জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আন্দোলন সফল করতে প্রত্যয় বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৫ পিএম, ১৯ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৪৩ এএম, ৬ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আন্দোলন সফল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপির আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা আয়োজন করে বিএনপি। সকালে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিবসহ নেতা-কর্মীরা। জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন বিএনপি গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ১০ দিন ব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের জেগে উঠতে হবে। আমার মকবুল ভাই (ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মকবুল হোসেন) যিনি ৭ ডিসেম্বর প্রাণ দিয়েছেন, আমার সেই নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ভোলার ভাইয়েররা যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিয়েছি আমরা যে, আমরা বাংলাদেশকে একটা উদার রাষ্ট্র তৈরি না করে আমরা ঘরে ফিরবো না, বিজয় অর্জন না করার পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। জেল-জুলুম যাই আসুক আমাদের সামনে আমরা সেইগুলো উপেক্ষা করে সামনে দিকে এগিয়ে যাবো। আজকের এই আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিনে আসুন আমরা সেই শপথ গ্রহণ করি, আমরা শপথ গ্রহণ করি আমরা যে ১০ দফা দাবি দিয়েছে সেই দাবি আমরা আদায় করব। আমরা অবশ্যই বাধ্য করব এই সরকারকে পদত্যাগ করতে এবং অবশ্যই সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে আমরা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেভাবে একটা জাতীয় নির্বাচন করতে বাধ্য করব।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কী আমাদের নেতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদন করছি? আমরা কী আমাদের শপথে অটুট আছি? আমরা কি আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব আমাদেরকে যে, বাংলাদেশকে ফিরে নিতে বলেছেন টেক ব্যাক বাংলাদেশ- আমরা কি সেই লক্ষ্যে স্থির আছি? আমরা কি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই? আমরা কি আমাদের বন্ধুরা এখনো কারাগারে রয়েছেন তাদের মুক্ত করতে চাই? আসুন তাহলে আর কালক্ষেপণ নয়, আমরা যে আবেগ নিয়ে, যে সাহস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি সেই সাহস নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আমরা অবশ্যই জয়যুক্ত হবো এবং এদেরকে (আওয়ামী লীগ সরকার) পরাজিত করে এদেশে সত্যিকার অর্থে একটা মুক্ত গণতান্ত্রিক উদার রাষ্ট্র নির্মাণ করব-এই হোক আজকের শপথ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন এই সরকার তারা নির্বাচন না করে ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে তার আগের রাতে নির্বাচন করে জনগণকে পুরোপুরি প্রতারণা করে ক্ষমতায় বসে আছে। এখনো বসে আছে এবং যেমন করে হোক তারা আবারো ক্ষমতায় যেতে চায়। সেখানেই মানুষ জেগে উঠেছে। জিয়াউর রহমানের আদর্শকে সামনে রেখে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে লড়াকু যে জীবন তাকে সামনে রেখে, তারেক রহমানের আদর্শকে সামনে রেখে মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আমরা দেখছি যে, কিভাবে মানুষ এই সরকারের পতন চায়।
বিজয় কীবোর্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এদের (সরকার) অপকীর্তির কথা বলে শেষ করা যায় না। আজকের পত্রিকায় দেখুন- বিজয় কী বোর্ড আত্মগোপন ও তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন। আমাদের যে মোবাইল স্মার্ট সেট যেগুলো এই স্মার্ট সেটে বিজয় কীবোর্ডকে কম্বোলসারি (বাধ্যতামূলক) করা হচ্ছে। কারণ এই বিজয় কীবোর্ডের মালিকানা হচ্ছে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের, যিনি তথ্য প্রযুক্তি তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী (ডাক, টেলিয়োগাযোগ তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী)। কত বড় ভয়ংকর কথা। দুর্নীতি কি পরিমান হতে পারে? কখনই একজন মন্ত্রী নিজের কোম্পানিকে সরকারের কোনো লাভজনক কাজের মধ্যে জড়াতে পারে না এটাই হচ্ছে নিয়ম-নীতি-আইন। সেখানে তারা প্রকাশ্যে এই কাজটা করছে সরকারি ঘোষণা দিয়ে।
