আজ জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী
রফিক মৃধা, দিনকাল
প্রকাশ: ০৬:৩৮ পিএম, ১৮ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:১৬ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় নিভৃত পল্লী বাগবাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক, অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসী ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক হিসেবে জিয়াউর রহমান ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৮১ সালে কতিপয় বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তাঁর মাতা-পিতা তখন আদর করে কমল নামে ডাকতেন। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতায়। তাঁর বাবা মনসুর রহমান তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। কলকাতার হেয়ার স্কুলে শহীদ জিয়া ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে শিশু জিয়া করাচী চলে যান। সেখানে কেটেছে তাঁর স্কুল ও কলেজ জীবন। করাচীর স্কুল-কলেজে অধ্যয়নকালে শহীদ জিয়া একজন ভাল হকি খেলোয়াড় ছিলেন। স্কুলে তিনি ইংরেজিতে ভাল বক্তৃতা দিতে পারতেন। কৈশোরে নির্মেদ দেহের অধিকারী এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। করাচীর ডি জে কলেজে পড়ার সময় ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসাবে শহীদ জিয়া যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে শহীদ জিয়া কমান্ডো ট্রেনিং লাভ করেন। ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে জিয়াউর রহমান ঢাকার অদূরে জয়দেবপুর সাব ক্যান্টনমেন্টে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাচে লিয়নে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসাবে যোগদান করেন। একই বছর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানি যান। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। তাঁর ঘাঁটি ছিল ষোলশহর বাজারে। এখান থেকেই শহীদ জিয়া দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালে জাতির সবচেয়ে বড় বিপদের দিনে মুক্তিপাগল দিশেহারা জনগণের কাছে একটি “অবিস্মরণীয় কণ্ঠস্বর” তাদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করেছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে জাতির সেই ক্রান্তিলগ্নে ভেসে এসেছিল একটি কণ্ঠস্বর ‘আমি মেজর জিয়া বলছি।’ সেই কণ্ঠ সেদিন অযুত প্রাণে নতুন সঞ্জীবনী মন্ত্র এনে দিয়েছিল। মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দিশেহারা গোটা জাতি। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি...বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’- তাঁর এই অবিস্মরণীয় অবিনাশী ঘোষণায় পথহারা মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে। জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মেজর জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে এ দায়িত্ব অর্পণ করার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বৃহত্তর এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি চৌকস জেড ফোর্স গঠন ও পরিচালনা করেন।
মুক্তিয়োদ্ধকালীন দীর্ঘ নয় মাসে কোনো একটি দিনও তিনি তাঁর স্ত্রী বা পুত্রের কথা চিন্তা করেন নাই, দেশ আর দেশের মানুষই ছিলো তাঁর সার্বক্ষণিক চিন্তায়। যুদ্ধ শেষে জিয়াউর রহমান পুনরায় সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন এবং ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফের পদে বহাল হন।
আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্রান্তিকালে বিদ্রোহী কবির ধূমকেতুর মতোই ত্রাতার ভূমিকায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি একজন সৈনিক থেকে ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ও ঈর্ষণীয়। তাঁর দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো ‘বাংলাদেশ’। তার সততা নিয়ে তাঁর চরম শত্রুও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহমাদ ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হলে সেনাবাহিনীসহ গোটা জাতির ভাগ্যোন্নয়নে তখন বিরাজ করছিল চরম অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে খোন্দকার মুশতাককে পাল্টা আরেক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে আধিপত্যবাদের ক্রীড়নকরা ক্ষমতা দখল করে। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর আধিপত্যবাদীদের এদেশীয় চরেরা ষড়যন্ত্র করে জিয়াউর রহমানকে বন্দী করে। কিন্তু ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে সিপাহী-জনতা তাঁকে মুক্ত করেন। সে সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় নেতৃত্বশূন্য জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় সৈনিক-জনতা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতির চরম অধঃপতনের সময়ে মহান দেশপ্রেমের আলোকবর্তিকা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তলাবিহীন ঝুড়ির বদনামমুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে বাকব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি বিদেশে শ্রমবাজার তৈরি করে জনশক্তিতে পরিণত করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে ইপিজেডের শুভ সূচনা করেন এবং তা গণচীনের আগেই। তাঁর কর্মসূচির মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নিহিত রয়েছে যা হলো-উৎপাদনমুখী রাজনীতি, বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, ন্যায়ভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। এই বিষয়গুলো ছিল তাঁর রাজীনতির মূল লক্ষ্য। তাঁর অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তাঁর সুশাসনে উদীয়মান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আসন লাভ করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পথপ্রদর্শক। তাঁর সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। পার্থিব লোভ-লালসা ও ক্ষমতার মোহ তাঁকে ন্যায় ও সত্যের আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুৎ করতে পারেনি। অন্যায় ও অসত্যের নিকট তিনি কোনদিন মাথানত করেননি। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা, নির্লোভ, নির্মোহ ও গভীর দেশপ্রেমসহ বহু সৎ গুণাবলী দিয়ে তিনি জাতির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি দেশগড়া কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাঁর বলিষ্ঠ, গতিশীল ও পরিকল্পিত নেতৃত্বে দেশ সত্যিকার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেন। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অগ্রভাগে এনে দিয়েছিলেন। জিয়ার ঈর্ষণীয় এই জনপ্রিয়তা ও দেশপ্রেমই তাঁর জন্য কাল হয়েছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা চট্টগ্রামে তাঁকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদতে গোটা পৃথিবী শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এ শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র যা আজ ভূলুণ্ঠিত।