আ.লীগ সভাপতিকে তুলে নিয়ে পেটালেন, এরপর বাড়িতে ঢুকে গুলি-ভাংচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৮ এএম, ১৬ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:৪৯ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফাকে (৫৮) তুলে নিয়ে মারধর করার ১৮ দিন পর এবার তার বাড়িতে ঢুকে গুলি ছোড়া ও ভাংচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে খিলপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
গতকাল রোববার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম মোস্তফার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার খিলপাড়া বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সুমনের ব্যক্তিগত অফিসে ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকে তুলে নিয়ে পেটানো হয়।
ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, প্রথম ঘটনার জের ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সুমনের নির্দেশে তার অনুসারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে ৭-৮ দুস্কৃতিকারী তার বাড়িতে প্রবেশ করে সিসি ক্যামেরার লাইন বিচ্ছিন্ন করে সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে। একপর্যায়ে তারা বসতঘরের জানালার গ্লাস ভাংচুর করে ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে।
খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.মীর হোসাইন জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা কম্বল বিতরণের জন্য খিলপাড়া ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক কে তথ্য সংগ্রহ করে স্লীপ করতে বলে। তারা দলীয় নেতাকর্মির মাঝে এই সব কম্বল বিতরণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে স্লীপ তৈরী করছিলেন। এই নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সুমন ক্ষুদ্ধ হয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফাকে প্রশ্ন করে তাকে না জানিয়ে কেন কম্বলের স্লীপ তৈরী করা হচ্ছে। কম্বলের স্লীপ নিয়ে বাকবিতন্ডার জের ধরে গত ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে উপজেলার খিলপাড়া বাজার থেকে সুমন তার দুই অনুসারী দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফাকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায় তার ব্যক্তিগত অফিসে। সেখানে সুমন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফাকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করতে গালমন্দ করে। একপর্যায়ে সুমন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফাকে চড়,থাপ্পড় দিয়ে বুকে লাথি মারে এবং বেধড়ক মারধর করে। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। তিনি ১৩ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরলে আগের ঘটনার জের ধরে এবার তার বাড়িতে হামলা-ভাংচুর ও গুলি চালানো হয়।
খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.মীর হোসাইন আরও বলেন,আমি স্থানীয় এমপি সহ বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছি। এই ঘটনার উপযুক্ত আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগেও অভিযুক্ত এই যুবক বেশ কয়েকজন ওপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ঘটনার ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও কোন নেতা হামলার শিকার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকে একবার দেখতে পর্যন্ত আসেনি এবং কোন বিচার করেনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সুমনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়াম্যান মো.জাহাঙ্গীর কবিরের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি মুঠোফোনে জানান, খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাকে বিষয়টি জানিয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন সহ কয়েকজন অন্যায় ভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধর করেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুমন বর্তমানে কোন দলীয় দায়িত্বে নেই। ১০-১২ বছর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। এমপি সাহেব তাকে গাইড করে।
নোয়াখালী-১ আসনের (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম বলেন, ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিল। একটি গ্রুপ কাজ গুলো করাচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে বাহির হবে কারা এগুলো করাচ্ছে। কাউকে কালার করার জন্য ইন্টার্নেশনালি করাচ্ছে এগুলো আমরা বুঝি। যারাই করাচ্ছে তারাই কাঁচা কাজ করে ফেলেছে। যে ভিডিও ফুটেজ ধরা পড়েছে ওই ভিডিও ফুটেজে ওদেরকে চেনা যায়। ওরাতো অ্যারেস্ট হয়ে যাবে। অ্যারেস্ট হয়ে গেলে বুঝা যাবে এটা কারা করিয়েছে। আগের ঘটনাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এটা করা হইছে। যেহেতু ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে চিহিৃত আসামি যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি।
খিলপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো.কামরুজ্জামান বলেন, রাত ২টার দিকে ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতার মেইন গেইটের তালা ভেঙ্গে ওয়াইফাই লাইন কেটে সিসি টিভির ফুটেজ নিয়ে গেছে এবং উনার ঘরের গ্লাস ভাংচুর করে। সিসি টিভির ফুটেজে কিছু লোক দেখা যায়। আমরা যাচাই বাছাই করে সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.গিয়াস উদ্দিন বলেন, তিনি এ বিষয়ে জানেননা। এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।