বিএনপি নেতাদের নামে নতুন নতুন মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৯ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৬ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি নেতাদের নামে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে সরকার। ঘটনা ঘটুক বা না ঘটুক সারাদেশে বিএনপি তথা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের একদিকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে চলছে মিথ্যা ও গায়েবি মামলার হিড়িক । বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারাদেশে এখন পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে। আসামি করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ নেতা-কর্মীকে। মামলার আসামি করা হয়েছে কবরবাসীকেও। এমনকি প্যারালাইজড হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মুমূর্ষু রোগী, হজ পালনরত বা বিদেশে অবস্থানরতদের মামলার আসামি করা হয়েছে। গাড়ি পোড়ার মামলা দিয়ে নেতা-কর্র্মীদের গ্রেফতারের পর দেখা যায় থানায় অক্ষত গাড়ি পড়ে আছে। এমন ঘটনাও দেশের শীর্ষ পত্রিকায় হেডলাইন হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারাই সংবাদ সম্মেলন করে জাতিকে জানিয়েছেন তাদের নেতারাই গাড়ি পুড়ে বিএনপি নেতাদের নামে মামলা দিয়েছিল।
সম্প্রতি কালিয়াকৈরে পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাবন্দি বিএনপি নেতা আলী আজমের মা মৃত্যুবরণ করলে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া অবস্থায় জানাজার নামাজের ছবি দেশে বিদেশে ভাইরাল হয়। ওই মামলার বাদী যুবলীগ নেতা কসম খেয়ে বলেন, আমি ঘটনার সময় ছিলাম না বা এ ধরণের ঘটনাও সেখানে ঘটেনি। পুলিশ বাদী হয়ে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভীসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা আছে, সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি পোড়া ও ভাঙচুর করার মামলা। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ বিগত আন্দোলনগুলোতে আওয়ামী লীগের লোকেরা কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশজুড়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে উল্টো বিএনপি নেতাদের আসামি করেছেন।
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশ নিজেরা ককটেল ফাটিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর টিয়ার শেল ও গুলি চালায়। পরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে বিএনপির কার্যালয়ের ভিতরে অবস্থান নেওয়া সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাক মিয়া, এবিএম মোশারফ হোসেন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, হারুনুর রশিদ, মাশরুর জামান, আবুল হোসেন, খন্দকার আবু আশফাক, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা শাহ নেছারুল হক, মাওলানা নজরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মাহতাবসহ ৫ শতাধিক নেতা-কর্মীকে। ওই দিন গভীর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক করে নিয়ে যায় বিনাকারণে। নানা নাটকের পর পরদিন তাদের গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি জামিনযোগ্য হলেও তাদের জামিন দেয়া হয়নি।
আজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার স্ত্রীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ সোমবার দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতি ও নকশাবহির্ভূতভাবে হোটেল সারিনা নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বনানী এলাকার ১৭ নং রোডের ২৭নং প্লটটি ডেভেলপ করার নামে ওই প্লটের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ২৫ নং প্লট ক্রয় করে অনুমোদিত নকশা না মেনে উভয় প্লটে যথাক্রমে ২২ তলা ও ২১ তলা ভবন নির্মাণ শেষে পাঁচ তারকা হোটেল সারিনা ইন লিমিটেড পরিচালনা করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন (২নং আইন) এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদ ও তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলম ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন হোটেল সারিনার চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবেরা সরোয়ার (নীনা) ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিল্ডিং ইন্সপেক্টর (নকশা অনুমোদন শাখা) আওরঙ্গজেব নান্নু। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালায় ঢাকা-১ এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের দাবি শুধুমাত্র রাজনৈতিভাবে হয়রানি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এর আগে অভিযোগ করেন বিরোধী দল নিধনে সারাদেশে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা এবং গ্রেফতারের হিড়িক চলছে। সর্বশক্তি নিয়োগ করে ফ্যাসিবাদ সরকার বিএনপিকে নির্মূল করতে চাচ্ছে। এমনকি আটক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রতি করা হচ্ছে অমানবিক আচরণ। তাদের চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা জানেন, কারাবন্দি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সিনিয়র নেতারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে একাধিকবার ভয়াবহ করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে গায়েবি মামলায় এই কারাবন্দি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাগারে নেয়ায় তাদের সুচিকিৎসায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। তারা কারাগারে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।”
