জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক : ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০১ পিএম, ২০ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:৩৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) ইবরাহিম বীরপ্রতীক। তারা বলেন, জিয়া শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তিনি ছিলেন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ব্রিগেড গঠন করেছিলেন, জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
জেনারেল (অব) ইবরাহিম বলেন, জিয়াউর রহমান প্রথমে নিজের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সংসদে মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন বলে জানান জেনারেল (অব) ইবরাহিম।
তিনি বলেন, মেজর রফিকুল ইসলাম সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। তার কাছে আওয়ামী লীগ নেতারা গেলে তিনি বলেছিলেন আমার চেয়েও সিনিয়র বাঙালি অফিসার আছে তাদের কাছে যান। তখন আওয়ামী লীগ নেতারা মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে গিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮১ সালে তৎকালীন সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভায় তারা এসব মন্তব্য করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সম্মিলিত বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে তারা জিয়াউর রহমানকে, জিয়ার পরিবারকে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত দলকে ভয় পায়। যার কারণে আমাদের ডাক দেয়া গণসমাবেশকেও ভয় পায়। আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি করতে দিতে চায় না। আওয়ামী লীগের অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, জনগণের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষ আওয়াজ তুলেছে তারা গণতন্ত্র হত্যাকারীদের আর ভোট দেবে না। যারা দেশের অর্থনীতিকে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করে ধ্বংস করে দিয়েছে তারা অর্থনীতিকে আর মেরামত করতে পারবে না। যারা দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। পেশাজীবীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং অবদানের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রত্যাশা এ সরকারকে বিদায় করে বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারকে বিদায় করার কোনো বিকল্প নেই। বিদায় করার জন্য আমরা ১০ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ যাতে গঠিত হয় সে জন্য রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ২৭ দফা ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় নেতা রয়েছেন যার প্রশংসা করতে করতে বর্তমানে সরকার পাগল হয়ে যায়। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করেন, যে নেতার জন্য এত বন্দনা তার সর্বশেষ রাজনৈতিক দর্শন কি? গণতন্ত্র হত্যা, বাকশাল প্রতিষ্ঠা। অস্বীকার করতে পারবেন? পদ্মা সেতু তৈরি ও যমুনা সেতু তৈরি হয়েছে, এটা নাকি তার স্বপ্ন ছিল। রাজনৈতিক দর্শন ও গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা এসব কথা তারা বলে না, আমরাও বলতে চাই না। জনগণ এর বিচার করবে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সফল। যার কর্মজীবনের তিনটি সফলতা নিয়ে তাঁকে বিশ্লেষণ করা কঠিন।
তিনি বলেন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা হচ্ছে সার্বভৌমত্ব দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে ধ্বংস করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার করা বলে। সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল বিএনপি। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আর তারা হলো মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক দল।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্র হত্যা করেছিল, সেখানে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। এরশাদ গণতন্ত্র হত্যা করেছিল, সেখানে আমাদের নেত্রী এরশাদের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে জন্য সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংযুক্ত করেছিলেন।
যেখানে আওয়ামী লীগ সেখানে গণতন্ত্র কোনো অবস্থায় নয় দাবি করে তিনি বলেন, যেখানে আওয়ামী লীগ সেখানেই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। যেখানে বিএনপি সেখানেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইতিহাস। অতএব আজকের দিনে মানুষ কিসের সঙ্গে রয়েছে? নেই গণতন্ত্র, সাথে সাথে মানুষের অধিকার নেই, অর্থনৈতিক সংকটে দেশ।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুল কুদ্দুস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাবির সাদাদলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^দ্যিালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান, সাংবাদিক নেতা রাশেদুল হক প্রমুখ।