সড়কের পাশের অর্ধশত তালগাছ মারতে বাকল তুলে কীটনাশক প্রয়োগ করলেন আ.লীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৮ এএম, ২৭ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:০৬ পিএম, ৯ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
রাজশাহীর বাগমারায় উপজেলার সড়কের বাইগাছা এলাকায় নিজের পুকুরপাড়ে আমগাছ লাগিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলম। পুকুরটি মূলত মাথাভাঙ্গা-হাটগাঙ্গোপাড়া সড়কঘেঁষা। ওই সড়কের পাশে আগে থেকেই তালগাছ লাগানো ছিল। এসব তালগাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছগুলো ঠিকমতো বেড়ে উঠছে না। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নিজের গাছগুলো দ্রুত বড় করে তোলার জন্য তালগাছের বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম। এতে সড়কের পাশে থাকা অন্তত ৫০টি তালগাছ মরে যাচ্ছে।
অভিযুক্ত শাহরিয়ার আলম বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও করখণ্ড দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। শাহরিয়ার আলম তালগাছ মেরে ফেলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাথাভাঙ্গা-হাটগাঙ্গোপাড়া সড়কের বাইগাছা এলাকায় শাহরিয়ার আলম প্রায় ২৭ বিঘা কৃষিজমিতে পুকুর খনন করেন। ছয় থেকে সাত মাস আগে সড়কঘেঁষে পুকুরটি খনন করা হয়। মাস দুয়েক আগে তিনি ওই পুকুরপাড়ে বিভিন্ন জাতের আমগাছ লাগান। আমগাছের পাশেই আগে থেকে স্থানীয় লোকজনের লাগানো সারিবদ্ধ তালগাছ আছে। প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কের উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালগাছ লাগিয়েছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, ওই পুকুরপাড়সংলগ্ন অন্তত ৫০টি তালগাছের ক্ষতি করা হয়েছে। ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এরপর ওই স্থানে কীটনাশক জাতীয় তরল কিছু প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে শাহরিয়ার আলম প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা প্রকাশ্যে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি। এর আগে সড়কের পাশেই পুকুর খননের প্রতিবাদ করে অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাই স্থানীয় লোকজন গাছ মেরে ফেলার বিষয়টি মুঠোফোনে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তবে উপজেলা প্রকৌশলী এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
সম্প্রতি বাইগাছা এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, পুকুরঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোকে আধা মরা হয়ে গেছে। পুকুরের বিপরীত দিকে সড়কের পাশে ইটভাটা। তবে সড়কের ওই পাশের তালগাছগুলো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। শুধু পুকুরপাড়ের আমগাছের পাশে থাকা তালগাছগুলোই আক্রোশের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে অনেক তালগাছের ডাল মরে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলম মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, ওই সড়কের পাশের তালগাছগুলো এক বৃদ্ধ লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে কয়েকটি গাছের তিনি ক্ষতি করেছেন বলে স্বীকার করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। কাজটি অমানবিক হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘সাক্ষাতে সব কথা হবে।’
শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। কাজটি মোটেই ঠিক হয়নি। এই ঘটনার সঙ্গে যে ব্যক্তি জড়িত থাকবেন, তাঁকেই আইনের আওতায় আনা উচিত।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বাগমারা উপজেলা প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বলেন, খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়কটি এলজিইডির। তবে তালগাছগুলো কে লাগিয়েছিল, সেটা তিনি জানেন না।