বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন করা আর সম্ভব না : জয়নুল আবদিন ফারুক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫২ পিএম, ১০ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:০৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সাবেক চিফ হুইপ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে এখন আর মাটি নাই, বিএনপিকে বাদ দিয়ে তাদের আর নির্বাচন করা আর সম্ভব না।
আজ মঙ্গলবার বিকালে জেলা শহরের গ্র্যান্ড ভ্যালী হোটেলের মিলনায়তনে ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ইভিএম ইভিএম হচ্ছে ইলেক্ট্রিক মেশিনে চুরির মেশিন। এর মাধ্যমে নির্বাচন বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় চুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত। এদেশে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, জ্বালানি, গ্যাস, পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন ও বিদ্যুতের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পরিবহন ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে একদিকে নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে অনির্বাচিত সরকারের দুঃসহ দুঃশাসন মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
তিনি বলেন, অর্থনীতির মূল খাতগুলো ক্ষমতাসীনদের যোগসাজশে একদিকে সীমাহীন দুর্নীতি, অন্যদিকে চরম অব্যবস্থাপনার ফলে মারাত্মক ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অমার্জনীয় ব্যর্থতা, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সীমাহীন লুটপাট ও ভয়ংকর ঋণ কেলেংকারি আর্থিক খাতকে ভঙ্গুর করে ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, সড়কপথে চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের প্রাণহানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয়করণের ফলে চরম নৈরাজ্য এবং বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে দলীয় সংগঠনে পরিণত করার অপপ্রয়াস বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকেও হরণ করছে। এই অনির্বাচিত সরকার সচেতনভাবেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক কর্তৃত্ববাদী, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকেও সম্পূর্ণ দলীয়করণ করেছে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করার ফলে ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ সময় তিনি বর্তমান সরকারের কাছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ১০টি ও এ সময় তিনি বর্তমান সরকারের কাছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ১০টি ও রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭টি রূপরেখার দাবি জানান।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ১০টি দাবি হলো : ১. বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ জাতীয় সংসদ বাতিল করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে দল নিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
৩. নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে।
৪. দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনকারী সব মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সকল রাজনৈতিক কারাবন্দির অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। দেশে সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা; সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কর্তৃক কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা এবং স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার যাবে না।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সকল কালাকানুন বাতিল করতে হবে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ সংশোধন করে সময়োপযোগী করতে হবে।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার ও পানিসহ জনসেবা খাতসমূহে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
৭. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, শিশুশ্রম বন্ধ করা ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
৮. গত ১৫ বছরব্যাপী বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সকল নাগরিকের উদ্ধার করতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ও
১০. আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী; প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃংখলা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি মাম্যাচিং, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম উদ্দীনসহ জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।