প্রিন্স বলেন, ‘‘ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে বন্দি করায় বর্তমানে কারাগারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী অনেক নেতা ডিভিশন পাওয়ার অধিকারী হলেও অনেককে এখনো ডিভিশন দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। সিনিয়র নেতারা জামিন পাওয়ার অধিকারী হলেও বার বার তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশে তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
প্রিন্স আরও বলেন, ‘‘ কারাগারে যে নেতৃবৃন্দের প্রতি যে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে সেটা অতীতে কখনো দেখা যায় নাই। কারাবিধি অনুযায়ী তাদেরকে দিনের বেলা লকআপ খুলে দেয়ার কথা থাকলেও প্রায় ২৪ ঘন্টা তাদেরকে লকআপের ভেতরে রাখা হচ্ছে এবং লকআপের ভেতরেও তাদেরকে মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে তাদের আত্মীয় পরিজনদের মাধ্যমে আমরা শুনতে পাচ্ছি।”
‘‘এমনকি অনেক নেতৃবৃন্দের সাথে যখন তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে যান, তাদের কল দেওয়া হলেও তাদেরকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। এগুলোর কারা বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং একই সাথে মানবাধিকার ও সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম বলেন, রুহুল কবির রিজভী দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিকসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। এর আগে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন, আক্রান্ত হয়েছিলেন ভয়াবহ করোনায়। দুই বারই তিনি মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসছেন। বর্তমানে কারাগারে তিনি প্রচন্ডভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, তার আগের রোগগুলো আরও বেড়েছে। করোনায় তার ফুসফুসে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাকে সবসময় গরম পানি খেতে হতো। কারাগারে সে সুবিধা পাচ্ছে না। সে অতীতে ডিভিশন পেলেও এখনও তাকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। সে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা তাকে ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। বর্তমানে সে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে যে সে অন্যের সহায়তা ছাড়া একা চলাফেরা করতে পারে না, ওঠা বসাও করতে পারেন না। বাথরুমেও যেতে হয় অন্যের সহায়তায়। তিনি অবিলম্বে রিজভীর সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবি জানান।
বিএনপি নেতাদের নামে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে সরকার। ঘটনা ঘটুক বা না ঘটুক সারাদেশে বিএনপি তথা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের একদিকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে চলছে মিথ্যা ও গায়েবি মামলার হিড়িক । বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারাদেশে এখন পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে। আসামি করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ নেতা-কর্মীকে। মামলার আসামি করা হয়েছে কবরবাসীকেও। এমনকি প্যারালাইজড হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মুমূর্ষু রোগী, হজ পালনরত বা বিদেশে অবস্থানরতদের মামলার আসামি করা হয়েছে। গাড়ি পোড়ার মামলা দিয়ে নেতা-কর্র্মীদের গ্রেফতারের পর দেখা যায় থানায় অক্ষত গাড়ি পড়ে আছে। এমন ঘটনাও দেশের শীর্ষ পত্রিকায় হেডলাইন হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারাই সংবাদ সম্মেলন করে জাতিকে জানিয়েছেন তাদের নেতারাই গাড়ি পুড়ে বিএনপি নেতাদের নামে মামলা দিয়েছিল।
সম্প্রতি কালিয়াকৈরে পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাবন্দি বিএনপি নেতা আলী আজমের মা মৃত্যুবরণ করলে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া অবস্থায় জানাজার নামাজের ছবি দেশে বিদেশে ভাইরাল হয়। ওই মামলার বাদী যুবলীগ নেতা কসম খেয়ে বলেন, আমি ঘটনার সময় ছিলাম না বা এ ধরণের ঘটনাও সেখানে ঘটেনি। পুলিশ বাদী হয়ে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভীসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা আছে, সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি পোড়া ও ভাঙচুর করার মামলা। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ বিগত আন্দোলনগুলোতে আওয়ামী লীগের লোকেরা কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশজুড়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে উল্টো বিএনপি নেতাদের আসামি করেছেন।
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশ নিজেরা ককটেল ফাটিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর টিয়ার শেল ও গুলি চালায়। পরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে বিএনপির কার্যালয়ের ভিতরে অবস্থান নেওয়া সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাক মিয়া, এবিএম মোশারফ হোসেন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, হারুনুর রশিদ, মাশরুর জামান, আবুল হোসেন, খন্দকার আবু আশফাক, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা শাহ নেছারুল হক, মাওলানা নজরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মাহতাবসহ ৫ শতাধিক নেতা-কর্মীকে। ওই দিন গভীর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক করে নিয়ে যায় বিনাকারণে। নানা নাটকের পর পরদিন তাদের গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি জামিনযোগ্য হলেও তাদের জামিন দেয়া হয়নি।
আজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার স্ত্রীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ সোমবার দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতি ও নকশাবহির্ভূতভাবে হোটেল সারিনা নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বনানী এলাকার ১৭ নং রোডের ২৭নং প্লটটি ডেভেলপ করার নামে ওই প্লটের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ২৫ নং প্লট ক্রয় করে অনুমোদিত নকশা না মেনে উভয় প্লটে যথাক্রমে ২২ তলা ও ২১ তলা ভবন নির্মাণ শেষে পাঁচ তারকা হোটেল সারিনা ইন লিমিটেড পরিচালনা করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন (২নং আইন) এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদ ও তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলম ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন হোটেল সারিনার চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবেরা সরোয়ার (নীনা) ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিল্ডিং ইন্সপেক্টর (নকশা অনুমোদন শাখা) আওরঙ্গজেব নান্নু। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালায় ঢাকা-১ এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের দাবি শুধুমাত্র রাজনৈতিভাবে হয়রানি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এর আগে অভিযোগ করেন বিরোধী দল নিধনে সারাদেশে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা এবং গ্রেফতারের হিড়িক চলছে। সর্বশক্তি নিয়োগ করে ফ্যাসিবাদ সরকার বিএনপিকে নির্মূল করতে চাচ্ছে। এমনকি আটক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রতি করা হচ্ছে অমানবিক আচরণ। তাদের চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা জানেন, কারাবন্দি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সিনিয়র নেতারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে একাধিকবার ভয়াবহ করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে গায়েবি মামলায় এই কারাবন্দি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাগারে নেয়ায় তাদের সুচিকিৎসায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। তারা কারাগারে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।”
প্রিন্স বলেন, ‘‘ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে বন্দি করায় বর্তমানে কারাগারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী অনেক নেতা ডিভিশন পাওয়ার অধিকারী হলেও অনেককে এখনো ডিভিশন দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। সিনিয়র নেতারা জামিন পাওয়ার অধিকারী হলেও বার বার তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশে তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
প্রিন্স আরও বলেন, ‘‘ কারাগারে যে নেতৃবৃন্দের প্রতি যে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে সেটা অতীতে কখনো দেখা যায় নাই। কারাবিধি অনুযায়ী তাদেরকে দিনের বেলা লকআপ খুলে দেয়ার কথা থাকলেও প্রায় ২৪ ঘন্টা তাদেরকে লকআপের ভেতরে রাখা হচ্ছে এবং লকআপের ভেতরেও তাদেরকে মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে তাদের আত্মীয় পরিজনদের মাধ্যমে আমরা শুনতে পাচ্ছি।”
‘‘এমনকি অনেক নেতৃবৃন্দের সাথে যখন তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে যান, তাদের কল দেওয়া হলেও তাদেরকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। এগুলোর কারা বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং একই সাথে মানবাধিকার ও সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম বলেন, রুহুল কবির রিজভী দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিকসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। এর আগে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন, আক্রান্ত হয়েছিলেন ভয়াবহ করোনায়। দুই বারই তিনি মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসছেন। বর্তমানে কারাগারে তিনি প্রচন্ডভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, তার আগের রোগগুলো আরও বেড়েছে। করোনায় তার ফুসফুসে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাকে সবসময় গরম পানি খেতে হতো। কারাগারে সে সুবিধা পাচ্ছে না। সে অতীতে ডিভিশন পেলেও এখনও তাকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। সে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা তাকে ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। বর্তমানে সে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে যে সে অন্যের সহায়তা ছাড়া একা চলাফেরা করতে পারে না, ওঠা বসাও করতে পারেন না। বাথরুমেও যেতে হয় অন্যের সহায়তায়। তিনি অবিলম্বে রিজভীর সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবি জানান।