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষণজন্মা নেতা ছিলেন। জিয়াউর রহমান কর্মগুণে চিরঞ্জীব হয়ে আছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের তুলনা তিনি নিজেই। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ধরাধাম থেকে বিদায় নেন। ব্যক্তির মৃত্যু হলেও আদর্শের মৃত্যু নেই। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নেই তাঁর আদর্শ অমøান হয়ে আছে। জিয়াউর রহমানের আদর্শ আঁকড়ে ধরে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ আছে। দেশ-জাতি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিরাজমান অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ হতে পারে পাথেয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে বলেন, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। তাঁর পিতা মনসুর রহমান পেশায় ছিলেন একজন রসায়নবিদ। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত করার পর জিয়াউর রহমান পিতার কর্মস্থল করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সাথে তিনি যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এক নং সেক্টরের এবং পরবর্তীতে ‘জেড ফোর্স’ ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশ্ব-মানচিত্রে তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন। জাতির মর্যাদাকেও বিশ্বব্যাপী সমুন্নত করেছেন তিনি। একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও তাঁর জীবনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের সকল সঙ্কটে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বার বার অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করেছেন। অস্ত্র হাতে নিয়ে নিজে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে আবার পেশাদার সৈনিক জীবনে ফিরে গেছেন। আজকের এই দিনে আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
তিনি বলেন, জাতির এক ক্রান্তিকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক ঐতিহাসিক যুগান্তকারী দায়িত্ব পালন করেন। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য নেতৃত্বহীন জাতির দিশারী হয়ে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় এবং তিনি যুদ্ধে অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। তিনি হন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় মহান নেতা। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক আপসহীন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক। তাই সব ধরনের আধিপত্যকামী বৈদেশিক চাপ ও অশুভ প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টাকে অগ্রাহ্য করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ জিয়াউর রহমানের এক অবিস্মরণীয় অবদান। জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে এখনো স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি সর্বজনবিদিত। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিকনির্দেশনা। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অপরাজনীতি দ্বারা জনগণকে প্রতারিত করে স্বাধীনতা-উত্তর ক্ষমতাসীন মহল যখন মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করে গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দিয়েছিল, দেশকে ঠেলে দিয়েছিল দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্তির মতো জাতির এরকম এক চরম দুঃসময়ে ৭ নভেম্বর সৈনিক-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে শহীদ জিয়াউর রহমান দেশের হাল ধরেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশের সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী হয় এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। জাতির মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তাদের জাগিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছিলেন। তাঁর স্বল্পকালীন শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি যে গভীর দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা আজো কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। এমনকি তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীরাও মৃত্যুর পর তাঁর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ কারণেই এ দেশের জনগণের অন্তরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রদর্শিত পথেই আমরা স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক শক্তির থাবা থেকে মুক্ত হবো ও গণতন্ত্র ফিরে পাবো। আর এর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে গণতন্ত্রের মা গৃহবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য জোর দাবি জানাই। একই সাথে গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের হারানো মৌলিক ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করতে চলমান সংগ্রামে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ আজ জেগে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি অচিরেই বাংলাদেশের মানুষ কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাবে, হারানো গণতন্ত্র ফিরে পাবে। শহীদ জিয়ার কালজয়ী দর্শন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ঐতিহাসিক ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে উদিত নতুন সূর্যের আলোয় দেশকে আলোকিত করার অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে তাঁর ৮৭তম জন্মবার্ষিকীতে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৭তম জন্মবার্ষিকীতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ ভোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১১টায় শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া করা হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত থাকবেন। বেলা ১২টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বিএনপির উদ্যোগে ড্যাবের সহযোগিতায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধন করবেন। বেলা ৩টায় ইঞ্জিনির্য়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শহীদ জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন। রাতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অসহায় মানুষের মাঝে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। ১৯ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোকসজ্জা করা হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন পৃথক পৃথক পোস্টার প্রকাশ করেছে। ঐদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দেশব্যাপী বিএনপির মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন, আলোকসজ্জা, আলোচনা সভা, দোয়া, শীতবস্ত্র বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ জানুয়ারি মহিলা দল, ২১ জানুয়ারি শ্রমিক দল, ২২ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা দল, ২৩ জানুয়ারি কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী যুবদল ২৬ জানুয়ারি পঞ্চগড় ও খুলনায় অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করবে, ২৬ জানুয়ারি স্বেচ্ছাসেবক দল আলোচনা সভা করবে।