ভোটে হেরে ঘুষের টাকা ফেরতের দাবি, তদন্তেও পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৪ এএম, ২৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৮ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হওয়ার পথ সহজ করবেন- এমন মৌখিক চুক্তিতে স্থানীয় থানার ওসির হাতে ২৭ লাখ টাকা তুলে দেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ জাকির হোসেন। তবে জিততে পারেননি। ভোটে হেরে ঘুষের টাকা ফেরত পেতে ওসি মো. গোলাম কবিরের কাছে ধরনা দিতে থাকেন। টাকা ফেরত না দিয়েই ওই ওসি বদলি হয়ে চলে যান কক্সবাজার।
উপায় না পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ৫ কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী। ওই অভিযোগপত্রে কীভাবে, কার মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। শেখ জাকির হোসেন সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়নের দুই দফা চেয়ারম্যান ছিলেন। তৃতীয় জয় তুলে নিতে আশাশুনির সাবেক ওসি মো. গোলাম কবিরের সঙ্গে তিনি এই লেনদেনে জড়ান।
এদিকে গত ২৭ নভেম্বর ভুক্তভোগীর টাকা ফেরতের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এবং ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ফৌজিয়া খান। পুলিশ সদরদপ্তরের তরফ থেকে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমানকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান আশাশুনির সাবেক ওসি মো. গোলাম কবির, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ জাকির হোসেনসহ ৬ জনকে তাঁর কার্যালয়ে হাজির হতে গত ১৯ ডিসেম্বর চিঠি দিয়েছেন। আজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে তাঁদের হাজির হওয়ার কথা রয়েছে।
নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হয়। এতে ৫ প্রার্থীর মধ্যে ৮ হাজার ৪৭৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজি আবু দাউদ। নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় হন শেখ জাকির হোসেন। তিনি পেয়েছিলেন ৩ হাজার ২০২ ভোট। এর আগে ২০১১ ও ২০১৬ সালে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ জাকির।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠিতে শেখ জাকির হোসেন উল্লেখ করেন, '২০১১ ও ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে আমি প্রতাপনগরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই।
এবার বিএনপি-জামায়াত ও নব্য কিছু আওয়ামী লীগ নেতা আমাকে হারানোর নীলনকশা তৈরি করেন। তখন আমি নিরুপায় হয়ে আশাশুনি থানার ওসি গোলাম কবিরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। তিনি ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকার একটি হিসাব দিয়ে বলেন, এই টাকা দিতে পারলে আমি বিজয়ী করে দিতে পারব।'
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, 'গত ১ জানুয়ারি সকাল ১১টায় ওসির কক্ষে আমি নিজে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিই। ৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় আমার বড় ভাই শেখ আজুহার রহমানের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা এবং ৪ জানুয়ারি বিকেলে তাঁর অফিসে আরও সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এর বাইরে ৫ জানুয়ারি ভোর ৬টায় ৯টি ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের খরচ বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং পুলিশ ইনচার্জ বাবদ ৯০ হাজার টাকা দিই।'
শেখ জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের পর ওসির সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরত চাইলে তিনি কয়েকদিন সময় চান। এর মধ্যে ওসিকে বদলি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় পাঠানো হয়। সেখানে গিয়েও টাকা চাইলে তিনি বলেন, টাকা খরচ করে ফেলেছি। পাশের আরেক ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে কয়েক দফা সদর থানায় গিয়েছি। এক পর্যায়ে তিনি বদলি হয়ে কক্সবাজার চলে যান। তখন উপায় না পেয়ে গত ২৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৬ জনের কাছে চিঠি দিই। তাতে কাজ না হওয়ায় ৫ জুলাই আবারও চিঠি দিই। কয়েকদিন আগে আশাশুনি থানা থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয়, ২৬ ডিসেম্বর সাক্ষ্যের জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে।
বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমান বলেন, পুলিশ সদরদপ্তর থেকে আশাশুনির সাবেক ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত মো. গোলাম কবির বর্তমানে কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানায় ওসি। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট অভিযোগ। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, এখন যে রকম সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে, এ রকম নির্বাচনে কাউকে জিতিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া কি সম্ভব?