দেশকে গভীর গর্ত থেকে তুলে আনতে ২৭ দফা রূপরেখার বিকল্প নেই : আমীর খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৬ এএম, ৮ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:৫৮ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ২৭ দফা রূপরেখা বিএনপির আন্দোলনের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, যিনি এ ধরনের রূপরেখা দিতে পারেন তাকে বলা হয় ‘স্টেটসম্যান‘। আর তারেক রহমান সেই কাজটিই করেছেন। তার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে তিনি বিশ্ব দরবারে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
আজ রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, দেশের যে অবস্থা তাতে নিষেধাজ্ঞা আসবে সেটা স্বাভাবিক। কারণ এখানে ভালো কিছু হচ্ছে না। গুম-খুন করা হচ্ছে। দূতাবাসের কাজ হলো জনগণের পক্ষে কাজ করা। নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর কাজ তাদের না। ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ যত কালো আইন আছে সব বাতিল করা হবে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করতে হলে একটা ট্র্যাকে আনতে হবে। সেজন্যই তারেক রহমান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, যারা শিক্ষিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ তাদের সমন্বয়ে আপার হাউস গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে হতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে রূপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ঢাকা মহানগর উত্তর।
ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান। ঢাকা উত্তর ড্যাবের মহাসচিব ডা. এ এস এম মো. মাসুম বিল্লাহর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী,সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ড্যাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. বজলুল গনি ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটা কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য স্বাস্থ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই খাতে ১ জিডিপির ব্যবহার নেই বললেই চলে। কারণ এখানে সরকারের দুর্নীতি বেশি। ফলে দেশের মানুষের নিজের টাকা খরচ করেই চিকিৎসা নিতে হয়। যা আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ। এসব বিষয়ে সারা দেশে সেমিনার করা জরুরি। কারণ একটি পরিবারকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হলে তার প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়। একটি পরিবারের যদি পাঁচ হাজার টাকা সেভ করা যায়, ওই পরিবারের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাবে। সেই টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় খরচ করতে পারবে। দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারবে।
তিনি বলেন, আজকে দেশে যা হচ্ছে তা লুট। মেগা প্রজেক্ট করা হচ্ছে টাকা লুটে বিদেশে পাচারের জন্য। একটা গাড়ি আছে আরেকটা কীভাবে কেনা যায় সেটা করে। আজকে ৬৫ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। তাদের সময় কোথায়? তারা কি আইন প্রণয়ন করছে?
আমীর খসরু বলেন, আমাদের ২৭ দফা দেশের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে ২৭ দফার প্রয়োজনীয়তা। কারণ তারা জানতে চাইছে, শেখ হাসিনা চলে গেলে কী হবে? সেই জন্যই কিন্তু আমরা ২৭ দফা রূপরেখা দিয়েছি। এই দফাগুলো হলো আমাদের আন্দোলনের অংশ। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর মাধ্যমে আমরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, এগুলো বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ সঠিক পথে চলবে না। রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এই ২৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে তো স্মার্ট বাংলাদেশের নামে স্মার্ট ভোট চুরি, শেয়ারবাজার লুট হবে। ১০ লাখ কোটি টাকার মতো বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি না।
তিনি বলেন, আজকে বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। দেশকে গভীর গর্ত থেকে তুলে আনতে হলে ২৭ দফার বিকল্প নেই। এগুলো যারা দিতে পারেন তাদের বলা হয় স্টেটসম্যান। এই রূপরেখা ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতাকে বিশ্বের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে’ ২৭ দফা রূপরেখা বিএনপির
বিএনপির এই নেতা বলেন, ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে জনগণের সঙ্গে কিছু চুক্তি বা ওয়াদা দিতে হবে। সেটাই করেছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। যা রাজনীতিবিদরা খুব একটা করতে পারেন না। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা দিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বের যোগ্যতা অনেক উপরে স্থান পেয়েছে। যা বিদেশিরাও প্রশংসা করছেন। তার জানতে চাইছেন, বিএনপি এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না?
অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। আপামর জনসাধারণের দাবিগুলো এই রূপরেখায় তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখন ভীষণ সংকটে আছে। লাইফ সাপোর্টে আছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। মাঝে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে তা আরও গতিময় হয়েছে। দেশটা এখন একটা রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই রাষ্ট্রকে ফেরত আনতে হবে।
তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। কারণ সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেটা বলা যাবে না। বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা দেশের অসহায় মানুষের মুক্তির সনদ।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, কাউকে পেছনে না রেখে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে আনা দরকার। যেখানে মানবাধিকার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও সব ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে। সেই লক্ষ্যেই বিএনপি রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে রূপরেখা দিয়েছে। এটা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, এই সরকার কেমন সেটা তো ১৫ বছর ধরে দেখছি। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। পেশার নিরাপত্তা নেই। স্বাস্থ্য খাতে চলছে হরিলুট। অন্যদিকে সরকার উন্নয়নের কথা বলছে। কিন্তু একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য খাতের বার্ষিক ব্যয় কমছে। যা পাশের দেশের তুলনায় অনেক কম। সুতরাং, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা দিয়েছে তার অত্যন্ত জনপ্রিয় উদ্যোগ।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, বর্তমান দেশের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমে সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এই রূপরেখা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জনগণের জন্য মুক্তির গাইডলাইন। কেননা সেখানে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।