পাঁচ উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫ শতাংশের বেশি ছিলো না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৩ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:২১ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, পাঁচ উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫ শতাংশের বেশি ছিলো না। গতকাল বুধবার তথাকথিত নির্বাচন কমিশন যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠান করলো-সেটা হচ্ছে উপনির্বাচন। এই উপনির্বাচন গুলোতে ভোটারের সংখ্যা কোথাও তাদের (ইসি) হিসাব মতো ১৫ থেকে ২৫% বেশি হয় নাই।
আজ বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে গতকাল অনুষ্ঠিত পাঁচ উপনির্বাচনের চিত্র তু্লে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি করেন।
মির্জা ফরখরুল বলেন, আজকে পত্র-পত্রিকাগুলোতে যে ছবিগুলো আসছে দেখবেন একেবারে ২০১৪ সালে শফিউল আলম প্রধানের (প্রয়াত জাগপা প্রধান) ভাষায় কুত্তা মার্কা নির্বাচনের মতোই। অনলাইনে দেখেছি, কুকুর শুয়ে আছে মানুষ নাই। এই অবস্থায় তারা (সরকার) নিয়ে চলে গেছে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে।
গত বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, চাপাইনবাবগঞ্জ-২, ঠাকুগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ৬ আসনে উপনির্বাচন হয়। গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সাংসদরা পদত্যাগ করলে এই আসন গুলো শূণ্য হয়।
‘লুট-দুর্নীতির বিস্তার’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘যেখানে দুর্নীতি লাগামহীন, যেখানে চুরি হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য সেইখানে আপনার বিশ্ব মন্দার কথা বলে কোনো লাভ নেই। বিশ্ব মন্দার পরে আপনারা মানুষের জীবনকে দুঃসহ করে তুলছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রত্যেকটি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।”
‘‘চালের দাম আপনারা (ক্ষমতাসীনরা) বাড়াচ্ছেন, লবনের দাম, তেলের দাম আপনারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। আজকে বিদ্যুতের দাম ২ বার ৩বার, ৪বার, ৫বাব না ১৫ বার বাড়িয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুতে যে চুরি আপনারা করছেন সেই চুরি বন্ধ করলে তো বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয় না। গ্যাসে যে চুরি আপনারা করছেন সেই বন্ধ করলেও দাম বৃদ্ধি করতে হয় না। এরকম একটা বিষয় নয়।”
‘রাস্তা খোঁড়া: লুটের চলমান প্রক্রিয়া’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এখন নতুন করে রাস্তা খোঁড়া শুরু হয়েছে। এই যে চলমান প্রক্রিয়া লুটের এই তো চলছে। এভাবে লুট করে তারা বিদেশে পাচার করছে এবং দেশের প্রতি জনগণের প্রতি যেহেতু কোনো দায়বদ্ধতা নাই সেজন্য তারা আজকে লাগামহীন ভাবে দুর্নীতি করে চলেছে।” আমরা সরকারের এহেন অপকর্মের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
‘পররাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে’
সংসদ সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপানের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ শুধু জাপানকে কেনো আমরা তো চিঠি দিয়েছি বহু দেশকে। এটা সত্য। এদেশে চলমান যে শাসনব্যবস্থা, আওয়ামী লীগ সরকার তারা যে গণতন্ত্রকে ধবংস করে মানুষের উপরে অন্যায় অত্যাচার করে, দুর্নীতি-লুটপাটের মধ্য দিয়ে মানুষের পকেট কেটে নিয়ে তারা দেশকে ধবংস করছে। তারা যে সম্পূর্ণ এনফোর্স ডিজএ্যাপিয়ারেন্স করে রাজনৈতিক কর্মীদেরকে হত্যা করছে, গুম করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে প্রতিমুহুর্তে প্রতিনিয়ত, এই বিষয়গুলো তো অবশ্যই আমরা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছি।”
‘‘তারা সমানে মিথ্যাচার করছেন, সংসদে মিথ্যাচার করছেন, বিদেশীদের সামনে মিথ্যাচার করছেন- সবসময় বলছেন যে, এখানে নাকী কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি। বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে সেটার নজির খুব আছে। আমরা নিজেরাই তো এদেশে জানতাম না এনফোর্স ডিজএ্যাপিয়ারেন্স কাকে বলে? গুম করা কাকে বলে? আমরা এখানে জানতাম না। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা এটা জানতে পারছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মুনির হোসেন, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, আবদুল হালিম মিঞা, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, যুবদলের মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলে এসকে জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের কাজী আলমগীর হোসেন, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, জাসাসের লিয়াকত আলী, জাকির হোসেন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সরকারের দমনপীড়ন, বিদ্যুৎ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সদরে সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।