জাগ্রত জনতার উত্তাল মিছিলে উত্তাল দেশ
রফিক মৃধা, দিনকাল
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:৫৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
জাগ্রত জনতার উত্তাল মিছিলে উত্তাল দেশ।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পূর্বঘোষিত ঢাকা বিভাগের সমাবেশে বেলা ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। সমাবেশের কার্যক্রম বেলা ২টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেষ্টুরেন্ট মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। নেতা-কর্মীরা লাল-হলুদ-নীল-সবুজ টুপি পরে, তাদের কারো কারো হাতে ছিলো জাতীয় ও বিএনপির পতাকা। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো এবং সরকারের দমন নিপীড়ন বন্ধ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণতন্ত্র বিরোধী দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগীয় সদরে পঞ্চম ধাপের কর্মসূচি পালন করলো বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটগুলো।
নয়াপল্টনে সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এটা প্রমাণিত হয়েছে আবার যেসব উপনির্বাচন হয়ে গেলো, সেই উপনির্বাচনগুলোতে। আমি সে বিষয়ে যাবো না। আমি শুধু বলতে চাই, একটি কথা। হিরো আলম (বগুড়া উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী) সে একটি মাত্র কারণে আজকে প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ এই হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায় যে, তাকে (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয় ৬/৭শ ভোটে। আজকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে পরাজিত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ব্যক্তিকে জেতাতে প্রার্থীকে গুম করা হয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি।
তিনি বলেন, আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবদুস সাত্তার (উকিল আবদুস সাত্তার) যিনি দল ত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাকে আওয়ামী লীগ নিজের লোক মনে করে তাকে জয়ী করতে বিরোধী প্রার্থীকে গুম করতে হয়। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে কী, সুষ্ঠু হবে কী, আপনারা ভোট দিতে পারবেন? এই সময়ে নেতা-কর্মীরা সমস্বরে ‘না’ সূচক সেøাগান দেয়।
বাজারের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজারের অবস্থা আপনারা জানেন। এক লাফে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২৬৩ টাকা বেড়েছে। আজকে মা-বোনেরা এখানে আছেন। তারা জানেন, কি কষ্ট করে তাদেরকে সংসার চালাতে হয়।
আইএমএফের ঋণের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আজকে ঋণ গ্রহণ করছে। আপত্তি নাই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকা নিয়ে যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়াতে গিয়ে বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে ফ্ল্যাট কেনেন, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেন তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেনো? ঋণের টাকা আনবেন আর আমাদের জনগণের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাবে। মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়, পরিবর্তন দেখতে চায়।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে, তারা (সরকার) মেগা প্রজেক্ট আবার শুরু করেছে। পাতাল রেলের প্রজেক্ট করেছে, সেই প্রজেক্টে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর আমার সাধারণ মানুষকে গরীব-দুস্থ ভাতা দিতো সেই ভাতার টাকা তারা (সরকার) চুরি করে লুট করতে শুরু করেছে এবং সেই ভাতার টাকাও বন্ধ করে দিচ্ছে। এই সরকার আজকে সাধারণ মানুষের দিকে তাকায় না। তারা (ক্ষমতাসীনরা) তিলে তিলে বড় হচ্ছে, ফুলে ফেঁপে উঠছে। পাকিস্তান আমলে এই আওয়ামী লীগ স্লোগান দিতো ২২ পরিবারকে দূর করতে হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে সেই আওয়ামী লীগ কয়েক হাজার পরিবার তৈরি করেছে যে পরিবার বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে এদেশে লুটেরাদের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এই লুটেরার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনে পতন ঘটাবো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো, কারাবন্দি সকল রাজবন্দিকে মুক্ত করব।
ভুলে ভরা পাঠাপুস্তক প্রকাশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সামাজিক মূল্য বোধ, আমাদের ঐতিহ্য সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করেছে। আমাদের সংসদ ধ্বংস করেছে, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে, আমাদের ধর্মবোধকে ধ্বংস করছে। আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করবার চেষ্টা করছে। এই সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের জাতির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন। সেই লক্ষ্যেই আমরা দশ দফা ও ২৭ দফা প্রণয়ন করেছি। এর মধ্য দিয়েই দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে যে তারা একটি দাবিতে আন্দোলন করছে। সেটা হলো এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ। আমরা বলে আসছি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না।
তিনি বলেন, আজকে সরকার টিকে আছে চাপার জোরে। গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তারা একদিকে ঋণ করছে আরেকদিকে জনগণের পকেট কাটছে। আজকে তারা জনগণের দিকে তাকায় না। দেশ এখন লুটেরাদের কবলে পড়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণতন্ত্র হত্যা করেছে। দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সব গণমাধ্যম বন্ধ করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আজও আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদেরকে দমাতে পারবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে হাজার হাজার ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষ্টি কালচার নষ্ট করছে। সরকার সংসদ থেকে শুরু করে সবকিছু ধ্বংস করে একটি ব্যর্থ জাতি তৈরি করতে চায়। তারা প্রতিনিয়ত জনগণের ঘৃণা কুড়াচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে বেগম খালেদা জিয়া, রুহুল কবির রিজভী, খন্দকার আবু আশফাকসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দিন। নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানো হবে। এরপরে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা ধীরে ধীরে চলছি। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছি।
নতুন কর্মসূচি : এ সময় যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ষষ্ঠ ধাপের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘গণপদযাত্রা’।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল খবির খোকন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজুলল হক মিলন, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহম্মেদ টিটু, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রনওকুল ইসলাম শ্রাবন প্রমুখ।
এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, কাজী আবুল বাশার, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শ্রম বিষয়ক সহ- সম্পাদক হুমায়ন কবির খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, মজিবুর রহমান, কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, ডা. মাযাহারুল আলম, আকরামুল হাসান মিন্টু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, তমিজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, মানিকগঞ্জ জেলার এসএ কবির জিন্নাহ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মাদ শামীম, সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহামানসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।