দেশে অলিখিত একদলীয় শাসন চলছে : ড. মঈন খান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩২ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:২৩ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দাবি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। দ্বিতীয় দাবি হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। কিন্তু সেই প্রধান দু’টি দাবি আজ উপেক্ষিত। দেশে চলছে এখন অলিখিত একদলীয় শাসন। মানুষের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এই দাবি শুধু আজ বিএনপির নয়, এ দাবি দেশের ১৭ কোটি মানুষের।
তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতির মাধ্যমে কানাডায় বেগম পাড়া গড়ে তোলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলেছিলাম, কিন্তু স্বাধীনতার পরে এখন দেখছি ২০০ পরিবার দেশের অর্থ ও সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে। এটা কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?
বিএনপি কখনও প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না এমন দাবি করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সেই সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন শহীদ জিয়া আর সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। এখন দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্টায় দেশনায়ক তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি লুণ্ঠন, শোষন, মামলা, হামলা ,গুম, খুন বন্ধ করে জনদাবি মেনে নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য ক্ষমতাসীনদলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন। এরপর যদি জনগণ আপনাদের পক্ষে রায় দেয় তাহলে আবারও আপনারা ক্ষমতায় যাবেন। জনগণের পক্ষে কাজ করুন।
ড. আবদুল মঈন খান বিএনপির রাজনীতির উদারতার উপমা টেনে বলেন, ৯৬ সালে বেগশ খালেদা জিয়া সেদিন প্রধানমন্ত্রীত্বকে তুচ্ছ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেছিলেন এবং তিনি তার কথা রেখেছিলেন এবং পদত্যাগ করে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এটাই হলো বিএনপির রাজনীতি। বিএনপি এদেশের সাধারণ মানুষের রাজনীতি করে। ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকেনি কখনও।
তিনি সরকারের এবং আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এক সময় তারা স্লোগান দিতো, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো, কিন্তু সেটি আজ তার ভুলে গেছে। এখন তারা দিনের ভোট রাতে করে, অন্যের ভোট কেড়ে নেয়। তিনি আওয়ামী লীগকে তাদের সেই পুরানো স্লোগানে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ড. আবদুল মঈন খান আরো বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ভিন্নমত থাকে। ভিন্ন মত থাকলেও সংক্ষগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। যেটি পরীক্ষার একমাত্র পথ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন তা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচনে নিজেদের সক্ষমতা দেখাতে পারেনি বলেই সেই নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। তাই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
আজ শনিবার বিকেলে তিনি খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্তু কুমার কুণ্ডু। এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম রবি, জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল আহাসান বাপ্পী বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ছাত্রদল, মহিলাদল, শ্রমিকদলসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
পরে দলীয় কার্যালয় থেকে গণমিছিলটি শুরু হয় এবং কেসিসি সুপার মার্কেটে যেয়ে সমাপ্ত হয়। তার আগে সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয় ও তার আশে-পাশে কাটাতারের বেড়া দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেট তৈরী করে। এ সময় এক ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরী হয়। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন গুরুরত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের সশস্ত্র অবস্থায় মোতায়েন রাখা হয়।