নব্য আওয়ামী লীগাররা বিদেশে বাড়ি কিনছে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল টেলিভিশনে দেখলাম যে, বিদেশে বিশেষ করে লন্ডনেও সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিরা বাড়ি কিনছে। এরা কারা? এরা হচ্ছে নব্য আওয়ামী লীগাররা যারা দেশের সম্পদ লুট করেছে তারা এসব বাড়ি কিনছে। এখানেই বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্যটা। সেখানেই জিয়াউর রহমান সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্যটা। জিয়াউর রহমান সাধারণ জীবনযাপন করতেন। আমার মনে আছে তার শাহাদাতের পরে যখন তার লাশ পুরনো সংসদ ভবন এখন যেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেখানে লাশ নিয়ে আসা হলে জনসাধারণকে দেখানোর জন্য, স্রোতের মতো মানুষজন আসতে থাকলো তখন একটু দূরে দুইজন বিদেশে দাঁড়িয়ে দেখছেন তার কফিনের দিকে তাকিয়ে। আমি তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমরা তো বিদেশি। তোমরা কেনো এসেছো শ্রদ্ধা জানাতে। তারা বললেন, আমরা বিশ্বব্যাংকে কাজ করি। আমরা অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রী দেখেছি, রাষ্ট্রপতি দেখেছি, সরকার প্রধান দেখেছি কিন্তু এরকম একজন সত প্রেসিডেন্ট আমরা কখনো দেখি নাই। এখানেই পার্থক্য।
তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষ জানে আপনারা (আওয়ামী সরকার) সম্পদ লুন্ঠন করছেন, সারাদেশের মানুষ জানে যে, আপনারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। যাদের পায়ে চম্পল ছিলো না তারা এখন রোজগার্ড গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটাই বাস্তবতা। সেজন্য আমাদেরকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ সেই আদর্শকে সামনে নিয়ে এগুতে হবে। তার যে অসাধারণ সাহস, তার যে অসাধারণ প্রজ্ঞা, তার যে দূরদৃষ্টি সেই দূরদৃষ্টিকে সামনে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সৌভাগ্য আমাদের নেতৃত্বে আছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার উত্তরসূরী তারেক রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই আন্দোলনে যারা ভয় পাচ্ছেন তাদের নেতারা বলছেন, এমনকি গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছেন যে, বিএনপি আর গণতন্ত্র- এটা নাকি.. গণতন্ত্রের জন্য নাকি বিএনপি কথা বলতে পারে না। অথচ এই আওয়ামী লীগ সেই ১৯৭৫ সালে বাকশাল করে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, বর্তমানে দিনের ভোটে রাত্রে ডাকাতি করে এবং বয়কট নির্বাচনে তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। শুধু জাতীয় নির্বাচন হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসাথে যায় না, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র সাংঘর্ষিক। বিএনপি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিদার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা শুনলে এদেশের কিছু লোকের গাত্র দায় হয়। বিএনপির শক্তি এই দেশের জনগণ। বিএনপির পক্ষে জনস্রোত দেখে আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকারের এতো গাত্রদাহ যে তারা বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার করে, মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে। আমি বলতে চাই, কোনো লাভ নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির জনস্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না। বিএনপির বিএনপির জোয়ার থামবে না । থামানো যাবে না । বিএনপির সাথে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এখন ‘তালা চাবির এনামুল’ হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা যারা কারাগারে ছিলাম তাদের একটা অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের কোন কিছু ভেঙে গেলে, যেকোনো দরকারে মাইকে ডাকা হতো তালাচাবির এনামুল হাজির হন। যেকোনো সমস্যায় সে এক হাতে সব কাজ করে দিত। আওয়ামী লীগের এখন সেই অবস্থা তালাচাবির এনামুলের মত। তারা একহাতে গুম খুন করছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ আমরা কখনো বলিনি যে আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি আ’লীগের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে তারপর নির্বাচনে যাব। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, গ্যাসের দাম ১৬ থেকে ৩২ টাকা করা হয়েছে বাপের তালুকদারী। এত জিনিসপত্রের দাম আরো বেড়ে যাবে। জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তিনি বলেন, আমরা কখনো বলিনি যে টুকা দিয়ে, ধাক্কা দিয়ে সরকারের পতন ঘটাবো, আমরা বলেছি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবো।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ। এছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর নাসির, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ডা. এজডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।