র্যাব নয়, সরকারের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫১ এএম, ১৮ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:২৩ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, র্যাবের ওপর নয়, সরকারের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসা উচিৎ। কারণ, সরকারের নির্দেশেই সব অপকর্ম করা হয়েছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে দেশে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর নিয়ে মিথ্যাচার করেছে সরকার এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য নিয়ে মিথ্যাচার করেছে সরকার। যা মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে প্রমাণিত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা আনন্দিত নই, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত সরকারের বিরুদ্ধে। জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপিকে নানা ধরনের উসকানি দিচ্ছে। আর ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে বিএনপি। বিএনপি কোনো উসকানির ফাঁদে পা দেবে না।
এর আগে গতকাল রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মহাসচিব সভাকে অবহিত করেন।
বৈঠক শেষে স্থায়ী কমিটির আলোচ্য বিষয়গুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোর আন্দোলনকে দমন করার জন্য অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার ও আওয়ামী লীগ আন্দোলনের শুরু থেকেই উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী হামলা করছে। ইতিমধ্যে পুলিশের গুলি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় ১৫ জন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। অসখ্য নেতা-কর্মী আহত ও প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় ত্রাস সৃষ্টি করার লক্ষে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সময় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের এই ধরনের পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা ও নেতৃবৃন্দের উসকানিমূলক বক্তব্য, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া, হাত জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও নির্দেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের আরও অনুপ্রাণিত করছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটাতে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সরকারের মন্ত্রীবৃন্দ মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার কথা বললেও বাস্তবে সন্ত্রাসী পরিবেশ তৈরী করছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাধা প্রদান, হামলা, গুলিবর্ষণ, পরিবহন ধর্মঘট সৃষ্টি করা, হোটেল, রেস্তোরা বন্ধ করে বিরোধী দলের ও বিএনপি’র কর্মসূচীগুলো পন্ড করার হীন নীল নকশা তৈরী করছে। গণবিরোধী সরকার বিরোধী আন্দোলনে জনগণের যে ঢল নামছে তা দেখে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ ও অনির্বাচিত সরকার হত্যা, হুমকি, মামলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চায়।
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগে গত চার বছরে ১ হাজার ২০৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। চরম নির্বতন মূলক আইনের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তি, সংবাদ কর্মী, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও আটকের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর চরম আঘাত করা হচ্ছে ও মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর এই আইনের অপপ্রয়োগের ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। অবিলম্বে এই আইনের আওতায় বন্দি ব্যক্তিদের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, মুঠোফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নজরদাবী করার জন্য ইসরাইলি এক কোম্পানীর কাছ থেকে প্রযুক্তি ক্রয় করা হয়েছে বলে দেশ বিদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী, অনির্বাচিত সরকার তাদের অবৈধ উপায়ে দখলকৃত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নজরদারীতে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ক্রয় ও আড়িপাতার আইন প্রণয়ন করতে চলেছে।