জনগণের কাছ থেকে টাকা লুট করতেই সরকার বিদ্যুতের দাম বার বার বাড়াচ্ছে : ড. মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৯ পিএম, ৩১ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:১৭ এএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জনগণের কাছ থেকে টাকা লুট করতেই সরকার বিদ্যুতের দাম বার বার বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের কাছে ‘নীরব পদযাত্রা’ কর্মসূচির তৃতীয় দিনের কর্মসূচির শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগ করেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে মাজার রোড দিয়ে মিরপুর এক নাম্বার হয়ে ১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত ৫ কিলো মিটার পথে দেড় ঘন্টার ‘নীরব পদযাত্রা’ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আপনারা জানেন, মাত্র ১৯ দিন আগে এই বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। সরাসরি যে নিয়ম আছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হলে এটা একটা কমিশনের মাধ্যমে যায়, গণশুনানি লাগে, এই গণশুনানিকে উপেক্ষা করে তারা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছিলো। আবার আজকে একইভাবে তারা আরো ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। আবার বলেছেন যে, মাসে মাসে নাকি এটাকে (বিদ্যুতের দাম) সমন্বয় করবে। অর্থাৎ আজকে তাদের হাতে টাকা নাই। এদেশের সাধারণ মানুষ থেকে লুট করে টাকা নেয়ার জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছে, পানির দাম বৃদ্ধি করছে। অথচ সরকার জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে পারে না, গ্যাস দিতে পারে না, পানি দিতে পারে না। এদেশের মানুষের অবস্থা আজকে অত্যন্ত দুর্বিষহ।
বিদ্যুৎ বিভাগ আজ মঙ্গলবার সকালে এক প্রজ্ঞাপনে পাইকারিতে গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করেছে। এর ফলে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা যা আগে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা ছিলো। আর ভারিত গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।
টাকার অভাবে পণ্য খালাস হচ্ছে না বলে জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিও একই কারণে। তারা আজকে পণ্য আমদানি করতে পারছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের স্টিমার এসে বসে আছে। টাকা দিতে পারে না বলে মাল খালাস করতে পারে না। বড় বড় কথা বলে। কারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবমূল্য বৃদ্ধি করছে? আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা যারা বিদেশে টাকা পাচার করে আজকে এদেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি করেছে, অর্থনীতি ধবংস করে দিয়েছে। দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবনমনের কথা উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আপনারা দেখেছেন এতো লেখালেখি হচ্ছে, বিদেশিরা চাপ দিচ্ছে তারপরেও গত কয়েক মাসে দেখেন কি পরিমাণ দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনারা হয়ত জানেন, সারা পৃথিবীর বুকে এই দুর্নীতির একটা পরিলেখক আছে সেই পরিলেখক আমরা সর্বনিম্ন ১৩ নম্বরে ছিলাম। সেটা আরো এক ধাপ কমে আজকে দেখা গেলো ১২ তে নিচে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ১২ আমরা যেমন বলি, আন্তর্জাতিক হিসাবেও দেখা যাচ্ছে যে, দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুর্নীতি দমন তো দূরের কথা। যারা দুর্নীতি করে আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট। অতএব তাদের দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। সেজন্য দেশের মানুষ এই সরকারের পদত্যাগ চায়, যত দ্রুত বিদায় করতে চায়।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের এতো নির্যাতনের পরেও বিএনপি ঘরে বসে যায়নি, এদেশের জনগণও বসে যায়নি। বরং আপনাদের (সরকার) বিদায় করার জন্যে রাস্তায় নেমেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, রাস্তায় আছি। আওয়ামী লীগ ভয়ে ভীতি হয়ে আমাদের পথযাত্রাকে নানা নামে সমালোচনা করছে। আমরা বলতে চাই, আপনাদের সময় শেষ। আগামী দিনের বাংলাদেশে হবে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বাংলাদেশ। অতএব আপনারা বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন। আমরা কিন্তু আপনাদের বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রার এই পদযাত্রা করছি। আপনারা এটাকে যা-ই মনে করেন না কেনো আপনাদের বিদায়ের এটা হচ্ছে আমাদের এই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা। তিনি বলেন, বেশি সময় নাই। আমরা অতিদ্রুত এই সরকারকে বিদায় দিতে সমর্থ হবো। এজন্য আমাদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। চারদিনের এই পদযাত্রা কর্মসূচির প্রথম দিন গত শনিবার বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত, সোমবার যাত্রাবাড়ী থেকে জুরাইন রেলগেট পর্যন্ত পথযাত্রা করে বিএনপি। আজ বুধবার শেষ দিনে এই কর্মসূচি হবে মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত। এই পদযাত্রায় গাবতলী-মিরপুর এলাকার বিভিন্ন ওয়ারর্ডের নেতা-কর্মী ছাড়াও মহিলা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেয়।
পদযাত্রায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সহ- সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল আসিত আনজু, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এস এ ছিদ্দিক সাজু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সহ-সভাপতি নায়াবে ইউসুফ, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএস জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াসিন আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান প্রমুখ।