামলাও নাই। পুরাতন সকল মামলায় তার জামিন রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই মীর সরাফত আলী সপুকে গ্রেফতার চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের ভীত করার সরকারি অপকৌশল মাত্র। আজ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাধীনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওতাধীন ১২ নং ওয়ার্ড (শাহজাহানপুর থানা) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম, ১৮ নং ওয়ার্ড (নিউমার্কেট থানা) বিএনপির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন, গেন্ডারিয়া থানার ৪৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য গিয়াস উদ্দিন গেসু, ৪০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রানা ও সেন্টুকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতাধীন গুলশান থানা বিএনপির যগ্ম আহবায়ক মোঃ শাহজাহান কবির মন্টু, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ রাশেদ বিন সোলেমান শাহাজাদা, সদস্য মোঃ হাসেম, ১৯ নং ওয়ার্ড (গুলশান থানা) বিএনপির সভাপতি আব্দুল মমিন, ৯৭ নং ওয়ার্ড (বাড্ডা থানা) ইউনিট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুল ইসলাম, ৯৩ নং ওয়ার্ড (শাহ আলী থানা) বিএনপির সভাপতি আফসার আলম খাঁন সেলিম, ১৩ নং ওয়ার্ড (মিরপুর থানা) বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ রিপন তালুকদার, ১৩ নং ওয়ার্ড (মিরপুর থানা) বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আফজাল হোসেন, ১০ নং ওয়ার্ড ইউনিট (উত্তর মিরেরবাগ-মিরপুর থানা) বিএনপি নেতা মোঃ মহসিন, খিলক্ষেত থানা বিএনপির সম্পাদক মোঃ আমির হোসেন, খিলক্ষেত থানা শ্রমিক দলের আহবায়ক মোঃ শুক্কর আলী, দারুস সালাম থানা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ হুমায়ুন কবির, খিলক্ষেত থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মোঃ মনির হোসেন লিটন, ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপির সদস্য দারগ আলী, ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপির সদস্য এস এম খান টিটু, ১২ নং ওয়ার্ড (মিরপুর থানা) বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হেলাল মিয়া, মিরপুর থানা বিএনপির আহবায়ক হাজী আঃ মতিন, যুগ্ম আহবায়ক হাজী দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক আবুল বাশার ভূঁইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা, সুলতানপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শেখ মহসিন, নাটাই উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই মেম্বার, সদর উপজেলার যুগ্ম আহবায়ক শামিম রেজা এবং যশোর মনিরামপুর উপজেলায় কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় প্রস্তুতি সভা চলাকালীন ৬ নেতাকর্মীকে। এছাড়াও শেরপুর, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানে গত ৫ দিন ধরে পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে হয়রানি করছে এবং চলছে গ্রেফতার বাণিজ্য। আমরা সরকারের এই দমন-নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। সারাদেশে গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, চলমান গণ-আন্দোলনের যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে “গ্যাস, বিদ্যুৎ, চাল ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, সার, ডিজেলসহ কৃষিপনেণ্যর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে সারাদেশে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে সরকার সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ক্ষমতাসীন দল নির্লজ্জের মত পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টিতে উস্কানী দিচ্ছে। জনবিচ্ছিন্ন, নিশিরাতের সরকার এতটাই নির্লজ্জ যে, চুরি-জালিয়াতি, সাজানো, পাতানো উপ নির্বাচনের নামে প্রহসন ও নাটক মঞ্চস্থ করে সংসদে দাঁড়িয়ে সেই প্রহসনের উপনির্বাচনকে সার্টিফিকেট দিয়ে বলেন, এই উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে নাকি প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এবার নাকি আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না। যাদের দুই কান কাটা তারাই এসব কথা বলে জনগণকে কৌতুক উপহার দিতে পারেন। উপ-নির্বাচনের নামে কি হয়েছে তা জনগণ জানে। শত চেষ্টা করেও ভোট চুরির কালিমা আওয়ামী লীগ সরকার মুছতে পারবে না। অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান একমাত্র বাধা। সে কারণেই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ আজ আওয়ামী সরকারকে বয়কট করেছে। সরকারের সকল অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিএনপির কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগে রাজপথে নেমে এসেছে। তাই সরকার নিজেদের অপশক্তি প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে, অবৈধভাবে গ্রেফতার করছে নিরীহ নেতাকর্মীদের।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, সরকারের হীন এই কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে এবং সরকারকে এসব হীন ষড়যন্ত্র পরিত্যাগ করে সুস্থ ও সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছে। এসব মামলা, হামলা, গুম, খুন, গণ-গ্রেফতার ও নেতাকর্মীদের হয়রানি করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সরকারের সৃষ্ট জনদুর্ভোগ, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন বিভ্রান্ত বা নস্যাৎ করতে পারবে না। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, দমন-নিপীড়ন চালিয়ে উস্কানী দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করে জনগণের আন্দোলন নস্যাৎ করা যাবে না। সরকার ও আওয়ামী লীগ এতটাই জনবিচ্ছিন্ন, দুর্বল এবং ভীত যে, তৃণমূলে আন্দোলনের কর্মসূচির দেয়া মাত্রই তাদের হৃদকম্পন বেড়ে গেছে, তারা নার্ভাসনেসে ভুগছে। জনসম্পৃক্ত এই আন্দোলন সকল বাধা বিঘ্ন উপেক্ষা করে যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম ও পাড়া মহল্লা কমিটির সকলস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, যুবক, মহিলা, চাকরিজীবী, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে ইউনিয়ন পদযাত্রায় যোগ দিয়ে চলমান আন্দোলন আরও বেগবান করার আহবান জানাচ্ছি। আমরা আওয়ামী লীগের প্রতিও দেশ, গণতন্ত্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনিপর কর্মসূচির দিনে উস্কানীমূলক পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহার করারও আহবান জানাচ্ছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও জনগণের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে অন্যায়ভাবে বাধাগ্রস্ত না করার আহবান জানাচ্ছি এবং ১১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রাসহ সকল কর্মসূচিতে সার্বিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা করার আহবান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে পদযাত্রার কর্মসূচি পূর্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৫ হাজারেরও অধিক নর-নারী ও শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের হতাহতের ঘটনায় শোক, সহানূভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করে আজকের পদযাত্রা কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করে আজ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। এছাড়া ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পদযাত্রা এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তরের পদযাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।