২৫ জানুয়ারি সকল মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশ
সরকারের হটানোর আন্দোলনে ‘ইস্পাতকঠিত গণঐক্য’ সৃষ্টি করতে হবে : ড. মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৮ পিএম, ১৬ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:৪০ পিএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সরকার হটানোর আন্দোলনে ‘ইস্পাতকঠিত গণঐক্য’ সৃষ্টি করতে বিএনপিকেই দায়িত্ব নিতে হবে উল্লেখ করে এজন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আজ সোমবার বিকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলন ১০ দফা দাবিতে ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আগামী ২৫ জানুয়ারি সারাদেশে সকল মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ১০ দফা দাবিসহ বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর একটি মিছিল কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড় ঘুরে ফকিরেরপুল মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার নয়া পল্টনে এসে হয়। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে সরকারের পদত্যাগের ১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি মহানগর ও উপজেলায় একযোগে এই কর্মসূচি হয়। ১০ দফা দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে এটি তার তৃতীয় কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনে প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল এবং ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে- যেখানেই গণতন্ত্র সেখানেই বিএনপির অবদান। আর যেখানে আওয়ামী লীগ সেখানেই গণতন্ত্রকে হত্যা। তাই আজকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব নিতে হবে এদেশের সকল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ইস্পাতকঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে আগামী দিনে সরকার বিদায়ের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে। আপনাদের কাছে সর্বশেষ আহ্বান- আমরা এই পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সকল প্রকার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আগামীদিনেও সরকার বিদায় হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে এই সরকারকে বিদায় করবো- এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
আরো লুট করতেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, কয়েকদিন আগে সরকার কোনো নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে, বিদ্যুতের যে একটি কমিশন আছে তাদের কোনো মতামত না নিয়ে, গণশুনানি না করে সরকার প্রশাসনিক হুকুমের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে এবং বলেছে যে, মাসে মাসে নাকি এই বিদ্যুতের দাম তারা সমন্বয় করবে। অর্থাৎ এই ৫ শতাংশ নয়, আরো ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম তারা বৃদ্ধি করবে। আজকে সারাদেশের মানুষ এই বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে গিয়ে তারা দুর্ভোগে পড়েছে। আপনারা জানেন ২০০৬ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যখন সরকার ছিলো বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি যে সর্বোচ্চ দর ছিলো ২ টাকা ৬০ পয়সা এখন তা ১১ টাকার ওপরে। কেনো এই দাম করেছে? এই সরকার ক্ষমতায় এসে যেসকল বিদ্যুৎ ইউনিট মাত্র স্বল্পকালীন সময়ের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ভাড়া করে আনা হয় সেসব রেন্টাল বিদ্যুৎ পাওয়ার তারা এদেশে স্থাপন করেছে এবং এই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের মাধ্যমে যাতে তারা লুটপাট করতে পারে সেজন্য পার্লামেন্ট থেকে ইনডেমনিটি পাস করেছে। ১৪ বছর ধরে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে লুট করেছে। এখনও যে দাম বৃদ্ধি এটাও লুটপাট এবং অর্থ পাচার করার জন্য করা হয়েছে। বিভিন্ন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে অর্থ লুট করে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একদিকে জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন। অন্যদিকে সরকার বিরোধীদের লাগামহীনভাবে দমনের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। এই সরকার অত্যাচারী, ফ্যাসিস্ট। সময় আর বেশিদিন নাই। রক্ষা পাবে না। ৭২ এর সংবিধানের কথা বলেন, কি কারণে বাকশাল করেছিলেন? বলতে কি পারবেন। প্রশাসন আর সরকার যৌথভাবে লুটপাট করছে। আমাদের সাফ কথা, মহান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ডাকে। অনেকে শহীদ হয়েছেন যুদ্ধে। আমরা বেঁচে আছি এই দেশ দেখার জন্য। বোনাস পেয়েছিলাম ৬০ বছর, হয়তো আর কয়েকদিন বাঁচব। না হয় বাঁচলাম না। মুক্তিযুদ্ধের মত আমার যুদ্ধ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার জন্য জীবন দিলাম।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি, আর বাঁচার উপায় নাই। এ সরকার টাকা পাচার করে মালয়শিয়াসহ অন্য দেশে বাড়ি করেছে। আর বাংলাদেশের মানুষ কষ্ট করবে তা হতে পারে না। এটা হতে দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, এই সরকার সব অগণতান্ত্রিক কাজ করেছে। বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারী দল। বিএনপি আবার ধ্বংসস্তূপ থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করবে ইনশআল্লাহ।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের পকেট প্রতিমুহূর্তে কাটা হচ্ছে। এটা করছে ভোট চোর সরকার। তারা ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকাতে নিয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত তারা জনগণের পকেট চুরি করে যাচ্ছে। এ টাকা তারা বিদেশে পাচার করছে। এই লুটপাট আগামী দিনে চলতে দেয়া হবে না। এখন সব লুণ্ঠনের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। কোনভাবেই তারা রেহাই পাবে না। বাংলাদেশের মানুষ আজ আন্দোলনের মালিকানা হাতে তুলে নিয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও আবদুস সালাম আজাদ।
এছাড়াও বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান মাশুক, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সহ-গণ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, ফরিদা ইয়াসমীন, আকরামুল হাসান মিন্টু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, তাঁতী দলের কাজী মুনীরুজ্জামান মুনীর, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, উলামা দলের মাওলানা আবুল হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, যুবদলের সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান দুলাল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসহাক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মাদ শামীম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মজিবুর রহমানসহ লাখ লাখ নেতাকর্মী মিছিলে অংশ নেন।